মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ১০ ‘বাংলাদেশিকে’ ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Published: 4th, May 2025 GMT
মেহেরপুরের মুজিবনগর সীমান্তে ভারত থেকে আসা ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। আজ রোববার ভোরে উপজেলার ভবেরপাড়া সীমান্ত এলাকা থেকে তাঁদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আটক ১০ জন জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরা, যশোর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলায়। তাঁদের কাছে বিদেশ যাওয়ার কোনো কাগজপত্র (ভিসা-পাসপোর্ট) নেই। কাজের সন্ধানে তাঁরা ভারতে গিয়েছিলেন। ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁরা কারাগারে ছিলেন। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ট্রাকে করে তাঁদের সীমান্তে নিয়ে আসে এবং বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে দিয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, ভারতের নদীয়া জেলার হৃদয়পুর সীমান্ত দিয়ে মুজিবনগরের ভবেরপাড়া এলাকায় আজ ভোরে ওই ১০ জনকে ঠেলে দেওয়া হয়। সীমান্ত পার হওয়ার পর তাঁদের আটক করে বিজিবি ক্যাম্পে নেওয়া হয়। পরে দুপুরে তাঁদের মুজিবনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দেবদাস বিশ্বাস নামের একজন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বহরামপুর বাজারে একটি বহুতল ভবনের নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। ভারতে বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি। গত মাসে পরিবার নিয়ে দেশে আসার সময় বিএসএফ আটক করে জেলে পাঠায়। জেল থেকে হৃদয়পুর সীমান্ত এলাকায় ট্রাকে করে এনে তাঁদের জড়ো করে এবং কাঁটাতারের মাঝখানে যে দরজা আছে, সেটা খুলে আমাদের বাংলাদেশের ভেতরে ঠেলে দেয়।’
তরিকুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, তিনি ২০২০ সালে দালাল চক্রের মাধ্যমে ভারতের উত্তর প্রদেশে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন সেখানে একটি ভবনের ক্লিনার হিসেবে কাজ করছেন। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে সেখানকার পুলিশ অবৈধভাবে বসবাস করা বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
আজ বেলা সোয়া একটার দিকে মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘সীমান্ত থেকে ১০ জনকে আটক করেছে বিজিবি। তাঁদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ি বাংলাদেশে। এ ঘটনায় মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ বনগর
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে ২ বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী পদ্মা নদী থেকে দুইটি ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (২ আগস্ট) উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া ও বিশরশিয়া এলাকার নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) দুই ব্যক্তিকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, দুই ব্যক্তিকে বিএসএফ হত্যা করেছে কি-না তা তারা নিশ্চিত না। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। বিএসএফ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
আরো পড়ুন:
ফেরার কথা ছিল নতুন বউ নিয়ে, ফিরল নিথর দেহ
বগুড়ায় বাঙালী নদী থেকে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- শিবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর-হঠ্যাৎপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধ সেরাজুল ইসলামের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫) এবং একই এলাকার গোলাম মর্তুজার ছেলে সেলিম রেজা (৩৭)। তারা পেশায় জেলে।
স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে ভারতে প্রবেশ করে নিখোঁজ হন শফিকুল ও সেলিম। সন্তানদের সন্ধান পেতে ভারতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেন তাদের পরিবার। তবে, তাদের সন্ধান মেলেনি।
আজ শনিবার দুপুরে নিশিপাড়া এলাকায় শফিকুলের এবং বিশরশিয়া এলাকার পদ্মা নদীতে ভাসমান অবস্থায় সেলিম রেজার মরদহে উদ্ধার হয়।
শিবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. সমির উদ্দীন বলেন, “গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন শফিকুল ও সেলিম। ধরণা করা হচ্ছে, নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে তারা ভারতের অভ্যন্তরে চলে যান। ভারতের বিএসএফ তাদের চোরাকারবারিভেবে আটক করে হত্যা করতে পারে। নদী থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারাপুর এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, মারা যাওয়া দুইজন জেলে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তারা ভারতে গরু আনতে যান। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের বিএসএফের সদস্যরা আটক করে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে। শফিকুলের শরীরে বৈদ্যুতিক শক ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেলিমের শরীর অর্ধগলিত হওয়ায় কোনো আঘাতের চিহ্ন বোঝা যাচ্ছিল না।
শিবগঞ্জ থানার ওসি মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, সীমান্ত এলাকায় পদ্মা নদী থেকে দুইজনের মরদেহ ভাসতে দেখে বিজিবি ও আমাদের খবর দেন এলাকাবাসী। এরপরেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। দুইটি মরদেহ অর্ধগলিত। এ কারণে স্পষ্টভাবে আঘাতের চিহ্ন বোঝা যাচ্ছে না।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ রিংকু বলেন, “মাসুদপুর বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন এলাকার পদ্মা নদীতে দুইজনের মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানানো হয়। মৃত্যুর রহস্য রেব করতে পুলিশই পারবে, সেজন্য তাদেরই জানানো হয়েছে। ওই দুই ব্যক্তিকে বিএসএফ হত্যা করেছে কি-না আমরা নিশ্চিত না। নিহেতের পরিবারের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।”
তিনি আরো বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ভারতের ৭১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বিষয়টি অস্বীকার করেছে।”
ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ