জয় দাবি করার মতো মানুষের অভাব হয় না, কিন্তু পরাজয় কেউ মেনে নিতে চায় না। পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাময়িক সংঘাতের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। দুই পক্ষই নিজেদের সফলতার গল্পগুলো জোরেশোরে প্রকাশ করছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তারা অনেকটাই নিশ্চুপ।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শনিবার নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের শিরোনাম ছিল, ‘পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করেছে।’ পরে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, গত মাসে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ‘সন্ত্রাসীদের’ একটি শক্ত বার্তা দিয়েছে।

অন্যদিকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর পাকিস্তান বাহিনীর ‘সফলতা’ উদ্‌যাপন করতে রাজপথে নেমে আসেন দেশটির মানুষ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমাদের যুদ্ধবিমানগুলো ভারতের বন্দুকগুলোকে যেভাবে থামিয়ে দিয়েছে, তা ইতিহাস থেকে শিগগিরই মুছে যাবে না।’

দুই দেশের পক্ষ থেকে যত সফলতা দাবি করা হোক না কেন, তাদের কারোরই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা একেবারেই কম নয়। ইসলামাবাদ এ নিয়ে উল্লাস করছে যে তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমান। তবে ভারতের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এখনো একটি যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথাও স্বীকার করা হয়নি।

যদিও এর আগে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান যখন ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল, তখন ভারতের ভূখণ্ডে দেশটির দুটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। ফরাসি গোয়েন্দাদের একটি সূত্রও সিএনএনকে জানিয়েছে যে তাদের তৈরি অন্তত একটি রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।

এরই মধ্যে স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা নতুন কিছু ছবি প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। তাতে দেখা গেছে, একাধিক রানওয়ে ও রাডারব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষাবিষয়ক কর্মকর্তাদের দাবি, ক্ষয়ক্ষতির এই চিত্র পাকিস্তানের একাধিক সামরিক ঘাঁটির। সেখানে ব্যাপক হারে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারতের সামরিক বাহিনী।

আরও পড়ুনভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: এর মানে আসলে কী১২ ঘণ্টা আগে

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে, তার কৃতিত্ব নিয়ে টানাটানি করছে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। যুক্তরাষ্ট্র আগ বাড়িয়ে মধ্যস্থতা করায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। তবে ওয়াশিংটনের ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন ভারতের নেতারা। তাঁদের ভাষ্যমতে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি আলোচনার জেরেই এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে।

ভারতের এমন বক্তব্যের পেছনে সম্ভবত তাদের জাতিগত আত্মমর্যাদা একটি কারণ। তারা এমনটি স্বীকার করতে চাইছে না যে যুদ্ধবিরতিটা তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র চাপিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া কাশ্মীর নিয়ে ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্ব সমাধানেও আগ্রহ দেখিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন পরিকল্পনাকে ইসলামাবাদ স্বাগত জানালেও, চুপ রয়েছে নয়াদিল্লি।

আরও পড়ুনক্ষয়ক্ষতি লড়াইয়ের অংশ: ভারতের বিমানবাহিনী১৩ ঘণ্টা আগে

সহজ কথায় বলতে গেলে, ভারত–পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতারা নিজেদের বিজয়ের দিকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দিলেও, সত্যিটা হলো প্রকৃতপক্ষে জয় কারোরই হয়নি। আর কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বহুদিন যে সংঘাত চলে আসছে, তা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে কি না, সেটিও দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন‘উদ্বেগজনক’ গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন জেডি ভ্যান্স২২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম ব দ নয় দ ল ল

এছাড়াও পড়ুন:

হ্যালো জুলাই, আছি তোমাদের পাশে : আসিফ

গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে অনলাইন-অফলাইনে যেসব সাংস্কৃতিক তারকারা সরব ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মধ্যে সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর অন্যতম। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে তিনি শুরু থেকেই প্রকাশ করেছেন অকুণ্ঠ সংহতি।

আজ (১ জুলাই) সেই ঐতিহাসিক আন্দোলনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আবারও সামাজিক মাধ্যমে সরব হলেন ‘বাংলা গানের যুবরাজ’খ্যাত এই শিল্পী।

এ সংগীতশিল্পী স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “হ্যালো জুলাই। জানি তোমাদের আশ্রয় দরকার নেই, তবুও আমরা আছি তোমাদের পাশে। স্যালুট।’’

আফিস সবসময় জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধাদের প্রেরণা ও ভালোবাসা জানিয়ে আসছেন। গত বছর (২০২৪) ২৮ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে তার সঙ্গে একই ছবিতে দেখা গেছে।

সেই ছবি আসিফ ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছিলেন, “জুলাই বিপ্লবের দুই সফল অধিনায়ক এসেছিলেন ধন্যবাদ জানাতে জেন জেডের পক্ষ থেকে। তাদের সঙ্গে দেশ, সমাজ, রাজনীতির পাশাপাশি সংগীত আর মিডিয়া নিয়েও গল্প হলো। এরা যথেষ্ট জ্ঞানী এবং স্মার্ট। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ খুব স্ট্রেইটকাট ছেলে, সারজিস আলম মৃদুভাষী।”

তিনি আরও লিখেছিলেন, “আমিও তাদের আমাদের জেড ফোর্সের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছি। ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবে বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছিল দুঃসহ অবস্থা থেকে। ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লব এনে দিয়েছে আওয়ামী-বাকশালীদের খুনিতন্ত্র থেকে মুক্তি। জেড ফোর্সের নভেম্বর বিপ্লব আর জেন জেডের জুলাই বিপ্লব সমুন্নত থাকুক স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের ইতিহাসে। ভালোবাসা অবিরাম।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সফলতা আনতে কী করতে হবে সে বিষয়ে গত বছর আসিফ তার ফেসবুকে লিখেছেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আসল সফলতা আসবে ছাত্র-ছাত্রীদের সময়মতো বিয়ে করার মাধ্যমেই। আমি ২৪-২৫ বছর বয়সে বিয়ের পক্ষে। এতে সংসার শুরু করা যায় দ্রুত। তারাও বাবা-মা হতে পারে, আমরাও দাদা-নানা হতে পারি সুন্দর সময়ে। কবে স্টাডি শেষ হবে, তারপর প্রতিষ্ঠা পাবে, তারপর টাকা জমিয়ে বিয়ে করতে হবে! এর মধ্যে চলে যাবে যৌবনের সুন্দর সময়।”

তিনি আরও লিখেছিলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, ছাত্র আন্দেলেনের বাঘা বাঘা নেতা এবং তাদের সহকর্মীরা এখনো ব্যাচেলর। অথচ আমি ওই বয়সে দুই ছেলের বাবা হয়েছি। তাদের উচিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় তরুণদের বিয়ের জন্য একটা পদ্ধতি তৈরি করা।”

ঢাকা/রাহাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হ্যালো জুলাই, আছি তোমাদের পাশে : আসিফ