সাম্য হত্যার তদন্ত ডিবির কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
Published: 18th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার তদন্ত গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির কাছে হস্তান্তরের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রবিবার (১৮ মে) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড.
সাক্ষাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হোসনে আরা বেগমসহ কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎ শেষে অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘‘আমরা চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাম্য হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং নোট নিয়েছেন।’’
পরে সাম্যর বন্ধু এসএস নাহিন ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা শাহবাগ থানাকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়েছিলাম, কিন্তু আশানুরূপ অগ্রগতি পাইনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে ডিবির কাছে তদন্ত হস্তান্তর করা হবে এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।’’
নাহিন বলেন, ‘‘আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও আশাবাদী। আমরা তখনই আশ্বস্ত হব, যখন দেখব আসামিরা বিচারের আওতায় এসেছে। কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’’
তিনি বলেন, ‘‘ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল ও দল বিভিন্নভাবে সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে নিজেদের দাবি জানাচ্ছে। আমরা সব সময় বলে আসছি, আমাদের একটাই দাবি-সাম্য হত্যার বিচার। আমরা যা করা উচিত, তাই করব। কর্মসূচির বিষয়ে আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। প্রয়োজন হলে আরো কঠোর আন্দোলনে যাব।’’
‘‘আমাদের দাবি ছিল দৃশ্যমান অগ্রগতি। যেহেতু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন এবং তদন্ত ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে, তাই আমরা আশাবাদী যে ইতিবাচক কিছু দেখতে পাব।’’- যোগ করেন নাহিন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ম য হত য র আম দ র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হজযাত্রার আদিকথা
চট্টগ্রাম বন্দর ভারতীয় উপমহাদেশে মোগল ও ব্রিটিশ রাজত্বের সময় থেকে হজযাত্রীদের জেদ্দায় যাতায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। যদিও এই যাত্রার লিখিত ইতিহাস সীমিত, তবু চট্টগ্রামের হজযাত্রার ঐতিহ্য এবং এর সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ঐতিহাসিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে উল্লেখযোগ্য।
মোগল ও ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রাম বন্দর
মোগল ও ব্রিটিশ রাজত্বের সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হজযাত্রীরা সমুদ্রপথে জেদ্দায় যাতায়াত করতেন। তবে এই যাত্রার বিস্তারিত লিখিত নথি পাওয়া কঠিন। ব্রিটিশ আমল থেকে আরব উপদ্বীপের মোয়াল্লেমরা (হজযাত্রীদের থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের ব্যবস্থাপক) হজের কয়েক মাস আগে চট্টগ্রামে এসে স্থানীয় ব্যক্তিদের বাড়িতে অবস্থান করতেন। তাঁরা জেদ্দা, মক্কা, মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফা ও মদিনায় হজযাত্রীদের জন্য ব্যবস্থাপনার তথ্য প্রচার করতেন, যা ছিল তাঁদের জীবিকার প্রধান উৎস। মোয়াল্লেমরা হজ কাফেলা গঠন করতেন এবং স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচন করতেন। উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হজযাত্রীরা চট্টগ্রামে এসে যাত্রার প্রস্তুতি নিতেন। এই ব্যবস্থা প্রায় ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
যদিও ব্রিটিশ প্রশাসন ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বোম্বে (মুম্বাই) থেকে হজযাত্রার ব্যবস্থাপনা করত, চট্টগ্রামে মোয়াল্লেমদের ব্যবস্থাপনা ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতো।
পাকিস্তান আমলে হজযাত্রা
ব্রিটিশ রাজত্বের অবসানের পর পাকিস্তান সরকার চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে হজ ক্যাম্প স্থাপন করে। এটি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের হজযাত্রীদের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। সে সময়ে বিমান পরিবহন থাকলেও জাহাজে যাতায়াত ছিল তুলনামূলক সাশ্রয়ী, ফলে বেশির ভাগ হজযাত্রী সমুদ্রপথ বেছে নিতেন। ‘শাফিনা-ই-আরব’ ও ‘সারধানা’ নামের দুটি জাহাজ প্রতিটি দুই ট্রিপে হজযাত্রীদের জেদ্দায় নিয়ে যেত। প্রথম ট্রিপ ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহ পর শুরু হতো এবং অনেক হজযাত্রী ঈদের পরপরই পাহাড়তলীর হজ ক্যাম্পে এসে জড়ো হতেন।
প্রতি জাহাজে প্রায় ৬৫০ জন হজযাত্রী পরিবহন করা হতো, ফলে দুটি জাহাজের প্রথম ট্রিপে মোট ১ হাজার ৩০০ জন জেদ্দায় যেতেন। ১৯৪৮ সালে, সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রথম বছরে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৩ হাজার ৮৯৫ জন হজযাত্রী জেদ্দায় গিয়েছিলেন। দূরদূরান্ত থেকে হজযাত্রীদের সুবিধার জন্য রেল ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের টিকিটে অগ্রাধিকার দেওয়া হতো। হজ মৌসুমে চট্টগ্রাম হজযাত্রী, তাঁদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের ভিড়ে উৎসবমুখর হয়ে উঠত।
আরও পড়ুনবিরে রুমা: মদিনার পানির সংকট দূর করেছে যে কুয়া০৩ মে ২০২৫জাহাজ ও পরিবহনব্যবস্থা
প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ মালিকানাধীন ‘এম্পায়ার অরওয়েল’, ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘সারধানা’ এবং বোম্বেভিত্তিক মোগল শিপিং লাইনসের ‘ইসলামি’ ও ‘মুহাম্মদি’ জাহাজগুলো ভাড়া করা হতো। এই জাহাজগুলো চট্টগ্রাম ও করাচি বন্দর থেকে জেদ্দায় হজযাত্রী পরিবহন করত। ১৯৬০ সাল থেকে পাকিস্তান সরকারের প্যান ইসলামিক স্টিম শিপ কোম্পানির জাহাজ, যেমন ‘শাফিনা-ই-আরব ১ ও ২’, ‘শাফিনা-ই-মুরাদ’, ‘শাফিনা-ই-হাজ্জাজ’ এবং ‘শাফিনা-ই-আবিদ’ এই কাজে নিয়োজিত হয়। এ ছাড়া ‘এমভি শামস’ নামের একটি জাহাজ নিয়মিত চট্টগ্রাম ও করাচিতে চলাচল করত। ‘শাফিনা-ই-হাজ্জাজ’ ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যার ধারণক্ষমতা ছিল প্রায় ৪ হাজার যাত্রী। হজ মৌসুমের বাইরে এই জাহাজগুলো মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত হতো।
১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে জাহাজের তৃতীয় শ্রেণি বা ডেকে ভ্রমণ করে হজ পালনের খরচ ছিল ১ হাজার ৯১৯ টাকা, যার মধ্যে ৯১৯ টাকা ছিল জাহাজ ভাড়া এবং বাকি ১ হাজার টাকা মক্কায় থাকাখাওয়া ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির জন্য খরচ ছিল ৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং প্রথম শ্রেণির জন্য ৭ হাজার টাকা। তবে করাচি থেকে বিমানে হজযাত্রার খরচ থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি।
স্বাধীনতার পর চট্টগ্রাম বন্দর
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের মালিকানাধীন ‘শাফিনা-ই-আরব’ ও ‘শাফিনা-ই-আরাফাত’ জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ২ হাজার ৭০০ পূর্ব পাকিস্তানি হজযাত্রী নিয়ে জেদ্দায় যায়। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বন্দরে মাইনের উপস্থিতির কারণে জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয়। ‘মুহাম্মদি’ জাহাজ চট্টগ্রামের পরিবর্তে মোংলায় যায়, কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে সেখানে নোঙর করতে ব্যর্থ হয় এবং চাঁদপুরে নোঙর করে। ফিরে আসা হজযাত্রীদের আত্মীয়স্বজনকে মোংলা থেকে চাঁদপুরে যেতে হয়েছিল।
আরও পড়ুনবিরে গারস: যে কুয়ায় নবীজি (সা.) গোসল করতেন০৪ মে ২০২৫১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬ হাজার ৬০০ হজযাত্রী হজ পালন করেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ‘হিজবুল বাহার’ নামে একটি জাহাজ ক্রয় করে, যা ১৯৭৭ থেকে পাঁচ-ছয় বছর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জেদ্দায় হজযাত্রী পরিবহন করে। তবে ১৯৮৫ সালের পর থেকে হজযাত্রীরা বিমানে যাতায়াত শুরু করেন এবং সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম থেকে হজযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পাহাড়তলী হজ ক্যাম্প থেকে হজ-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হতো। পরবর্তী সময়ে ঢাকার আশকোনায় স্থায়ী হজ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখান থেকে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে হজযাত্রীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। মোগল ও ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দশক পর্যন্ত, এই বন্দর হজযাত্রার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে। সমুদ্রপথে হজযাত্রা বন্ধ হলেও চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্য বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫