স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনগুলোতে কোলাহল কমছে
Published: 19th, May 2025 GMT
স্থলবন্দর দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শর্ত অনুযায়ী তৈরি পোশাক, ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত ও আসবাব রপ্তানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। আগে যেসব স্থলবন্দরে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে রপ্তানিমুখী গাড়ির দীর্ঘ লাইন থাকত, এখন সেখানে শুধু কয়েকটি পণ্যবাহী গাড়িই চোখে পড়ছে। সব মিলে বন্দর-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামতে পারে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বেনাপোল বন্দরে আসা ৩৬টি ট্রাকের মধ্যে ১২টি সোমবার ফেরত গেছে ঢাকায়। ২৪টি ট্রাক এখনও বন্দরের কার্গো ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে আছে। ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস এখনও আগের এলসি বা টিটির পণ্য আমদানি বিষয়ে কোনো সমাধান দেয়নি।
১৭ মে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এক পরিপত্রের মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেদিন বেনাপোল বন্দরে ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় পোশাক-বোঝাই ৩৬টি ট্রাক ছিল। কিন্তু ভারতীয় কাস্টমস পণ্য রপ্তানির অনুমতি না দেওয়ায় এসব ট্রাক বিপাকে পড়ে। শেষে গতকাল ১২টি ট্রাক ফেরত গেছে। এসব পণ্য এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি হবে বলে জানা গেছে।
মাহমুদ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি জাহান আলী বলেন, ঢাকার রপ্তানিকারক আইএফএল ফ্যাক্টরি লিমিটেডের তৈরি পোশাকের ৫টি চালানের ১৫টি ট্রাক এখনও বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে। এসব চালানে ৬৩ হাজার ৩০৪ কেজি তৈরি পোশাক আছে, যার রপ্তানিমূল্য ৭ লাখ ৫৬ হাজার ১৩১ মার্কিন ডলার।
ন্যাশনাল ফ্রেড কার্গো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি আশানুর রহমান বলেন, ঢাকার ডেনিম্যান লি.
বন্ধ রয়েছে সিলেটের কয়েকটি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন: শনিবার কিছু পণ্য ভারতে গেলেও রোববার থেকে বন্ধ রয়েছে সিলেটের কয়েকটি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন। শেওলা স্থলবন্দর কাস্টমসের সহকারী কমিশনার বিকাশ সরকার জানান, গত শনিবার সাত ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। রোববার থেকে কোনো পণ্য যায়নি। এই বন্দর দিয়ে প্রাণ আরএফএলের পিভিসি পাইপ, প্লাস্টিক ডোর পণ্য এবং খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফুলকলির জুস, বিস্কুটসহ কিছু পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। রোববার থেকে পিভিসি পাইপ বহনকারী তিনটি ট্রাক বন্দরে রয়েছে।
তৈরি পোশাক ও খাদ্যসামগ্রীর মতো পণ্যের ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সিলেটের স্থলবন্দরগুলোতে খুব একটা পড়বে না বলে দাবি করছেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার তাহসিনুর রহমান। তিনি বলেন, তামাবিল স্থলবন্দরে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে শেওলাসহ দু’একটি শুল্ক স্টেশনে প্রভাব পড়তে পারে।
জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চারটি স্থলবন্দর ও ৫টি শুল্ক স্টেশনের মধ্যে তামাবিল, শেওলা স্থলবন্দর এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার চাতলাপুর ও জুড়ির ফুলতলা বটুলী শুল্ক স্টেশন দিয়ে কিছু তৈরি পোশাক, পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী, তুলা, সুতা ও কাঠের আসবাব রপ্তানি হয়ে থাকে। অন্য বন্দর ও স্টেশন দিয়ে আমদানি-রপ্তানি হয় পাথর, কয়লাসহ অন্যান্য পণ্য।
নিষেধাজ্ঞার পর কোনো গাড়ি যায়নি তামাবিল দিয়ে: সোমবার চাতলাপুর শুল্ক স্টেশন দিয়ে কিছু মাছ রপ্তানি হয়েছে। অন্য কোনো পণ্য যায়নি বলে জানিয়েছেন স্টেশনের স্টাফ মতছির আলী। এ ছাড়া জুড়ি উপজেলার বটুলী শুল্ক স্টেশন দিয়ে দুই দিন ধরে রপ্তানি বন্ধ। তামাবিল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বন্দর দিয়ে মাঝেমধ্যে খাদ্য ও প্লাস্টিক সামগ্রী রপ্তানি হয়। নিষেধাজ্ঞার পর কোনো গাড়ি যায়নি। কোনো পণ্য আটকাও পড়েনি। পাথর ও কয়লা আমদানি স্বাভাবিক।
আখাউড়া স্থলবন্দরে অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ব্যবসায়ীরা: আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে সোমবার শুধু মাছ, ভোজ্যতেল ও পাটজাত দ্রব্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় রপ্তানি হয়েছে। বন্দর-সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়েক দিন আগেও যেখানে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে রপ্তানিমুখী গাড়ির লম্বা লাইন থাকত, সেখানে শুধু তিন আইটেমের ১৬টি গাড়ি ছাড়া সোমবার অন্য কোনো গাড়ি চোখে পড়েনি। আগে মানুষের কোলাহল আর পণ্যবাহী গাড়ির হর্নের আওয়াজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুখরিত থাকত আখাউড়া স্থলবন্দর। এখন সেই কোলাহল নেই বন্দরের কোথাও। শুল্ক স্টেশন, বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছেন।
আখাউড়া স্থলবন্দরের মৎস্য রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফারুক মিয়া বলেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞার ফলে আজ (সোমবার) প্রায় অর্ধকোটি টাকার পণ্য রপ্তানি কম হয়েছে। এখন মাছ, পাথর ও তেল বাদে বাকি সব পণ্য নেওয়া বন্ধ করেছে ভারত। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দুই দেশের সরকারকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য অনুরোধ করছি।
আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নিছার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কাস্টমস, শ্রমিক, আমদানি-রপ্তানিকারক আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সরকারের উচিত দ্রুত ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসা।
স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিদিন ৪০-৫০ গাড়ি পণ্য রপ্তানি হতো। আজ অনেক গাড়ি আসেনি। স্থলবন্দর দিয়ে আজ মাছ, ভোজ্যতেল ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি হয়েছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়নি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরেও নির্দিষ্ট পণ্যের রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। তবে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কলমবিরতি সোমবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত থাকলেও আমদানি স্বাভাবিক। কর্মবিরতি শেষে বিকেলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয়। জানা গেছে, সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে ৫-৭ জন রপ্তানিকারক গার্মেন্টস পণ্য, পাটজাত পণ্য, আরএফএলের কিছু পণ্য, কিছু ফাস্টফুড পণ্য এবং তুলা জাতীয় পণ্য রপ্তানি হয়। ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এ বন্দর দিয়ে শুধু গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। যদিও সোমবার পর্যন্ত রপ্তানিতে তেমন প্রভাব পড়েনি। রোববার ও সোমবার অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হলেও কোনো গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়নি।
বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা পোর্ট লিঙ্ক লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার কামাল হোসেন জানান, রোববার এ বন্দর দিয়ে ১২ ট্রাক পাটজাত পণ্য ও চটের বস্তা রপ্তানি হয়েছে। আমদানি হয়েছে ৩০০ ট্রাক বিভিন্ন পণ্য। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৯০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ৪টি পাটজাত পণ্যের ট্রাক ভারতে গেছে। গত রোববার পোশাকবাহী একটি ট্রাক ভারতে প্রবেশ করতে না পেরে বন্দর থেকে ফেরত গেছে।
সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিকারক রওশন আলী জানান, শনিবার তাঁর ৩টি পণ্যের ট্রাক ভারতে গেছে। তবে রোববার কোনো পণ্য পাঠাতে পারেননি। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও ৬০/৭০ ট্রাক গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানির আদেশ ছিল। কিন্তু ভারতের হঠাৎ সিদ্ধান্তের কারণে তিনি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন।
ক্ষুব্ধ রওশন আলী বলেন, সাপটা চুক্তির আওতায় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁর ৬০/৭০ ট্রাক পণ্য রপ্তানির আদেশ ছিল। কিন্তু ভারতের হঠাৎ এ আদেশ হতাশাজনক। গার্মেন্টস পণ্যের আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকসহ ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে বিবেচনার জন্য জানানো হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরে পণ্য রপ্তানিতে গতি নেই: ভারতের নিষেধাজ্ঞার দুই দিনেও কোনো প্রভাব পড়েনি দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে। এখন পর্যন্ত এই বন্দর দিয়ে রপ্তানিযোগ্য কোনো পণ্য আটকা নেই বলে জানা গেছে। হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, ভারতের যে নিষেধাজ্ঞা, তাতে ব্যবসা কমে যাবে। যদিও এই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে তেমন গতি নেই। এর পরও নতুন করে পণ্য রপ্তানির ট্রাক এলে আটকা পড়ার আশঙ্কায় রয়েছি।
বুড়িমারী স্থলবন্দরে ১৩ ট্রাক আটকা পড়েছে: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে জুস, বিস্কুট, নুডলস নিয়ে প্রাণ আরএফএল গ্রুপের ১৩টি ট্রাক আটকা পড়েছে। রপ্তানির উদ্দেশ্যে ট্রাকগুলো বন্দরে এসেছিল। তবে বন্দরে ভুটান থেকে পাথর আমদানি এবং ভারত ও নেপালে অন্যান্য পণ্য রপ্তানি স্বাভাবিক বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো ও প্রতিনিধি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পণ য স ন মসজ দ ব যবস য় র ক স টমস স মব র আমদ ন রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪