রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুই ঘণ্টার বেশি ফোনালাপের পর ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন তৎপরতা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে শিগগিরই যুদ্ধবিরতির একটি পথরেখা দেওয়া হবে বলে আশা করছে ওয়াশিংটন। পথরেখা পেলে বোঝা যাবে মস্কো এই সংঘাত বন্ধের বিষয়ে ইতিবাচক কি না।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার এ কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা নিয়ে সময়ক্ষেপণের অভিযোগ তুলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ ও দখলদারত্ব অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে রাশিয়া সময়ক্ষেপণের মতো অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।

গত সোমবার পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পর ট্রাম্প জানান, যুদ্ধবিরতির জন্য শিগগির আলোচনা শুরু করবে মস্কো ও কিয়েভ। এর আগে গত শুক্রবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। তিন বছরের মধ্যে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রথম সরাসরি বৈঠক ছিল এটি।

ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর পুতিনও যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে রাশিয়ার ইতিবাচক অবস্থানের ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে একটি ‘স্মারকপত্র’ নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে মস্কো, যে স্মারকপত্রে যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাব্য পথরেখা এবং উভয় পক্ষের অবস্থান তুলে ধরা হবে।

মস্কোর পক্ষ থেকে শিগগিরই যুদ্ধবিরতির একটি পথরেখা তুলে ধরা হবে জানিয়ে মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘পুতিন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য নিজেদের শর্ত ও অবস্থান জানিয়ে শিগগিরই একটি পথরেখা দেবেন তাঁরা। আশা করা হচ্ছে, এর জন্য কয়েক দিন বা দু–এক সপ্তাহ লাগতে পারে।’

মার্কো রুবিও আরও জানান, ‘রাশিয়ার পক্ষ থেকে পথরেখায় বিস্তারিত শর্ত তুলে ধরা হবে। এটা হলে আমরা একটি যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে যেতে পারব। একই সঙ্গে এতে করে বিস্তারিত আলোচনা এবং এই সংঘাতের প্রায় সমাপ্তির খুলে যাবে। যদি শর্তগুলো বাস্তবসম্মত হয় এবং এটা নিয়ে আমরা কাজ করতে পারি, তাহলে সেটা হবে একটা বিষয়। কিন্তু তাঁরা (রাশিয়া) যদি অবাস্তব শর্ত দিয়ে বসে, সেটাও একটা ইঙ্গিত দেবে। পথরেখা পেলে বোঝা যাবে তারা যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে ইতিবাচক কি না।’

যুদ্ধ বন্ধের তৎপরতার মধ্যেই হামলা

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে এসব আলোচনার মধ্যেই গতকাল বুধবার ইউক্রেনের একটি সামরিক ঘাঁটিতে রাশিয়ার হামলায় ছয় ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন। হামলার সময় ইউক্রেনীয় সেনারা একটি প্রশিক্ষণ মহড়ায় অংশ নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে কিয়েভ।

গতকাল ইউক্রেনীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, উত্তর–পূর্বের সুমি অঞ্চলের একটি সামরিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে রুশ বাহিনী হামলা চালিয়েছে। হামলায় ছয় সেনা নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের ওই সামরিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।

সুমি রাশিয়া সীমান্তবর্তী একটি অঞ্চল। গত বছর এখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে বড় এক অভিযান পরিচালনা করেন ইউক্রেনীয় সেনারা। অঞ্চলটির বিস্তীর্ণ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। রুশ বাহিনীর অব্যাহত হামলার মুখে সম্প্রতি কুরস্ক থেকে ইউক্রেনীয় সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হন।

এদিকে গতকাল রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর ক্রেমলিন জানিয়েছে, মঙ্গলবার ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন পুতিন। ইউক্রেনীয় সেনারা ২০২৪ সালের আগস্টে কুরস্ক অঞ্চলের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ দখল করেন। কিন্তু গত এপ্রিলের শেষের দিকে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের সহায়তায় মস্কোর বাহিনী তাদেরকে কুরস্ক থেকে হটিয়ে দেয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র ইউক র ন য় স ন র য দ ধ বন ধ র ইউক র ন র ক রস ক র একট পথর খ

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব ইজতেমা মার্চে 

প্রতিবছর জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হলেও এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে মার্চ মাসে করা হবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ এ তথ্য জানিয়েছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ বা শুরায়ী নেজামের শীর্ষ নেতা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারি।

আরো পড়ুন:

শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর ইজতেমা

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত বছরগুলোতে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হলেও আগামী বছর এক পর্বে হবে। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী বা সাদপন্থিদের ইজতেমা আয়োজনের সুযোগ থাকবে না। 

মুফতি কেফায়েতুল্লাহ বলেছেন, “তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ তাবলিগি এ মেহনতকে দ্বীনি মেহনত হিসেবে বিশ্বাস করে। দ্বীনি কাজের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের অনুরোধ শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে আমরা আগামী বিশ্ব ইজতেমা মার্চে আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে সরকারের প্রতি সহযোগিতার শামিল।”

বিশ্ব ইজতেমা সাদপন্থিরা আয়োজন করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে তারা লিখিত দিয়ে গতবার শেষবারের মতো ইজতেমার আয়োজন করেছিল। সেক্ষেত্রে তাদের আর ইজতেমা করার সুযোগ নেই।”

বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনটি অনুরোধ তুলে ধরা হয়।
১. আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের আগেই ইজতেমার দিন-তারিখ ঘোষণা এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে অবহিত করা।

২. ইজতেমা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানকে অস্থায়ীভাবে কেপিআই (কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন) ঘোষণা।

৩. ইজতেমায় আসা বিদেশি অতিথিদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভিসা সহজীকরণ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা।

ঢাকা/রায়হান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ