পুঠিয়ায় খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের সাড়ে ৪ মাস পর আ.লীগ নেতার মৃত্যু
Published: 23rd, May 2025 GMT
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের সাড়ে চার মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে।
মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম অলিউজ্জামান ওরফে মন্টু (৬৮)। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারার চাচাতো ভাই।
অলিউজ্জামান পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাতিজা আবু হানিফ সুজা।
আরো পড়ুন:
চাঁদপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল ২ জনের
লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি, মরদেহে হামলা
মারা যাওয়া অলিউজ্জামানের বাড়ি পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহ গ্রামে। তার বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। অলিউজ্জামান ‘পুঠিয়া-দুর্গাপুরের শিক্ষামন্ত্রী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তার চাচাতো ভাই আবদুল ওয়াদুদ দারা রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
আবু হানিফ জানান, শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে তার চাচা মারা যান। ঢাকা থেকে মরদেহ নিয়ে তারা বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন। এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের পর থেকে তার চাচা চিকিৎসাধীন ছিলেন। নির্যাতনের পর থেকেই তিনি গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। প্রথমে তাকে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে যান অলিউজ্জামান। গত ২ জানুয়ারি রাতে তিনি বাড়িতে ফিরেছিলেন। গত ৪ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে তিনি পাশের মাইপাড়া বাজারে চা পান করতে যান। সেখান থেকে বিএনপির লোকজন তাকে বিড়ালদহ বাজারের পাশে নন্দনপুর নিয়ে যান। সেখানে সড়কের পাশে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে তাকে পেটানো হয়। পিটিয়ে আলিউজ্জামানের দুইটি পা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মিঠুন, আহসান ও সীমান্ত এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে লোকমুখে শুনেছেন বলে সে সময় জানিয়েছিলেন অলিউজ্জামানের ভাতিজা আবু হানিফ।
হামলার ব্যাপারে তখন মিঠুন বলেছিলেন, “যারা অলিউজ্জামানকে মারধরের অভিযোগ করেছেন তারা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।” তিনি দাবি করেন আহসান, সীমান্ত ঘটনাস্থলে ছিল না।
অলিউজ্জামানের ভাতিজা আবু হানিফ শুক্রবার বিকেলে বলেন, “নির্যাতনের ঘটনায় পুঠিয়া থানায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ নেয়নি। পরে কোনো সুযোগ হলে আদালতে মামলা করা হবে।”
পুটিয়া থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, “ওই ঘটনার পর পরিবারের কেউ মামলা করেননি।” অলিউজ্জামানের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এখনো আমি এ বিষয়ে কিছু শুনিনি। খোঁজ নিচ্ছি।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ অভ য গ উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘলা দিনের শেষে তারাঝলমল সন্ধ্যা
মেঘমেদুর দিনের শেষে গান, নাচ, সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদানের জমকালো আয়োজনে সম্পন্ন হলো মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার অনুষ্ঠান। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে দেশের বিনোদনজগতের তারকাদের দ্যুতিময় সমাবেশে পুরস্কৃত করা হলো কৃতিত্ব অর্জনকারীদের।
এটি ছিল মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারের ২৬তম আসর। বরাবরের মতো এবারও একটি আজীবন সম্মাননা এবং বিভিন্ন বিভাগে মোট ২০টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিশেষ সম্মাননা জানানো হয় দেশের চলচ্চিত্রের সুপারস্টার শাকিব খানকে। পুরস্কার বিতরণের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আকর্ষণীয় নাচ–গানের মনমাতানো পরিবেশনা।
হল অব ফেমের লবিতে বিছানো লালগালিচা দিয়ে বিনোদনজগতের তারকাদের মিলনায়তনে প্রবেশের পর্ব শুরু হয় বিকেল পাঁচটা থেকে। তাঁদের অভিমত ও কাজের পরিচিতি তুলে ধরে তা মিলনায়তনের ভেতরের বড় পর্দায় দেখানো হয়। মূল অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল সন্ধ্যা ছয়টায়। প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কথাশিল্পী আনিসুল হক অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, এ অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান দর্শক, শিল্পী, অনুষ্ঠানের সহযোগী স্কয়ার গ্রুপসহ সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। তবে তিনি এখন দেশে নেই। সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের ‘ইনমা গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’-এ প্রথম আলো পেয়েছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার সেরা’র পুরস্কার। এই পুরস্কার গ্রহণের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘটনার সংবাদ প্রচার এবং পরে এ নিয়ে প্রদর্শনী, বিশেষ সংখ্যা, বই প্রকাশসহ বিভিন্ন উদ্যোগের জন্য প্রথম আলো পুরস্কৃত হয়েছে। পর্দায় সম্পাদক মতিউর রহমানের পুরস্কার গ্রহণের দৃশ্যটি দেখানো হলে দর্শকেরা করতালিতে অভিনন্দন জানান।
স্কয়ার টয়লেট্রিজের পক্ষে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মালিক মোহাম্মদ সাঈদ। তিনি বলেন, স্কয়ার দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে এ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে যুক্ত রয়েছে। দেশের বিনোদনজগতের সৃজনশীল কাজ ও গুণী শিল্পীদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কৃত করার এ আয়োজন আনন্দ ও গৌরবের।
এরপর মঞ্চে আসেন বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা আফজাল হোসেন। মেরিল–প্রথম আলোর যাত্রার ইতিহাস দর্শকদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে শুরু হয়েছিল এ আয়োজন। তিনি ও জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা সঞ্চালনা করেছিলেন সেই অনুষ্ঠান। কথায়–কথায় জানালেন, এবার তিনি মঞ্চে এসেছেন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পর্বের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে। এবারের আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত বহুগুণে গুণান্বিত ব্যক্তিত্ব আবুল হায়াতের নাম ঘোষণা করেন তিনি। মঞ্চের নেপথ্যের বিশালাকার ডিজিটাল পর্দায় দেখানো হলো অভিনেতা, নাট্যকার, নির্মাতা, মডেল ও কলামিস্ট আবুল হায়াতের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের দৃশ্য।
আবুল হায়াতকে মঞ্চে নিয়ে আসেন স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। তিনি আবুল হায়াতকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। তাঁর হাতে পুরস্কারের ক্রেস্ট তুলে দেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান। দর্শকেরা করতালিতে তাঁদের অভিনন্দিত করেন।
সমবেত নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পুরস্কার বিতরণী পর্বের শুরু। যন্ত্রবাদনের সঙ্গে ধ্রুপদি নৃত্য পরিবেশন করেন তমা মির্জা, মন্দিরা চক্রবর্তী ও হৃদি শেখ এবং সোহাগ ড্যান্স ট্রুপের শিল্পীরা।এরপর সমবেত নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পুরস্কার বিতরণী পর্বের শুরু। যন্ত্রবাদনের সঙ্গে ধ্রুপদি নৃত্য পরিবেশন করেন তমা মির্জা, মন্দিরা চক্রবর্তী ও হৃদি শেখ এবং সোহাগ ড্যান্স ট্রুপের শিল্পীরা।
নাচ শেষ হলে বিশিষ্ট অভিনয়শিল্পী প্রয়াত হুমায়ুন ফরীদির সংলাপের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতিকৃতি নিয়ে মঞ্চে আসেন অভিনেতা আফরান নিশো। এরপর আসেন অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ। পুরস্কার ও মনোনয়ন নিয়ে মজার মজার কথামালায় অনুষ্ঠানকে এগিয়ে নেন দুজন মিলে। শুরু হয় পুরস্কার বিতরণ পর্ব। প্রথমে ওয়েব সিরিজের সমালোচক পুরস্কার—সেরা নির্মাতা, অভিনেত্রী, অভিনেতা পুরস্কার। বিচারকমণ্ডলীর পরিচিতি ও প্রতিটি বিভাগেই মনোনীতদের নাম ঘোষণার পর পর্দায় সংক্ষিপ্ত দৃশ্য ফুটে ওঠে। তারকারা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন অভিনেত্রী আফসানা মিমি ও নির্মাতা আশফাক নিপুন। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তাঁরা।
ওয়েব সিরিজের বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার বিতরণের পর গান নিয়ে বেশ খানিকটা কথোপকথন চলতে থাকে সঞ্চালক আফরান নিশো ও তাসনিয়া ফারিণের মধ্যে। এর মধ্যে ‘দুষ্টু কোকিল’ গানের সঙ্গে সহশিল্পীদের নিয়ে মঞ্চে আসেন বিদ্যা সিনহা মিম। নৃত্যের মাঝখানে এসে অংশ নেন রেহান ও কনা।
বিশেষ সম্মাননা স্মারক হাতে শাকিব খান