পাবনায় দুই মুক্তিযোদ্ধার নামে স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুলের নাম পরিবর্তন, স্থানীয়দের ক্ষোভ
Published: 25th, May 2025 GMT
পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন স্টেডিয়াম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল সুইমিংপুলের নাম পরিবর্তন করে যথাক্রমে জেলা স্টেডিয়াম এবং জেলা সুইমিংপুল রাখা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নির্মিত দেশের বিভিন্ন জেলার স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এসব নাম অবিলম্বে পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেই চিঠিতে।
পাবনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, পাবনার স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুলের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কেবল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, শহীদ আমিনউদ্দিন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে দেশের প্রথম শহীদ সংসদ সদস্য। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম বকুল ছিলেন পাবনায় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ও নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনিই প্রথম পাবনায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
শহীদ আমিনউদ্দিনের ছেলে সদরুল আরেফিন বলেন, ‘সরকার পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে। আমার বাবার নাম মুছে দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।’ রফিকুল ইসলাম বকুলের সহযোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম বলেন, নাম পরিবর্তন করে ইতিহাস মোছা যায় না। এতে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হলো।
শহীদ আমিনউদ্দিনের নাতনি ও বিএনপি নেত্রী ফারজানা শারমিন বলেন, এটি নিন্দনীয় এবং আপত্তিকর সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের ভিত্তিতে নামকরণ করা স্থাপনার নাম এভাবে পরিবর্তন অনুচিত। সাংবাদিক উৎপল মির্জা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান অস্বীকার করা মানেই জাতিকে অবমাননা করা।
পাবনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ মাসুম বলেন, ‘শহীদ আমিনউদ্দিন পাবনার গর্ব। আমাদের প্রেরণা। মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল পাবনায় প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী। তিনি গণমানুষের নেতা ছিলেন। দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছেই তিনি নিজগুণে প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। এই বীরযোদ্ধার রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে আমি নাম পরিবর্তনের ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আশা করি, শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে সরকার এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প বন য়
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।