মমতাজের দিকে আবার ডিম নিক্ষেপ, আদালতে হাজিরা শেষে রিমান্ডে
Published: 27th, May 2025 GMT
মানিকগঞ্জে হত্যা মামলায় আদালতে হাজিরা শেষে অন্য আরেকটি মামলায় দুই দিনের রিমান্ড কার্যকরের জন্য সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে হরিরামপুর থানায় নেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালতে শুনানি শেষে তাঁকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
মানিকগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো.
এদিকে আজও মমতাজ বেগমকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে মমতাজকে লক্ষ্য করে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আজ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল। এরপরও জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নেতা-কর্মীরা মমতাজকে লক্ষ্য ডিম ছোড়েন এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বেলা একটার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে মমতাজকে হরিরামপুর থানায় নেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর–হরিরামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজের বিরুদ্ধে সিঙ্গাইর থানায় একটি হত্যা মামলা এবং হরিরামপুর থানায় হামলা, মারধর ও বসতবাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় গত বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক হত্যা মামলায় চার দিন এবং ভাঙচুরের মামলায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে ওই দিন তাঁকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে নেওয়া হয়।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে হত্যা মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিতে কাশিমপুর কারাগার থেকে মমতাজকে মানিকগঞ্জে আদালতে আনা হয়। এরপর তাঁকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মমতাজকে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের বিচারক সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী হরিরামপুর থানায় করা হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের মামলায় ধার্য দুই দিনের রিমান্ড কার্যকরে থানায় নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম বলেন, হত্যা মামলায় আজ নির্ধারিত শুনানির দিন থাকায় মমতাজ বেগমকে আদালতে নেওয়া হয়। শুনানি শেষে তাঁকে হরিরামপুর থানায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে হত্যা মামলার চার দিন এবং হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের মামলার দুই দিনের রিমান্ড কার্যক্রম চলবে। সিঙ্গাইরে নিরাপত্তার আশঙ্কায় আসামিকে হরিরামপুর থানায় নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুনমানিকগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে মমতাজের ওপর ডিম–জুতা নিক্ষেপ, ৬ দিনের রিমান্ড২২ মে ২০২৫হত্যা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে মানিকগঞ্জ-সিঙ্গাইর-হেমায়েতপুর সড়কের গোবিন্দল নতুন বাজার এলাকায় মিছিল বের করেন ইসলামি সমমনা দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। এতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাদীর ছেলে নাজিম উদ্দিন মোল্লাসহ চারজন নিহত হন। নিহত অন্য তিনজন হলেন গোবিন্দল গ্রামের মাওলানা নাসির উদ্দিন, আলমগীর হোসেন ও শাহ আলম। এ ঘটনায় গত ২৫ অক্টোবর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের মো. মজনু মোল্লা বাদী হয়ে সিঙ্গাইর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় মমতাজকে প্রধান আসামি করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১০৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।
হামলা–ভাঙচুরের মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২২ সালের ৩০ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানের উপজেলার বয়ড়া গ্রামের বাসভবনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বক্তব্য চলাকালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হামলা করেন। এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন একটি মামলা করেন। মামলায় মমতাজকে প্রধান আসামি করে আওয়ামী লীগের ৮৬ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ব এনপ র মমত জ ব কর ম র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণ কী
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে প্রাণক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এরপর জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো সত্ত্বেও প্রতিশ্রুত সংস্কারে বিলম্ব, ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক বিভাজনের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা তৈরির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো:
নির্বাচন বিতর্কডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। তবে এখনো নির্বাচন আয়োজনে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি অন্তর্বর্তী সরকার।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। গত সপ্তাহে দলটি বলেছে, একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী পরিকল্পনা ছাড়া অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখা ‘কঠিন’ হবে।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত সপ্তাহে এক বক্তব্যে ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এতে সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়ে।
গত বছরের অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা তরুণদের উদ্যেোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জোর দিয়ে বলছে, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সংস্কার নিয়ে অচলাবস্থাহাসিনার বিদায়ের পর অধ্যাপক ইউনূস যে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেই সংস্কারের অগ্রগতি ধীরগতিতে চলছে। তাঁর সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য গঠনের জন্য সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে।
ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের প্রথম দফার সংলাপে কিছু পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।
তবে সাংবিধানিক সংস্কার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ–সংক্রান্ত আরও জটিল কিছু প্রস্তাব নিয়ে তীব্র মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ জুনের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে বলে ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিবাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিতিশীল অবস্থা জনগণের উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক ও রাজনৈতিক কর্মীদের রাজপথে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ রাজধানী ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে।
এই অস্থিরতা নাগরিকদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, যদি শিগগিরই রাজনৈতিক ঐকমত্য না হয়, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
আরও পড়ুনইউনূস সরকারের ওপর চাপ বাড়ার মধ্যেই বাংলাদেশে বিক্ষোভ২৬ মে ২০২৫হাসিনার দলের ওপর নিষেধাজ্ঞাচলতি মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সামনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে দলটিকে কার্যত বাইরে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এতে পরবর্তী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার বিষয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পদক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর সরকারকে অস্থিতিশীল করতে যে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তাতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি২৩ মে ২০২৫