জামায়াতে ইসলামী ভয়ঙ্কর জুলুমের শিকার হয়েছিল: সংবাদ সম্মেলনে আমির
Published: 27th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “বিগত শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ঙ্কর জুলুমের শিকার হয়েছিল। জুলুম করে আমাদের বুক থেকে এক এক করে ১১ জন শীর্ষ দায়িত্বশীল নেতাকে মিথ্যা, সাজানো, ও পাতানো মামলায় এবং মিথ্যা সাক্ষী প্রদানের মাধ্যমে কার্যত জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আমাদের রিভিউ আবেদন শুনানির পর রায় ঘোষণা করেছেন। এই রায়ে আমাদের সম্মানিত মজলুম নেতা এবং আমাদের প্রিয় ভাই এটিএম আজহারুল ইসলামকে তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “জাতির এই সংকট মুহূর্তে আমাদের মাথার তাজ এসব নেতৃবৃন্দ যদি বেঁচে থাকতেন, তারা তাদের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা-অভিজ্ঞতা দিয়ে এই জাতিকে পথ দেখাতে পারতেন। ক্যাঙ্গারু কোর্ট এভাবে এক একজন করে তাদেরকে হত্যা করেছে। দুনিয়ার কেউ তাদেরকে আর আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু তাদের স্মৃতি এবং কর্ম ও তাদের অবদান আল্লাহর দ্বীনের জন্য অম্লান থাকবে এবং বারবার ফিরে আসবে।”
আরো পড়ুন:
আসিফ নজরুলের পোস্ট
‘নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় খালাস পেয়েছেন আজহারুল ইসলাম’
খালাস পেলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারুল, মুক্তিতে বাধা নেই
তিনি মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে খালাস দেওয়ার পর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।”
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা.
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করে বলেন, “দীর্ঘদিন আমরা এমন একটি সুবিচারপূর্ণ রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। সেই রায় দিয়ে আজ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আরো বেশি কৃতজ্ঞ করেছেন। সেই মহান রবের দরবারে হৃদয়ের গভীর থেকে শুকরিয়া আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ।”
ডা. শফিক বলেন, “যে জায়গায় বসে আজকে আমি কথা বলছি, সেখানে আগে আপনারা দীর্ঘদিন যাদের বসতে দেখেছেন, যাদের মুখের কথা শুনেছেন কার্যত তাদেরই একজন ছাড়া দুনিয়া থেকে সবাইকে নির্মমভাবে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। আমি সেই সমস্ত পরম শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ এবং তাদের যে সমস্ত সহকর্মীদেরকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে মহান রবের দরবারের কাতরকণ্ঠে তাদের জন্য আমি শাহাদাতের সর্বোচ্চ দরজা কামনা করছি।”
তিনি বলেন, “তার পাশাপাশি স্বৈরশাসনের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন, বিডিআর সদস্যরা এবং সাধারণ প্রতিবাদী জনগণ যাদেরকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে বিশেষ করে চব্বিশের বিপ্লবের সময় যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করি তিনি তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। এসব শহীদ পরিবারের সব সদস্যদের প্রতি আমাদের সীমাহীন শ্রদ্ধা, ভালোবাস রইল। তাদের জন্যও মহান রবের দরবারে দোয়া করি তিনি যেন এর বদলা দুনিয়া এবং আখিরাতের উত্তম জাযাহ দান করেন এবং শহীদদের সাথে তাদেরকেও যেন পরম জান্নাতের ঠিকানা দান করেন। আমরা যারা তাদের দায়িত্ব নিয়েছি আমাদের সীমাহীন ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি। আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতি হাত দিয়ে এই জাতি এবং দ্বীনের জন্য আমাদেরকে কবুল করুন।”
তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আমাদের রিভিউ আবেদন শুনানির পর রায় ঘোষণা করেছেন। এই রায়ে আমাদের সম্মানিত মজলুম নেতা এবং আমাদের প্রিয় ভাই এটিএম আজহারুল ইসলামকে তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “জাতির এই সংকট মুহূর্তে আমাদের মাথার তাজ এসব নেতৃবৃন্দ যদি বেঁচে থাকতেন, তারা তাদের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা-অভিজ্ঞতা দিয়ে এই জাতিকে পথ দেখাতে পারতেন। ক্যাঙ্গারু কোর্ট এভাবে এক একজন করে তাদেরকে হত্যা করেছে। দুনিয়ার কেউ তাদেরকে আর আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু তাদের স্মৃতি এবং কর্ম ও তাদের অবদান আল্লাহর দ্বীনের জন্য অম্লান থাকবে এবং বারবার ফিরে আসবে।”
তিনি বলেন, “এই মামলাগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে সীমাহীন জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। কীভাবে মিথ্যার নেওয়া আশ্রয় হয়েছিল, সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা তার লেখা নিজের বইয়ে স্বীকার করেছেন। কিভাবে পরিকল্পনা মাফিক, ঠান্ডা মাথায় এই নেতৃবৃন্দকে খুন করতে হবে তার ছক তৎকালীন বিচার বিভাগ এবং সরকার মিলে তৈরি করেছিলেন। আপনারা দেখেছেন এক একটা রায় হয়েছে, বাস্তবায়ন হয়েছে। যাকে খুন করা হয়েছে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে তিনি তো আল্লাহর দরবারে চলে গেলেন। কিন্তু পাশাপাশি একই সময় পরিবারের সদস্যদের উপর নির্মম কষাঘাত এবং অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের সম্মানিত ভাই আব্দুল কাদের মোল্লাকে যেদিন রাতে জোর করে ফাঁসি কার্যকর করা হলো সেই রাতে তার বাসায় হামলা করা হলো। তার পবিারের সদস্যদেরকে নাজেহাল ও শারীরিক কষ্ট দিয়ে তাদেরকে জেলে ভরে দেওয়া হলো। একেকটা পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।”
তিনি বলেন, “স্কাইপ কেলেঙ্কারির ঘটনা গোটা বিশ্ববাসীর নিকট নিন্দিত হয়েছে, তিরষ্কৃত হয়েছে। গোটা বিচার প্রক্রিয়ার সময় দুটি টর্চার সেল গঠন করা হয়েছিল। একটার নাম দেওয়া হয়েছিলো সেইফ হোম, আরেকটার নাম দেওয়া হয়েছিলো সেইফ হাউজ। সেইফ হোমে ভিকটিম নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নাজেহাল করা হতো। সেখানে উচ্চ আদালতের ডিরেকশনে সেইফ হোমে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন তাদের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। আমরা তখন নিরবে সহ্য করেছি। আমরা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি। চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে বলেছি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা এই দেশকে ভালোবাসি। আমাদের প্রিয় নেতৃবৃন্দরাও এই দেশকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসার জায়গা থেকে তারা চেষ্টা করেছেন দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার। তাদের সবটুকু যোগ্যতা উজার করে দিয়ে তারা বাংলাদেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন। শুধু রাজপথে নয়, সরকারের একটি অংশ হওয়ার পরও তারা সরকারি ব্যবস্থাপনাগুলোকে ভালো করার চেষ্টা করেছেন।”
“আপনারাই সাক্ষী, দুইজন মন্ত্রী তিনটা মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তার এই বান্দাদেরকে বিশেষ সাহায্য করেছিলেন। তারা সততা এবং দক্ষতার সাথে তারা তাদের দায়িত্ব পুরোটা সময় ধরে পালন করেছিলেন। এক বিরল প্রমাণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য তারা রেখে গেছেন। সততার নজিরবিহীন উদাহরণ তারা রেখে গেছেন। আমরা আশা করি তাদের এই অবদান জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি ইনশাআল্লাহ।”
তিনি বলেন, “সম্মানিত ভাইয়েরা আদালতে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে কি হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। আদালত প্রাঙ্গণে যে পরিবারের মানুষকে খুনের অভিযোগে নেতৃবৃন্দের ট্রায়াল চলছে সেই পরিবারের কারো সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। বরং এক ভাই সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন; ইসাবালির ভাই সুখরঞ্জনবালি তাকে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীর গাড়ি থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ অপহরণ করেছে। তাকে অপহরণ করে নির্যাতন করে ভারতের মাটিতে ফেলে রেখেছিল। জেল খেটে দীর্ঘদিন পর তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।”
“আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শুধু জামায়াতে ইসলামীর সম্পদ ছিলেন না বা তিনি শুধু বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিশ্বের বিশ্বাসী মানুষের সম্পদ। তার সাথে কি আচরণ করেছে আপনারা দেখেছেন। তার এই মামলার ব্যাপারে সঠিক কথাটা বলতে সুখরঞ্জনবালি এসেছিলেন। কিন্তু আইনজীবীর গাড়ির দরজা খুলে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের আদালতে এরকম ঘটনা ঘটেনি।”
“আদালত আমাদের নেতৃবৃন্দের ওপর জুলুম করেছে। বহু কায়দা কানুন করে তাদের মুখ থেকে জোর করে যা নয় তা স্বীকার করানোর চেষ্টা করা হয়েছে।এমনকি রায় বাস্তবায়নের আগেও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু না তারা ছিলেন স্থির চিত্ত, তারা ছিলেন ঈমানের বলে বলিয়ান, তারা ছিলেন সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এজন্য মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়িয়েছেন কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নাই। তারা আমাদের শিখিয়ে গেছেন যে মর্যাদাবান জাতি সত্যের উপর অবিচল থাকলে ফাঁসি কোনো বিষয় নয়। মৃত্যু একবারই হবে অপমানজনক মৃত্যু নয়, মৃত্যুটা হোক বীরের মত। তাদের মৃত্যু ছিল বীরোচিত মৃত্যু। আল্লাহ তাদের নেক খেদমতগুলো কবুল করে বারাকাহ দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিন। আমরা অনুপ্রাণিত হই তাদের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত জাতিকে যা যা দিয়ে গেছেন তার থেকে।”
“বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ মামলার বিষয়ে বৃটেনের উচ্চ আদালত তাদের রায়ে বলেছে এই মামলাগুলো বিচারের নামে প্রহসন; জাস্ট জেনোসাইড অব দ্যা জাস্টিস। বিচারকে গণহত্যা করা হয়েছে। তারা কিলিং অব দ্যা জাস্টিস বলে নাই। কারণ সিঙ্গেল কেস হলে বলত কিলিং কিন্তু এখানে ছিল একাধিক কেস। একারণেই তারা বলেছে ইট ওয়াজ এ জেনোসাইড টু জাস্টিস। ব্রিটিশ আদালত এটাকে জেনোসাইড বললেও বাংলাদেশের তৎকালীন কোর্ট তা বলে নাই। তবে বাংলাদেশের কোর্ট আজ সেটাই বলেছে তাদের রায়ের মাধ্যমে। আমরা আমাদের শহীদ নেতৃবৃন্দ সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক নায়েবে আমির শায়খ আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, সাবেক আমির শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা, সাবেক নায়েবে আামর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলী, সাবেক নায়েবে আমির সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবহান, সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডল যাদেরকে খুন করা হয়েছে অন্যায় রায়ের মাধ্যেমে তাদেরকে আরেকবার গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাদেরকে দুনিয়া থেকে সরানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের বুক থেকে সরাতে পারবে না। আমরা তাদেরকে আমাদের কর্মের মাধ্যমে স্মরণ করবো ইনশাআল্লাহ।”
তিনি বলেন, “শত কষ্ট আমাদের বুকে থাকা সত্ত্বেও আমরা দেশকে ভালোবাসি। আমরা প্রতিশোধ নেইনি আপনারা দেখেছেন কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার চাই। এ রায়ের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে এই রায় ছিল ইচ্ছাকৃত; গণহত্যার মাধ্যমে নেতৃত্ব শূন্য করা। একটা দেশ ও দলের নেতৃত্ব শূন্য করার মানেই হচ্ছে জনগণকে অন্ধকারের মাঝে ঠেলে দেওয়া।”
জামায়াত আমির বলেন, “এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে, সে সত্যটাই আজ প্রমাণিত হল।”
তিনি বলেন, “আমরা জাতির কাছে কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন সহযোগিতায় যদি এই দেশের সেবা করার সুযোগ আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব। বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব এবং সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য প্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সবটুকু উজার করে দিব। পাশাপাশি আমরা চাইব আমাদের সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হোক, দুঃশাসনমুক্ত হোক, অপরাধমুক্ত হোক, বৈষম্যমুক্ত হোক, কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক সেই সমাজ গঠনে আমরা আপনাদের সাহচার্য, সমর্থন, সহযোগিতা ও দোয়া আমরা কামনা করি।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ক এমপ ন আল ল হ আম দ র স পর ব র র আম দ র ক আল ল হ ত র দরব র ইসল ম র র রহম ন খ ন কর হয় ছ ল ন র জন র জন য হ স ইন র জন ত ত দ রক কর ছ ল স ইন স কর ছ ন র র জন জ র কর ত র এই আপন র র উপর এক এক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ