জামায়াতে ইসলামী ভয়ঙ্কর জুলুমের শিকার হয়েছিল: সংবাদ সম্মেলনে আমির
Published: 27th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “বিগত শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ঙ্কর জুলুমের শিকার হয়েছিল। জুলুম করে আমাদের বুক থেকে এক এক করে ১১ জন শীর্ষ দায়িত্বশীল নেতাকে মিথ্যা, সাজানো, ও পাতানো মামলায় এবং মিথ্যা সাক্ষী প্রদানের মাধ্যমে কার্যত জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আমাদের রিভিউ আবেদন শুনানির পর রায় ঘোষণা করেছেন। এই রায়ে আমাদের সম্মানিত মজলুম নেতা এবং আমাদের প্রিয় ভাই এটিএম আজহারুল ইসলামকে তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “জাতির এই সংকট মুহূর্তে আমাদের মাথার তাজ এসব নেতৃবৃন্দ যদি বেঁচে থাকতেন, তারা তাদের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা-অভিজ্ঞতা দিয়ে এই জাতিকে পথ দেখাতে পারতেন। ক্যাঙ্গারু কোর্ট এভাবে এক একজন করে তাদেরকে হত্যা করেছে। দুনিয়ার কেউ তাদেরকে আর আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু তাদের স্মৃতি এবং কর্ম ও তাদের অবদান আল্লাহর দ্বীনের জন্য অম্লান থাকবে এবং বারবার ফিরে আসবে।”
আরো পড়ুন:
আসিফ নজরুলের পোস্ট
‘নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় খালাস পেয়েছেন আজহারুল ইসলাম’
খালাস পেলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারুল, মুক্তিতে বাধা নেই
তিনি মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে খালাস দেওয়ার পর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।”
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা.
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করে বলেন, “দীর্ঘদিন আমরা এমন একটি সুবিচারপূর্ণ রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। সেই রায় দিয়ে আজ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আরো বেশি কৃতজ্ঞ করেছেন। সেই মহান রবের দরবারে হৃদয়ের গভীর থেকে শুকরিয়া আদায় করছি আলহামদুলিল্লাহ।”
ডা. শফিক বলেন, “যে জায়গায় বসে আজকে আমি কথা বলছি, সেখানে আগে আপনারা দীর্ঘদিন যাদের বসতে দেখেছেন, যাদের মুখের কথা শুনেছেন কার্যত তাদেরই একজন ছাড়া দুনিয়া থেকে সবাইকে নির্মমভাবে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। আমি সেই সমস্ত পরম শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ এবং তাদের যে সমস্ত সহকর্মীদেরকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে মহান রবের দরবারের কাতরকণ্ঠে তাদের জন্য আমি শাহাদাতের সর্বোচ্চ দরজা কামনা করছি।”
তিনি বলেন, “তার পাশাপাশি স্বৈরশাসনের আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন, বিডিআর সদস্যরা এবং সাধারণ প্রতিবাদী জনগণ যাদেরকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে বিশেষ করে চব্বিশের বিপ্লবের সময় যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করি তিনি তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। এসব শহীদ পরিবারের সব সদস্যদের প্রতি আমাদের সীমাহীন শ্রদ্ধা, ভালোবাস রইল। তাদের জন্যও মহান রবের দরবারে দোয়া করি তিনি যেন এর বদলা দুনিয়া এবং আখিরাতের উত্তম জাযাহ দান করেন এবং শহীদদের সাথে তাদেরকেও যেন পরম জান্নাতের ঠিকানা দান করেন। আমরা যারা তাদের দায়িত্ব নিয়েছি আমাদের সীমাহীন ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি। আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতি হাত দিয়ে এই জাতি এবং দ্বীনের জন্য আমাদেরকে কবুল করুন।”
তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আমাদের রিভিউ আবেদন শুনানির পর রায় ঘোষণা করেছেন। এই রায়ে আমাদের সম্মানিত মজলুম নেতা এবং আমাদের প্রিয় ভাই এটিএম আজহারুল ইসলামকে তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “জাতির এই সংকট মুহূর্তে আমাদের মাথার তাজ এসব নেতৃবৃন্দ যদি বেঁচে থাকতেন, তারা তাদের প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা-অভিজ্ঞতা দিয়ে এই জাতিকে পথ দেখাতে পারতেন। ক্যাঙ্গারু কোর্ট এভাবে এক একজন করে তাদেরকে হত্যা করেছে। দুনিয়ার কেউ তাদেরকে আর আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু তাদের স্মৃতি এবং কর্ম ও তাদের অবদান আল্লাহর দ্বীনের জন্য অম্লান থাকবে এবং বারবার ফিরে আসবে।”
তিনি বলেন, “এই মামলাগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে সীমাহীন জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। কীভাবে মিথ্যার নেওয়া আশ্রয় হয়েছিল, সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহা তার লেখা নিজের বইয়ে স্বীকার করেছেন। কিভাবে পরিকল্পনা মাফিক, ঠান্ডা মাথায় এই নেতৃবৃন্দকে খুন করতে হবে তার ছক তৎকালীন বিচার বিভাগ এবং সরকার মিলে তৈরি করেছিলেন। আপনারা দেখেছেন এক একটা রায় হয়েছে, বাস্তবায়ন হয়েছে। যাকে খুন করা হয়েছে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে তিনি তো আল্লাহর দরবারে চলে গেলেন। কিন্তু পাশাপাশি একই সময় পরিবারের সদস্যদের উপর নির্মম কষাঘাত এবং অত্যাচার করা হয়েছে। আমাদের সম্মানিত ভাই আব্দুল কাদের মোল্লাকে যেদিন রাতে জোর করে ফাঁসি কার্যকর করা হলো সেই রাতে তার বাসায় হামলা করা হলো। তার পবিারের সদস্যদেরকে নাজেহাল ও শারীরিক কষ্ট দিয়ে তাদেরকে জেলে ভরে দেওয়া হলো। একেকটা পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।”
তিনি বলেন, “স্কাইপ কেলেঙ্কারির ঘটনা গোটা বিশ্ববাসীর নিকট নিন্দিত হয়েছে, তিরষ্কৃত হয়েছে। গোটা বিচার প্রক্রিয়ার সময় দুটি টর্চার সেল গঠন করা হয়েছিল। একটার নাম দেওয়া হয়েছিলো সেইফ হোম, আরেকটার নাম দেওয়া হয়েছিলো সেইফ হাউজ। সেইফ হোমে ভিকটিম নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নাজেহাল করা হতো। সেখানে উচ্চ আদালতের ডিরেকশনে সেইফ হোমে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন তাদের উপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। আমরা তখন নিরবে সহ্য করেছি। আমরা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি। চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে বলেছি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা এই দেশকে ভালোবাসি। আমাদের প্রিয় নেতৃবৃন্দরাও এই দেশকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসার জায়গা থেকে তারা চেষ্টা করেছেন দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার। তাদের সবটুকু যোগ্যতা উজার করে দিয়ে তারা বাংলাদেশে সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চেয়েছিলেন। শুধু রাজপথে নয়, সরকারের একটি অংশ হওয়ার পরও তারা সরকারি ব্যবস্থাপনাগুলোকে ভালো করার চেষ্টা করেছেন।”
“আপনারাই সাক্ষী, দুইজন মন্ত্রী তিনটা মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তার এই বান্দাদেরকে বিশেষ সাহায্য করেছিলেন। তারা সততা এবং দক্ষতার সাথে তারা তাদের দায়িত্ব পুরোটা সময় ধরে পালন করেছিলেন। এক বিরল প্রমাণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য তারা রেখে গেছেন। সততার নজিরবিহীন উদাহরণ তারা রেখে গেছেন। আমরা আশা করি তাদের এই অবদান জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে যুগের পর যুগ, শতাব্দির পর শতাব্দি ইনশাআল্লাহ।”
তিনি বলেন, “সম্মানিত ভাইয়েরা আদালতে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে কি হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। আদালত প্রাঙ্গণে যে পরিবারের মানুষকে খুনের অভিযোগে নেতৃবৃন্দের ট্রায়াল চলছে সেই পরিবারের কারো সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। বরং এক ভাই সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন; ইসাবালির ভাই সুখরঞ্জনবালি তাকে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীর গাড়ি থেকে সাদা পোশাকে পুলিশ অপহরণ করেছে। তাকে অপহরণ করে নির্যাতন করে ভারতের মাটিতে ফেলে রেখেছিল। জেল খেটে দীর্ঘদিন পর তিনি দেশে ফিরে এসেছেন।”
“আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী শুধু জামায়াতে ইসলামীর সম্পদ ছিলেন না বা তিনি শুধু বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন বিশ্বের বিশ্বাসী মানুষের সম্পদ। তার সাথে কি আচরণ করেছে আপনারা দেখেছেন। তার এই মামলার ব্যাপারে সঠিক কথাটা বলতে সুখরঞ্জনবালি এসেছিলেন। কিন্তু আইনজীবীর গাড়ির দরজা খুলে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের আদালতে এরকম ঘটনা ঘটেনি।”
“আদালত আমাদের নেতৃবৃন্দের ওপর জুলুম করেছে। বহু কায়দা কানুন করে তাদের মুখ থেকে জোর করে যা নয় তা স্বীকার করানোর চেষ্টা করা হয়েছে।এমনকি রায় বাস্তবায়নের আগেও ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু না তারা ছিলেন স্থির চিত্ত, তারা ছিলেন ঈমানের বলে বলিয়ান, তারা ছিলেন সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এজন্য মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়িয়েছেন কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নাই। তারা আমাদের শিখিয়ে গেছেন যে মর্যাদাবান জাতি সত্যের উপর অবিচল থাকলে ফাঁসি কোনো বিষয় নয়। মৃত্যু একবারই হবে অপমানজনক মৃত্যু নয়, মৃত্যুটা হোক বীরের মত। তাদের মৃত্যু ছিল বীরোচিত মৃত্যু। আল্লাহ তাদের নেক খেদমতগুলো কবুল করে বারাকাহ দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিন। আমরা অনুপ্রাণিত হই তাদের শেষ সময়টুকু পর্যন্ত জাতিকে যা যা দিয়ে গেছেন তার থেকে।”
“বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ মামলার বিষয়ে বৃটেনের উচ্চ আদালত তাদের রায়ে বলেছে এই মামলাগুলো বিচারের নামে প্রহসন; জাস্ট জেনোসাইড অব দ্যা জাস্টিস। বিচারকে গণহত্যা করা হয়েছে। তারা কিলিং অব দ্যা জাস্টিস বলে নাই। কারণ সিঙ্গেল কেস হলে বলত কিলিং কিন্তু এখানে ছিল একাধিক কেস। একারণেই তারা বলেছে ইট ওয়াজ এ জেনোসাইড টু জাস্টিস। ব্রিটিশ আদালত এটাকে জেনোসাইড বললেও বাংলাদেশের তৎকালীন কোর্ট তা বলে নাই। তবে বাংলাদেশের কোর্ট আজ সেটাই বলেছে তাদের রায়ের মাধ্যমে। আমরা আমাদের শহীদ নেতৃবৃন্দ সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক নায়েবে আমির শায়খ আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, সাবেক আমির শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শহীদ কামারুজ্জামান ও শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা, সাবেক নায়েবে আামর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য শহীদ মীর কাসেম আলী, সাবেক নায়েবে আমির সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুস সোবহান, সাবেক কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডল যাদেরকে খুন করা হয়েছে অন্যায় রায়ের মাধ্যেমে তাদেরকে আরেকবার গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। তাদেরকে দুনিয়া থেকে সরানো হয়েছে, কিন্তু আমাদের বুক থেকে সরাতে পারবে না। আমরা তাদেরকে আমাদের কর্মের মাধ্যমে স্মরণ করবো ইনশাআল্লাহ।”
তিনি বলেন, “শত কষ্ট আমাদের বুকে থাকা সত্ত্বেও আমরা দেশকে ভালোবাসি। আমরা প্রতিশোধ নেইনি আপনারা দেখেছেন কিন্তু আমরা ন্যায়বিচার চাই। এ রায়ের মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে এই রায় ছিল ইচ্ছাকৃত; গণহত্যার মাধ্যমে নেতৃত্ব শূন্য করা। একটা দেশ ও দলের নেতৃত্ব শূন্য করার মানেই হচ্ছে জনগণকে অন্ধকারের মাঝে ঠেলে দেওয়া।”
জামায়াত আমির বলেন, “এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সত্যকে চেপে রাখা যায় না। সত্য মেঘের আড়াল ভেদ করে আলোর ঝলক নিয়ে আসে, সে সত্যটাই আজ প্রমাণিত হল।”
তিনি বলেন, “আমরা জাতির কাছে কথা দিচ্ছি মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন সহযোগিতায় যদি এই দেশের সেবা করার সুযোগ আমাদের কাছে আসে, তাহলে আমরা ইনশাআল্লাহ প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব। বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব এবং সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য প্রিয় জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের সবটুকু উজার করে দিব। পাশাপাশি আমরা চাইব আমাদের সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হোক, দুঃশাসনমুক্ত হোক, অপরাধমুক্ত হোক, বৈষম্যমুক্ত হোক, কল্যাণধর্মী সমাজ হোক, মানবিক সমাজ হোক সেই সমাজ গঠনে আমরা আপনাদের সাহচার্য, সমর্থন, সহযোগিতা ও দোয়া আমরা কামনা করি।”
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ব ক এমপ ন আল ল হ আম দ র স পর ব র র আম দ র ক আল ল হ ত র দরব র ইসল ম র র রহম ন খ ন কর হয় ছ ল ন র জন র জন য হ স ইন র জন ত ত দ রক কর ছ ল স ইন স কর ছ ন র র জন জ র কর ত র এই আপন র র উপর এক এক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুর রুটে বাস বন্ধের নেপথ্যে যুবদল নেতার ৫ কোটির চাঁদা!
ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামের একটি পরিবহনের একাধিক বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বাস মালিকদের দাবি চাঁদার পাঁচ কোটি টাকা না পেয়ে স্থানীয় সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম ও তার অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে যাত্রাবাড়ী-শরীয়তপুর রুটে পরিবহনটির যাত্রীসেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এ রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা।
এ ঘটনায় দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি ভুক্তভোগী বাস মালিকদের। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম। আর এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার।
জেলার বাস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে শরীয়তপুর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় নিয়মিত যাত্রীপরিবহন করে আসছে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের দুই শতাধিক বাস। এ রুট ধরে প্রতিনিয়ত ঢাকা ও শরীয়তপুরে যাতায়াত করে অন্তত ৩০ হাজার যাত্রী।
সম্প্রতি এ রুটে চলা পরিবহনগুলোর মালিকদের কাছে পাঁচ কোটি চাকা চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ ওঠে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিমের বিরুদ্ধে। এদিকে তাকে চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও বেশ কয়েকজন শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর থেকেই বাস শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে চাঁদাবাজি বন্ধ ও অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের চালক মাসুদ রানা বলেন, “যাত্রাবাড়ী গেলেই বিএনপির কিছু নেতা আমাদের বাস ভেঙে ফেলে। শ্রমিকদের মারধর করে। সেই ভয়ে পাঁচ দিন ধরে বাস চালাতে পারছি না। আমরা বিষয়টির সমাধান চাই। আমার পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছে।”
মারধরের শিকার হওয়া নয়ন ব্যাপারী নামের এক বাস শ্রমিক বলেন, “যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পর হঠাৎ আমাদের বাসে হামলা চালায় ফাহিমের লোকজন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা বাসের গ্লাস ভেঙে ফেলে। আমাকেও জখম করা হয়েছে। আমরা যাত্রাবাড়ী রুটে বাস চালাতে পারছি না।”
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীরা। সিদ্দিক নামের এক যাত্রী বলেন, “আগে আমরা সরাসরি ঢাকার যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নামতাম। এখন শুনলাম চাঁদার টাকার জন্য সেখানে বাস না গিয়ে ধোলাইপাড় এলাকায় যাবে। আমরা খুবই ঝামেলার মধ্যে পড়েছি। আমরা সমস্যার সমাধান চাই।”
শরীয়তপুর আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ চৌকিদার অভিযোগ করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে যাত্রাবাড়ী রুটে চাঁদাবাজি হয়ে আসছিল, তবে সেটা সহনশীল পর্যায়ে ছিল। সম্প্রতি এক যুবদল নেতা আমাদের মালিক সমিতির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। তাকে টাকা না দেওয়ায় আমাদের বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের মারধর করা হচ্ছে। আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।”
বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার বলেন, “যুবদল নেতা ফাহিম চাঁদার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি প্রতিমাসে আমাদের গাড়ি থেকে সাড়ে সাত লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে। তবে তিনি আরও বড় অংকের টাকা (৫ কোটি) দাবি করছেন। আমরা তার সেই দাবি না মেনে বিএনপির হাইকমান্ডকে জানিয়েছি। এরপর থেকে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আমাদের বাসগুলোতে ভাঙচুর চালিয়েছে। আমরা চাঁদাবাজমুক্ত পরিবহন সেক্টর চাই।”
চাঁদা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম বলেন, “আমাদের গাড়ির রুটপারমিট থাকার পরেও শরীয়তপুরের বাস মালিক সমিতি সেগুলোকে অন্য উপজেলায় যেতে দিচ্ছে না। এখন তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। আমি কারো কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করিনি। আমি চাঁদাবাজি করে থাকলে আমরা বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। অভিযোগ প্রমাণ হলে আমি আমার অপরাধ মাথা পেতে নেব।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের একটি পরিবহন যাত্রাবাড়িতে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। কতিপয় দুষ্কৃতকারী চাঁদাদাবি করেছে এবং বাসে ভাঙচুর করছে। আমরা ঘটনাটি জানার পর ডিএমপির সংশ্লিষ্ট ক্রাইম বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির সাথে যৌথভাবে কাজ করছি।”
ঢাকা/আকাশ/এস