বছর দুয়েক আগে টলিউডে মুক্তি পেয়েছিল জয়া আহসান অভিনীত ‘অর্ধাঙ্গিনী’। মুক্তির পর কৌশিক গাঙ্গুলি পরিচালিত ছবিটি দর্শকের কাছে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়ে নেয়। সিনেমাটির গল্প যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখানে সিক্যুয়েলের সম্ভাবনাও ছিল। এরপর থেকেই মূলত দর্শকের অপেক্ষা। এবার সেই অপেক্ষা ফুরাতে চলেছে। অর্ধাঙ্গিনী’র সিক্যুয়েল নির্মাণের ঘোষণা দিলেন নির্মাতা।

এবার শিরোনাম ‘আজও অর্ধাঙ্গিনী’। মুখ্য চরিত্রে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, জয়া আহসান, কৌশিক সেন থাকছেন। নতুন চরিত্র হিসাবে যোগ দিচ্ছেন ইন্দ্রাশিস রায়। সব ঠিক থাকলে ১৫-১৬ জুন নাগাদ সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে।

বিষয়টি সামাজিকমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশি অভিনেত্রী জয়া আহসানও। সিনেমাটির লুক টেস্টের জন্য সম্প্রতি কলকাতায় গিয়েছিলেন তিনি। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর লুকও। 

ভারতীয় গণমাধ্যমে জয়া আহসান বলেন, ‘‘ভীষণ পরিণত একটা গল্প ছিল ‘অর্ধাঙ্গিনী’। তার সিক্যুয়েলের অংশ হতে পারাটা বেশ আনন্দের। আগের ছবিটা দর্শক আপন করে নিয়েছিলেন। এবার তাদের সেই প্রত্যাশার চেয়ে বাড়তি কিছু ফিরিয়ে দেওয়াই আমাদের চ্যালেঞ্জ।’’

পরিচালক কৌশিক কি প্রথম ছবির সময়েই দ্বিতীয় কিস্তির ভাবনা ভেবেছিলেন-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘পরিচালকরা সবসময়ই পরের অংশ ভেবে রাখেন। একটা গল্প কত দূর যেতে পারে, এটা মাথার মধ্যে থাকে। ‘অর্ধাঙ্গিনী’ সফল না হলে হয়তো সেই ভাবনা বাস্তবে রূপ পেত না। প্রথমটি সফল হওয়ার পরই দ্বিতীয় ছবিটি করার কথা ঠিক করি। তবে অন্তত দু’বছরের একটা বিরতি দরকার ছিল।’’

দর্শকের ভালবাসার মর্যাদা রাখতে পারার বিষয়টি উঠে এল চূর্ণীর কথাতেও, ‘একটা সফল ছবির পরের অংশ সব সময়েই কঠিন। সকলের প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছে।”

এদিকে, জয়া আহসান বর্তমানে তাঁর আসন্ন ঈদুল আজহার সিনেমা ‘তাণ্ডব’ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি কলকাতায় সিনেমাটির ডাবিং করেছেন। এ ছাড়া তাঁর ‘ডিয়ার মা’ ছবির পোস্ট প্রোডাকশন চলছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জয় আহস ন অর ধ ঙ গ ন আহস ন

এছাড়াও পড়ুন:

গলায় ছুরি ধরা ফিলিস্তিনিদের হাতে ব্যান্ডেজ দরকার নেই

২৭ মে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি রাফাহতে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায়। তারা মাসের পর মাস অনাহারে থাকার পর খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু আতঙ্কিত বেসরকারি নিরাপত্তা ঠিকাদারদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। তাল আস-সুলতান ত্রাণকেন্দ্রে বিশ্ব যা দেখেছিল, তা কোনো ট্র্যাজেডি ছিল না। বরং এ ছিল উদ্ঘাটন। অর্থাৎ মানবিক সাহায্য সাম্রাজ্যের চেয়ে মানবতার সেবার জন্য টিকে আছে– এই ভ্রান্ত ধারণার চূড়ান্ত ও সহিংস উন্মোচন।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক মর্যাদা ও নিরপেক্ষতার মডেল হিসেবে প্রচার করা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের নতুন বিতরণ কেন্দ্রটি উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়। কিন্তু এটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। ছিল সাজানো ব্যবস্থা অনুযায়ী এক ধরনের সমাপ্তি, যা ক্ষুধার্তদের পুষ্টি জোগাতে কাজ করে না; বরং তাদের নিয়ন্ত্রণ ও চার দেয়ালে আবদ্ধ করার জন্য তৈরি হয়েছিল।
গাজার ক্ষুধার্ত মানুষ প্রচণ্ড রোদের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে। খাবারের একটি ছোট বাক্স পেতে তারা ধাতব পদার্থবেষ্টিত গলিতে আটকে থাকতে বাধ্য হয়। অবশেষে হতাশা নিয়ে এগিয়ে যায় এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মার্কিন সমর্থিত ঠিকাদার নিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মীরা পদদলিত হওয়া ঠেকাতে ব্যর্থ গুলি চালায়। তৎক্ষণাৎ মার্কিন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয় এবং জনতার ওপর সতর্কীকরণ গুলিবর্ষণ শুরু করে। বহুল প্রচারিত সাহায্য কেন্দ্রটি মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পরই সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়ে।

মানুষকে যা দেওয়া হয়েছিল, তা বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না; মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধার তো দূরের কথা। বিতরণ করা বাক্সগুলোতে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঠেকাতে পর্যাপ্ত ক্যালোরি ছিল। এগুলো পরিকল্পিত নিষ্ঠুরতা, যা মানুষকে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সাজানো ঘটনা, যেখানে তাদের শরীর ধীরে ধীরে নিজেদের গ্রাস করে। এখানে পুষ্টির জন্য কোনো শাকসবজি নেই। রোপণের জন্য কোনো বীজ নেই। পুনর্নির্মাণের জন্য কোনো সরঞ্জাম নেই। শুধু প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, স্থায়ী সংকট বহালের জন্য জনসমাগম বজায় রাখতে তৈরি করা হয়েছিল। এভাবে চিরকাল তাদের ধ্বংসকারীদের করুণার ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়েছে।

বিতরণ কেন্দ্রের ছবিগুলোতে ক্ষুধা, রোগ ও অবিরাম যুদ্ধের কারণে দৃশ্যত ক্লান্ত মানুষদের দেখানো হয়েছে। তারা গবাদি পশুর মতো ধাতব গলিতে আটকে আছে এবং বন্দুকের নলের দিকে তাকিয়ে থাকা অবশিষ্টাংশের জন্য অপেক্ষা করছে, যা গত শতাব্দীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্প থেকে আসা দুর্ভোগ ও মৃত্যুর সুপরিচিত চিত্রগুলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। 
এই সাদৃশ্য আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। গাজার ‘সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রগুলো’ আমাদের সময়ের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প, যা ইউরোপীয় পূর্বসূরিদের মতোই; অবাঞ্ছিত জনগোষ্ঠীকে বেঁচে থাকতে 
সাহায্য করার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ করা, চালিত হতে বাধ্য করা এবং গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করার জন্য সাজানো হয়েছে।

অবশ্যই ফিলিস্তিনিদের ইতোমধ্যে কারামাহ বা মর্যাদা রয়েছে। এটি তাদের নির্মূল হতে অস্বীকৃতি জানানোর মধ্যেই টিকে আছে; তাদের মানুষ হিসেবে লড়াই করা ও তাদের জেদের মধ্যেই এটি বেঁচে আছে। যতক্ষণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সহজ সত্যটি বুঝতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েল এবং তার মিত্ররা আধিপত্যের হাতিয়ারকে ত্রাণ হিসেবে ব্যবহার করতে থাকবে। আর আমরা বছরের পর বছর রাফাহতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকব। সেখানে যা ঘটেছে তা সহায়তা প্রদানে ব্যর্থতা ছিল না। এটি ছিল এমন একটি ব্যবস্থার সাফল্য, যা অমানবিক করে তোলা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং মুছে ফেলার জন্য তৈরি করার নকশা। যারা ফিলিস্তিনিদের গলায় ছুরি ধরেছে, তাদের হাতে আর ব্যান্ডেজের প্রয়োজন নেই।

আহমদ ইবসাইস: যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রথম প্রজন্মের ফিলিস্তিনি; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ