‘নীল হেলমেট’ পরে বিশ্বশান্তির মঞ্চে বাংলাদেশের পথচলা শুরু ১৯৮৮ সালে। তখন জাতিসংঘের ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে ১৫ জন সদস্য পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ১০ দেশে শান্তির পতাকা হাতে নিয়োজিত আছেন ৪৪৪ নারীসহ ৫ হাজার ৮১৮ শান্তিরক্ষী।

বিশ্বশান্তি রক্ষার এ যাত্রায় ৩৫ বছরে জীবন দিয়েছেন ১৬৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫৭ জন। পেশাদারত্বের মাধ্যমে শান্তি রক্ষা মিশনে সৈন্য প্রেরণকারী শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।

আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এদিন বিশ্বজুড়ে সম্মান জানানো হবে সেসব বীরকে, যাঁরা শান্তির পতাকা হাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করছে।

শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তবে মিশনের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। সেটার সঙ্গে বাংলাদেশকে নতুনভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে।বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.

) আ ন ম মুনীরুজ্জামান

ঢাকায় আজ সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। পরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর দুজন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।

সময়ের পরিক্রমায় শান্তি রক্ষার ইতিহাসে জাতিসংঘের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে দেশের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক সদস্যরা। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্যানুযায়ী, তিন দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশ ও স্থানে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। এ দীর্ঘযাত্রায় সশস্ত্র বাহিনীর অন্তত ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন বলে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এদিন বিশ্বজুড়ে সম্মান জানানো হবে সেসব বীরকে, যাঁরা শান্তির পতাকা হাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন।শান্তির বার্তা নিয়ে ১০ দেশে বাংলাদেশ

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সংঘাতপূর্ণ বা গৃহযুদ্ধের শিকার, গণহত্যা বা গণনির্বাসনের ঝুঁকিতে থাকা দেশ বা অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশ বা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনা, পুনর্গঠন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের প্রয়োজন, মানবিক সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে।

বর্তমানে ১০টি দেশ বা স্থানে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দায়িত্ব পালন করছেন। এগুলো হলো সুদান ও দক্ষিণ সুদানের মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চল আবেই, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র (সিএআর), সাইপ্রাস, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো), লেবানন, দক্ষিণ সুদান, উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার বিরোধপূর্ণ অঞ্চল পশ্চিম সাহারা, ইয়েমেন, লিবিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর।

শান্তিরক্ষীরা মিশনগুলোতে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা, নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহায়তায় কাজ করে। অবস্থানভেদে দুই পক্ষের মধ্যে অস্ত্রবিরতির শর্ত মানা হচ্ছে কি না, তা নজরে রাখা, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হলে রিপোর্ট করা, সাবেক যোদ্ধাদের অস্ত্র জমা নেওয়া, তাঁদের সমাজে পুনঃস্থাপন করা এবং সমাজে শান্তি ও আস্থা ফিরিয়ে আনায় কাজ করে। কখনো কখনো স্থানীয় পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তায় কাজ করে। অনেক ক্ষেত্রে স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তা ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণেও অংশগ্রহণ করেন শান্তিরক্ষীরা। এসব কাজ করতে গিয়ে তাঁদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্যেও পড়তে হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) তথ্যানুযায়ী, তিন দশকের বেশি সময়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪৩টি দেশ ও স্থানে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন। এ দীর্ঘযাত্রায় সশস্ত্র বাহিনীর অন্তত ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন বলে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ

১৯৮৯ সালে নামিবিয়া মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুলিশ। এ পর্যন্ত বিশ্বের ২৪টি দেশের ২৬টি মিশনে পুলিশের ২১ হাজার ৮১৫ জন শান্তিরক্ষী সদস্য অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে ৩টি দেশে ১৯৯ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত ২৪ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে জীবন উৎসর্গ করেছেন।

শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কথা হয় মিশনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব দেশে আমরা কাজ করেছি, সেখাকার স্থানীয় জনসাধারণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় আস্থা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সুদান, আইভরিকোস্ট, পূর্ব তিমুর, বসনিয়া, কসোভো, লাইবেরিয়া, হাইতি, মালিসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করতে পেরেছি। এখনো কাজ করছি।’

সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত ২৪ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে জীবন উৎসর্গ করেছেন।বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নারী

আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের (এএফডি) এক হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৭১৮ জন নারী শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর ১ হাজার ৫১৩ জন, নৌবাহিনীর ৫৪ জন এবং বিমান বাহিনীর ১৫১ জন।

এএফডি বলছে, জাতিসংঘ ২০২৫ সালের মধ্যে শান্তি রক্ষা মিশনে ২২ শতাংশ নারী স্টাফ অফিসার ও মিলিটারি অবজারভার নিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ১৮ শতাংশ নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে এবং এই হার আরও বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

যেসব দেশে আমরা কাজ করেছি, সেখাকার স্থানীয় জনসাধারণ এবং প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় আস্থা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সুদান, আইভরিকোস্ট, পূর্ব তিমুর, বসনিয়া, কসোভো, লাইবেরিয়া, হাইতি, মালিসহ বিভিন্ন দেশে কাজ করতে পেরেছি। এখনো কাজ করছি।পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) মো. রেজাউল করিম

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের নারী পুলিশ সদস্যরা শান্তিরক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে পুলিশের ৭১ জন নারী সদস্য বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত আছেন। এই নারীরা ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকায় দায়িত্ব পালন করছেন।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের দক্ষতা ও কর্মক্ষমতার ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তবে মিশনের ধরন পাল্টে যাচ্ছে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। সেটার সঙ্গে বাংলাদেশকে নতুনভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তিনি বলেন, যেসব অঞ্চলে শান্তিরক্ষী মিশন রয়েছে, সেখানকার ভাষা জানার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ জন্য প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়ে নজর দিতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল দ শ র শ ন ত রক ষ র জ ত স ঘ শ ন ত রক ষ প ল শ সদস য ন কর ছ ন পর স থ ত ক জ কর গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের সঙ্গে কোন বিরোধের কারণে প্রশাসন থেকে সরে গেলেন ইলন মাস্ক

বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এই বিভাগে তাঁর দায়িত্ব ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি খরচ কমানো। বিশেষ সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে তার মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে ছিল।

মাস্কের এ প্রস্থান এমন এক সময়ে ঘটল, যখন কি না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর প্রথম বড় ধরনের মতবিরোধের কথা প্রকাশ্যে এসেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচিত কর ও ব্যয়–সংক্রান্ত বাজেট বিল নিয়ে এ মতবিরোধ তৈরি হয়। এ বিলটি গত ২২ মে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়।

গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সময়কাল শেষ হওয়ার পথে।

স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক লিখেছেন, ‘অপ্রয়োজনীয় সরকারি খরচ কমানোর সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’

মাস্ককে সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে হোয়াইট হাউসে থাকাকালে মাস্ক নানা কর্মকাণ্ডের কারণে বেশ বিতর্কিত হয়েছেন। বিশেষ করে বিদেশে সহায়তা পাঠানোর কাজে নিবেদিত মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডিকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছে।

মাস্ক সরকারি দক্ষতা বিভাগে কত দিন ছিলেন

ট্রাম্প প্রশাসনে ‘বিশেষ সরকারি কর্মকর্তা’ হিসেবে মাস্ক সীমিত সময়ের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। সে অনুযায়ী, তাঁকে ৩৬৫ দিন সময়কালের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩০ দিন কাজ করার সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া আর্থিক সুবিধা পাওয়ার আশায় সরকারি ক্ষমতা ব্যবহার থেকে তাঁকে বিরত থাকতে বলা হয়।

মাস্কের মেয়াদ মোটামুটি চার মাসের কিছু বেশি সময় স্থায়ী হয়েছে। আইনত নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমা শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগেই তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন।

মাস্ককে সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে হোয়াইট হাউসে থাকাকালীন মাস্ক অনেক বিতর্কিত হয়েছেন। বিশেষ করে বিদেশে সহায়তা পাঠানোর কাজে নিবেদিত মার্কিন সংস্থা ইউএসএআইডিকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছে।

এপ্রিলের শেষ দিকে মাস্ক ঘোষণা করেন, তিনি শিগগিরই আবার নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে মনোযোগ দেবেন এবং মে মাস থেকে সরকারি দক্ষতা বিভাগের সময় দেওয়া কমিয়ে ফেলবেন।

অবশ্য মাস্ক এটাও বলেছিলেন, ‘যত দিন প্রেসিডেন্ট চাইবেন এবং যত দিন প্রয়োজন হবে, আমি প্রতি সপ্তাহে এক-দুদিন সরকারি কাজের জন্য সময় দেব।’

মাস্ক কেন ট্রাম্পের কর ও বাজেট বিলের বিরোধিতা করছেন

সিবিএস-এর সানডে মর্নিং অনুষ্ঠানে ইলন মাস্কের দেওয়া সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও ক্লিপ গত মঙ্গলবার প্রকাশ হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, তিনি এত বড় ব্যয় বিল দেখে হতাশ হয়েছেন।

মাস্ক আরও বলেছেন, ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ নামে পরিচিত এ বিলটি বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দিয়েছে এবং সরকারি খরচ কমানোর চেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত ও দুর্বল করেছে।

মাস্ক বলেন, ‘আমার মনে হয়, একটা বিল বড় হতে পারে বা সুন্দর হতে পারে। কিন্তু দুটি জিনিস একসঙ্গে হতে পারে কি না, তা আমার জানা নেই। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।’

গত এপ্রিল মাসে মাস্ক আশা প্রকাশ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে এক সময় ‘শূন্য শুল্কের’ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তবে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হলে আমদানি করা ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হবে।

গত বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দৃঢ়ভাবে বিলটির পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘এ বিল নিয়ে আমরা আলোচনা করে যাব। এর কিছু নির্দিষ্ট দিক নিয়ে আমি খুশি নই, তবে কিছু দিক নিয়ে আমি পুলকিত। ব্যাপারটা এমনই চলে।’

এক হাজারের বেশি পৃষ্ঠার বাজেট বিলটিতে ট্রাম্প প্রশাসনের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নীতিমালার লক্ষ্যগুলো উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বিলে ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চালু হওয়া কর ছাড়ের মেয়াদ আরও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি অভিবাসীদের গণহারে বিতাড়িত করতে ট্রাম্প প্রস্তাবিত কর্মসূচির জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ এবং যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদারে তহবিল বৃদ্ধির কথাও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই কর ও বাজেট বিল নিয়ে মতবিরোধই ছিল হোয়াইট হাউসে মাস্কের সময়কালের অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ।

মাস্ক আর কী কী বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়েছেন

হোয়াইট হাউসে থাকার সময় ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন মাস্ক। বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রধান বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকে তিনি একবার ‘মূর্খ’ বলেছিলেন। ট্রাম্প বিশ্বের নানা দেশের ওপর ব্যাপক হারে বাণিজ্য শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মাস্ক নাভারোকে নিয়ে আক্রমণাত্মক হন।

‘সরকারি দক্ষতা বিভাগের শক্তির যে জায়গাটি ছিল তা হলো—বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি ট্রাম্পের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। দক্ষতা বিভাগকে হয়তো কিছু সময় সংগ্রাম করতে হবে, কিন্তু মাস্ক না থাকায় এবং সংস্থার বিরুদ্ধে চলমান মামলার কারণে এটি বেশি দিন টিকতে পারবে না।’(কোলিন গ্র্যাফি, ক্যালিফোর্নিয়ার পেপারডাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক)

মাস্ক প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি মুক্ত বাণিজ্য এবং কম শুল্ক ব্যবস্থার পাশাপাশি স্থিতিশীল শুল্ক কাঠামোর পক্ষে।

গত এপ্রিলে মাস্ক আশা প্রকাশ করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে এক সময় ‘শূন্য শুল্কের’ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তবে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হলে আমদানি করা ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হবে।

দক্ষতা বিভাগের ভবিষ্যৎ কী

চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সরকারি দক্ষতা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ইলন মাস্ক পদত্যাগ করার পর এখন পর্যন্ত তাঁর জায়গায় কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে এ সংস্থার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

মাস্ককে সরকারি খরচ কমানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল—সরকারি কর্মীর সংখ্যা কমানো, চুক্তি বাতিল করা এবং কিছু সংস্থা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া।

ফেব্রুয়ারিতে মাস্ক ও ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁরা সরকারের বৈচিত্র্য ও জলবায়ুপ্রকল্প সংক্রান্ত কোটি কোটি ডলারের জালিয়াতি উন্মোচন করেছেন। তবে পরে দেখা যায়, এসব দাবির বেশির ভাগই মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর ছিল।

গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, ‘সময় যত যাবে, সরকারি দক্ষতা বিভাগের কার্যক্রম ততই শক্তিশালী হবে। আর এটা সরকারি ব্যবস্থার স্বাভাবিক অংশ হয়ে উঠবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক

সম্পর্কিত নিবন্ধ