আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ফ্রিজ একটি অপরিহার্য যন্ত্র। হঠাৎ ফ্রিজ কাজ করা বন্ধ করে দিলে বা ঠিকমতো ঠান্ডা না হলে আমাদের বিপদে পড়তে হয়। অনেক সময় ছোটখাটো কিছু সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করে নিতে পারেন, যার জন্য টেকনিশিয়ান ডাকার প্রয়োজন হয় না।

 

ফ্রিজ ঠান্ডা না হলে

ফ্রিজ ঠান্ডা না হওয়ার সমস্যাটি সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা। বেশ কয়েকটি কারণে এমন হতে পারে। প্রথমেই নিশ্চিত হোন যে ফ্রিজটি সঠিকভাবে বিদ্যুৎ-সংযোগ আছে কি না। পাওয়ার কর্ড চেক করুন। ফ্রিজের পাওয়ার কর্ডটি সকেটে আলগা হয়ে আছে কি না, বা এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না। যদি কর্ডে কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে তা মেরামত বা পরিবর্তন করুন। সার্কিট ব্রেকার চেক করতে পারেন। আপনার বাড়ির সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজ বক্স পরীক্ষা করুন। যদি কোনো সার্কিট নষ্ট থাকে, তাহলে তা ঠিক করুন। যদি ফিউজ কেটে যায়, তা পরিবর্তন করুন। একই সার্কিটে অতিরিক্ত ডিভাইস ব্যবহার করবেন না। এ ছাড়া সকেট পরীক্ষা করুন। অন্য কোনো যন্ত্র সকেটে লাগিয়ে দেখুন সকেটে বিদ্যুৎ আসছে কি না। যদি না আসে, তা সকেটে সমস্যা থাকতে পারে।

অনেক সময় ফ্রিজের থার্মোস্ট্যাট সেটিং ভুল থাকার কারণে ঠান্ডা না হওয়ার সমস্যা হয়। থার্মোস্ট্যাট অ্যাডজাস্ট করে নিন।

ফ্রিজ থেকে অস্বাভাবিক শব্দ আসা

ফ্রিজ থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক শব্দ আসতে পারে। কম্প্রেসরের শব্দ হয় অনেক সময়। কম্প্রেসর হলো ফ্রিজের মূল অংশ। এই যন্ত্র রেফ্রিজারেটরকে পাম্প করে। কম্প্রেসর থেকে ঘর্ঘর শব্দ আসতে পারে। কম্প্রেসরের চারপাশে কোনো কিছু আটকে আছে কি না, তা দেখুন। ফ্রিজটি দেয়াল থেকে যথেষ্ট দূরে রাখা উচিত, যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে। কম্প্রেসরের ফ্যান ব্লেড ময়লা জমে আটকে গেলে শব্দ করতে পারে। এসব পরিষ্কার করুন। যদি শব্দ খুব বেশি হয় ও কম্প্রেসর খুব গরম হয়, তাহলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তখন পেশাদার প্রকৌশলীর সহযোগিতা নিন।

এ ছাড়া ফ্রিজের ভেতরে ও কম্প্রেসরের কাছে দুটি ফ্যান থাকে। এসব ফ্যানকে ইভাপোরেটর ফ্যান ও কনডেনসর ফ্যান বলে। এখান থেকেও শব্দ হতে পারে। যদি ফ্রিজের ভেতর থেকে শব্দ আসে, তাহলে ইভাপোরেটর ফ্যানে সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় বরফ জমে ফ্যান ব্লেড আটকে যায়। ফ্রিজটি সম্পূর্ণভাবে ডিফ্রস্ট করে দেখুন।

ডিফ্রস্ট টাইমারের শব্দ

কিছু ফ্রিজে অটো ডিফ্রস্ট টাইমার থেকে টিকটিক শব্দ আসতে পারে। এটি স্বাভাবিক শব্দ।

 

ফ্রিজের ভেতর বরফ জমা

ফ্রিজের ভেতর বা ফ্রিজারে অতিরিক্ত বরফ জমা একটি সাধারণ সমস্যা। দরজা ঠিকমতো বন্ধ না হলে এই সমস্যা দেখা যায়। ফ্রিজের দরজা যদি ঠিকমতো বন্ধ না হয়, তাহলে বাইরের গরম বাতাস ভেতরে প্রবেশ করে ও বরফ জমায়। এ জন্য ডোর গ্যাসকেট পরীক্ষা করুন। ফ্রিজের দরজার চারপাশে থাকা রাবারের সিল (গ্যাসকেট) পরীক্ষা করুন। যদি এটি ক্ষতিগ্রস্ত, আলগা বা নোংরা হলে বাতাস লিকেজ হতে পারে। গ্যাসকেট পরিষ্কার করুন বা এটি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে।

ফ্রিজ থেকে পানি পড়া বা জমা হওয়া

ফ্রিজের ভেতরে বা বাইরে পানি জমা হওয়া বিভিন্ন সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। ড্রেন পাইপ ব্লক হলে এমন সমস্যা দেখা যায়। ফ্রিজের ডিফ্রস্ট চক্রের সময় গলে যাওয়া বরফ একটি ড্রেন পাইপের মাধ্যমে বাইরে চলে যায়। তা বন্ধ হয়ে গেলে পানি জমা হতে পারে। এ জন্য নিয়মিত ড্রেন পাইপ পরিষ্কার করুন। ফ্রিজের ড্রেন পাইপ সাধারণত ফ্রিজারের নিচের দিকে বা পেছনের প্যানেলের নিচে থাকে। এটি ময়লা, খাবারের কণা বা বরফের কারণে ব্লক হতে পারে। একটি দীর্ঘ তার বা ড্রেন ক্লিনার সলিউশন ব্যবহার করে পরিষ্কার করতে পারেন। অনেক সময় সামান্য গরম পানি দিয়েও এটি পরিষ্কার করা যায়। ড্রেন প্যান ওভারফ্লো হলে পানি পড়তে পারে। ফ্রিজের নিচে একটি ড্রেন প্যান থাকে যেখানে ডিফ্রস্টের পানি জমা হয়। এটি ভরে গেলে পানি উপচে পড়তে পারে। ড্রেন প্যান পরীক্ষা করুন নিয়মিত। যদি তা পানি দিয়ে ভরে যায়, তা এটি খালি করে পরিষ্কার করুন। কোনো ফাটল আছে কি না, তা পরীক্ষা করুন।

 

ফ্রিজের আলো কাজ করছে না

ফ্রিজের দরজা খুললে আলো না জ্বলা ছোট সমস্যা হলেও বেশ বিরক্তিকর হতে পারে। ফ্রিজের বাল্বটি নষ্ট হতে পারে। তখন বাল্ব পরিবর্তন করুন। ডোর সুইচে সমস্যা হলে আলো কাজ করে না। ফ্রিজের আলো ডোর সুইচের মাধ্যমে কাজ করে, যা দরজা বন্ধ হলে আলো বন্ধ করে দেয়। লাইট না জ্বললে ডোর সুইচ পরীক্ষা করুন।

ফ্রিজ থেকে গন্ধ আসা

ফ্রিজ থেকে উৎকট গন্ধ বের হওয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা। ফ্রিজের ভেতরে পচা খাবার বা খাবার পড়ে থাকলে গন্ধ হতে পারে। এ জন্য ফ্রিজের ভেতরে থাকা সব খাবার সরিয়ে ফেলুন। প্রতিটি তাক, ড্রয়ার ও ভেতরের দেয়াল ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। বেকিং সোডা বা হালকা সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। মেয়াদোত্তীর্ণ বা পচে যাওয়া খাবার ফেলে দিন। ড্রেন প্যান বা ড্রেন লাইনে ব্যাকটেরিয়া জন্মালে বা নোংরা জমে গেলে গন্ধ তৈরি হতে পারে। এসব নিয়মিত ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। ফ্রিজের ভেতরে বাটিতে বেকিং সোডা বা অ্যাকটিভেটেড কার্বন রাখুন। এসব দুর্গন্ধ শোষণ করে নেবে। কফি বিন বা ভ্যানিলা এক্সট্র্যাক্টও ব্যবহার করতে পারেন।

 

ফ্রিজ চালু না হলে

ফ্রিজ পুরোপুরি চালু না-ও হতে পারে। পাওয়ার সাপ্লাইতে সমস্যা হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পাওয়ার কর্ডটি ওয়াল সকেটে সঠিকভাবে লাগানো আছে কি না, তা পরীক্ষা করুন। যদি আলগা থাকে, তা শক্ত করে লাগান। অন্য কোনো যন্ত্র সকেটে লাগিয়ে দেখুন সকেটে বিদ্যুৎ আসছে কি না। এ ছাড়া কম্প্রেসরের একটি সুরক্ষা ডিভাইস থাকে, যাকে ওভারলোড প্রোটেক্টর বলে। কম্প্রেসর অতিরিক্ত গরম হলে তা ফ্রিজের কাজ বন্ধ করে দেয়। তখন ফ্রিজটি ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত আনপ্লাগ করে রাখুন। এতে কম্প্রেসর ও ওভারলোড প্রোটেক্টর ঠান্ডা হলে ফ্রিজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিসেট হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ফ রস ট ন কর ন পর ক ষ ক জ কর ফ র জট সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টা শুল্ক কার্যকরে নতুন সময়সূচি ঘোষণা ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত নতুন শুল্কহার কার্যকর হওয়ার সময়সূচিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৭ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হবে।

এর আগে ট্রাম্প ১ আগস্টের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। তখন তিনি বলে দিয়েছিলেন, এ সময়ের মধ্যে চুক্তিতে না পৌঁছালে চড়া শুল্ক আরোপ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন নির্বাহী আদেশে ৭০টির বেশি দেশের ওপর নতুন পাল্টা শুল্কহার ঘোষণা করেছেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেগুলো আগামী সাত দিনের মধ্যে কার্যকর হবে।

যেসব পণ্য ৭ আগস্টের মধ্যে জাহাজে তোলা হবে বা বর্তমানে যাত্রাপথে রয়েছে এবং সেগুলো যদি ৫ অক্টোবরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে যায়, তবে সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।

অবশ্য কানাডার ওপর যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক ১ আগস্ট অর্থাৎ আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে।

আরও পড়ুনকোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগে

উত্তর আমেরিকার এই দুই প্রতিবেশী দেশ একে অপরের অন্যতম বড় বাণিজ্য সহযোগী হলেও ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তিকর দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।

কানাডা যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে। ধাতব পদার্থ ও কাঠের পাশাপাশি কানাডা বিপুল পরিমাণে তেল, গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, খাদ্যপণ্য এবং ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যারা বাণিজ্য চুক্তি করেনি, তাদের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে: ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগে আর কোনো চুক্তির সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ