গাজীপুরের কালীগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রমী এক চাকরি মেলা। স্কুল বহির্ভূত কিশোরী ও তরুণীদের পেশাগত ও স্থানান্তরযোগ্য দক্ষতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাই এ মেলার মূল উদ্দেশ্য।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিনব্যাপী কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাদার্ত্তী গ্রামের ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ মেলায় প্রায় ২ শতাধিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী অংশগ্রহণ করেন।

ইএসডিও আয়োজিত এ চাকরি মেলার আর্থিক সহায়তায় করেন ইউনিসেফ ও কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইএসডিও’র গাজীপুর শাখার সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক এএসএম রাজিউল ইসলামসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী এবং ইএসডিও’র কর্মীবৃন্দ।

জানা গেছে, চাকরি মেলায় অংশগ্রহণকারী নারীরা ইএসডিও এর বিকল্প শিক্ষা ও দক্ষতা কার্যক্রমের আওতায় বিউটি কেয়ার (লেভেল ২), কম্পিউটার অপারেশন (লেভেল ৩) এবং সুইং অপারেশন ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন।

তিনটি ট্রেড্রে প্রশিক্ষিত ১০৭ নারীকে গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার ১১টি প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদান করা হয়। এছাড়াও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী নারীদের জন্য ঋণ ও সহযোগিতা প্রদান করে। প্রশিক্ষিত নারীদের ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক সহায়তা প্রদান করা হয়। যাতে তারা নিজস্ব উদ্যোক্তা উদ্যোগ শুরু করতে পারেন।

নাদিরা আক্তার (২৫) দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের এক তরুণী, সুইং অপারেশন ট্রেডে প্রশিক্ষণ শেষে নরসিংদীর একটি গার্মেন্টসে চাকরি পেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি আগে কখনো ভাবিনি গার্মেন্টসে স্থায়ী চাকরি করতে পারব। ইএসডিও’র প্রশিক্ষণ আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। এখন আমি পরিবারের খরচ যোগাতে সাহায্য করতে পারবো।”

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ঘোনাপাড়া গ্রামের সানজিদা সুলতানা কম্পিউটার অপারেশন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি স্কুল শেষ করতে পারিনি। কিন্তু এখন আমি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি। নিজে উপার্জন করতে পারব ভেবে খুব ভালো লাগছে।”

বিউটি কেয়ারে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্থানীয় একটি পার্লারে কাজ শুরু করেছেন সামান্তা আক্তার বৃষ্টি। তিনি বলেন, “আগে ঘরের কাজেই দিন চলে যেত। এখন আমি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করতে পারব। এখন থেকে নিজেকে একজন পেশাজীবী ভাবতে পারাটা বড় পাওয়া।”

ইএসডিও’র গাজীপুর শাখার সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক এএসএম রাজিউল ইসলাম বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি নারী যেন তার দক্ষতা অনুযায়ী সমাজে নিজস্ব জায়গা তৈরি করতে পারে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে তারা শুধু চাকরি নয়, আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা ও নতুন জীবন খুঁজে পাচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরো বড় পরিসরে নারী ক্ষমতায়নের কার্যক্রম চালু করা হবে।” 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ বলেন, “এ চাকরি মেলা শুধু কর্মসংস্থানের সুযোগই তৈরি করেনি, বরং নারীদের জীবনে নতুন আশার আলোও জ্বালিয়েছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন এবং সরাসরি চাকরিতে সংযুক্তি- এই উদ্যোগকে একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ উদ্যোগ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও অনুকরণীয় হতে পারে।”

ঢাকা/রফিক/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া: আবদুল আউয়াল মিন্টু

এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ বুধবার ফেনীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।

আজ দুপুরে ফেনী শহরের একটি মিলনায়তনে ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন মিন্টু। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করতে চাই, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। দেশে এখন যে অবস্থা ফেব্রুয়ারি আগেই নির্বাচন হতে পারে। হয়তো জানুয়ারিতেও হয়ে যেতে পারে। কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটা ডেট পেন্ডিং আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন হলে তার অধীনে ৯০ দিনে নির্বাচন হবে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’

আবদুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, দেশে যদি এক যুগ, দুই যুগ ধরে নির্বাচিত সরকার না থাকে, তবে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জানমালের উন্নয়ন হবে না। একটি দেশের সরকার যদি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকে তাহলে তারা কখনো ভালো কাজ করবে না।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে আমরা নির্বাচন চেয়ে আসছি। ১৯ বছর ধরে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন–সংগ্রাম করে যাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেটিতে আস্থা রাখতে চাই। আমরা চাচ্ছি, দ্রুত নির্বাচনটি হোক।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনে ফেনীর অতীত ইতিহাস সবাই জানে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি জয়লাভ করবে। আমাদের দলের নেত্রীও (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন।’

পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ফেনীর মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ রেহানা আক্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ