ফরিদপুরে চালক ফারুক তালুকদারকে হত্যা করে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলায় চারজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (দ্বিতীয় আদালত) অশোক কুমার দত্ত এ রায় ঘোষণা করেন।

মামলার আরেকটি ধারায় প্রত্যেক আসামিকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী দুই দণ্ড একসঙ্গে কার্যকর হবে।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন রাজবাড়ী সদরের ব্র্যাকপাড়া মহল্লার আনিছ মল্লিক (২৯), ঢেকিগাড়িয়া গ্রামের সহিদ শেখ (২৯), বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের শাহজাহান শেখ (৪৭) এবং বারইপাড়া গ্রামের শামীম ওরফে ভাগনে শামীম (৩১)। রায় ঘোষণার সময় আনিছ মল্লিক ও সহিদ শেখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি দুজন পলাতক।

আসামি আনিছ মল্লিক ও সহিদ শেখকে রায় ঘোষণার পর পুলিশি পাহারায় জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তাঁরা যেদিন গ্রেপ্তার হবেন বা আত্মসমর্পণ করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের সাজার মেয়াদ গণনা শুরু হবে। তবে তাঁরা আগে যদি কোনো সময় কারাগারে থাকেন, সেটি সাজার মেয়াদ থেকে বাদ যাবে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ মার্চ রাজবাড়ী সদরের গোপ্ত মানিক মহল্লার বাসিন্দা ফারুক তালুকদার (৩৬) ইজিবাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। সেদিন রাতে ফরিদপুর সদরের ফতেপুর গ্রামের শ্মশানঘাট এলাকা থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন স্বজনেরা মরদেহটি ফারুকের বলে শনাক্ত করেন। ওই দিন নিহত ব্যক্তির ভাই মো.

হান্নান তালুকদার ফরিদপুর।

কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত কৌঁসুলি মো. রকিবুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ইজিবাইকচালককে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।

এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।

আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।

সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ