ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করছে জামায়াত-শিবির: ছাত্র ইউনিয়ন
Published: 30th, May 2025 GMT
জামায়াত-শিবির তাদের পুরোনো কৌশলে ফিরে গেছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। বামপন্থী সংগঠনটি বলেছে, জামায়াত-শিবির ধর্মীয় উগ্রতা, নারীবিদ্বেষ, সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীলদের ওপর হামলা, অনলাইনে ‘নাস্তিক’, ‘শাহবাগী’ ট্যাগ দিয়ে চরিত্রহনন এবং বট-মবভিত্তিক আক্রমণের মাধ্যমে গণ-আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের প্রান্তিকীকরণ করার চেষ্টা করছে। সারা দেশে তারা পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস কায়েম করে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করছে।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি তামজিদ হায়দার চঞ্চল ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেন। জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায় প্রত্যাখ্যান এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে এই বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনটি।
ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়, একাত্তরের চেতনায় গড়ে ওঠা গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে জামায়াত–শিবির একটি বহুত্ববাদবিরোধী, নারীবিদ্বেষী, ধর্মীয় একনায়কত্ব কায়েমে লিপ্ত হয়েছে। জামায়াত-শিবির এখন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির শূন্যস্থান পূরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে নতুন করে সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে। ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে এই নতুন ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রাজপথেই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিদায়ঘণ্টা বাজাবে।
ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবিরের হামলায় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ মে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গেলে তথাকথিত ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’ ব্যানারের আড়ালে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতে নৃশংস হামলা চালায়। চট্টগ্রামের এই হামলায় ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হন, যাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
চট্টগ্রামে হামলার সময় নারী কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত করা হয়েছে অভিযোগ করে ছাত্র ইউনিয়ন বলেছে, সেখানে পুরুষ নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় মারধর করা হয়। এ ছাড়া ২৯ মে মৌলভীবাজারে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন ছাত্রফ্রন্টের এক নেতাকে হেনস্তা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচি চলাকালে ক্যাম্পাসের ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক সহাবস্থানের সংস্কৃতি ভেঙে দিয়ে ছাত্রশিবির বারবার উসকানিমূলক তৎপরতা চালিয়েছে।
এ টি এম আজহারের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা বিবৃতিতে বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়কে অস্বীকার করার একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপিত হলো। পরদিনই শাহবাগে জামায়াত ইসলামীর নেতা–কর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নায়কসুলভ প্রত্যাবর্তন উপহার দিয়েছেন। এই ঘটনা কেবল যুদ্ধাপরাধকে অস্বীকার করার প্রচেষ্টাই নয়, বরং এটি সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের উত্থানের জোরালো ইঙ্গিত দেয়। শাহবাগ, যেখানে একসময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের দাবি উঠেছিল, সেখানেই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শোনা গেল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র জ ট শ হব গ
এছাড়াও পড়ুন:
মে মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮ মৃত্যু, ৬ জনই নিহত বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে
মে মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় আটজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে এক কিশোরসহ ছয়জন প্রাণ হারান। পাশাপাশি কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে এক কিশোর আর দলটির সঙ্গে সংঘর্ষে জামায়াতে ইসলামীর একজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৪টি ঘটনায় অন্তত ৩৫১ জন আহত হন।
মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মে মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ শনিবার মানবাধিকার সংগঠনটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন দিয়ে থাকে সংগঠনটি।
এমএসএফ বলছে, চলতি মাসে রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের ওপর দুষ্কৃতকারীদের হামলার ২০টি ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চারজন বিএনপি এবং একজন আওয়ামী লীগের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের দুজন কর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে প্রাণ হারান।
নির্যাতনের শিকার ৩৬৮ নারী ও শিশু
মে মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৩৬৮টি ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে এমএসএফ। সংগঠনটি বলছে, এই সংখ্যা গত মাসের তুলনায় ছয়টি বেশি। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৯টি। এর মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণ ১৬টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি। ছয়জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এ মাসে ২১ জন কিশোরীসহ মোট ৪২ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন পাঁচজন কিশোরী ও দুজন নারী। এ ছাড়া দুই শিশু ও দুই কিশোরী নিখোঁজ রয়েছে। মে মাসে এক শিশু, পাঁচ কিশোরী ও ১০ জন নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুসহ মোট ৮৬ জন শিশু, কিশোরী ও নারী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ শিশু ও কিশোরী রয়েছে।
গণমাধ্যম সূত্রে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে এমএসএফ বলছে, প্রতিশোধ, পারিবারিক বিরোধ, যৌতুক, প্রেমঘটিত, হতাশা ও অভিমান ইত্যাদি কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার তিনটি ঘটনা সমাজপতিরা আপস করেছেন, যা প্রচলিত আইনের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।
গণপিটুনির ৩৪টি ঘটনা
এমএসএফ জানায়, মে মাসে অন্তত ৩৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সাতজন নিহত ও ৩৮ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। গণপিটুনির শিকার ৩০ জনকে আহত অবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। ডাকাতির অভিযোগে দুজন, ছিনতাইকারী সন্দেহে একজন আর চুরির সন্দেহে চারজনকে হত্যা করা হয়।
মানবাধিকার সংগঠনটি আরও জানায়, মে মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমের একটি ঘটনা ঘটেছে। কক্সবাজারের টেকনাফে কোস্টগার্ডের সদস্যদের গুলিতে মোহাম্মদ তাহের নামে এক জেলের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় আটক করা হয় তিন জেলেকে। এ ছাড়া মে মাসে দুটি ঘটনায় পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে দুজন মারা যান।