জামায়াত-শিবির তাদের পুরোনো কৌশলে ফিরে গেছে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। বামপন্থী সংগঠনটি বলেছে, জামায়াত-শিবির ধর্মীয় উগ্রতা, নারীবিদ্বেষ, সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীলদের ওপর হামলা, অনলাইনে ‘নাস্তিক’, ‘শাহবাগী’ ট্যাগ দিয়ে চরিত্রহনন এবং বট-মবভিত্তিক আক্রমণের মাধ্যমে গণ-আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রদের প্রান্তিকীকরণ করার চেষ্টা করছে। সারা দেশে তারা পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস কায়েম করে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করছে।

আজ শুক্রবার বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি তামজিদ হায়দার চঞ্চল ও সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেন। জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের রায় প্রত্যাখ্যান এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে এই বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনটি।

ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়, একাত্তরের চেতনায় গড়ে ওঠা গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে জামায়াত–শিবির একটি বহুত্ববাদবিরোধী, নারীবিদ্বেষী, ধর্মীয় একনায়কত্ব কায়েমে লিপ্ত হয়েছে। জামায়াত-শিবির এখন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী রাজনীতির শূন্যস্থান পূরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে নতুন করে সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে। ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে এই নতুন ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে রাজপথেই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিদায়ঘণ্টা বাজাবে।

ছাত্র ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবিরের হামলায় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ মে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে গেলে তথাকথিত ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’ ব্যানারের আড়ালে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতে নৃশংস হামলা চালায়। চট্টগ্রামের এই হামলায় ১২ জন শিক্ষার্থী আহত হন, যাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

চট্টগ্রামে হামলার সময় নারী কর্মীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত করা হয়েছে অভিযোগ করে ছাত্র ইউনিয়ন বলেছে, সেখানে পুরুষ নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় মারধর করা হয়। এ ছাড়া ২৯ মে মৌলভীবাজারে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন ছাত্রফ্রন্টের এক নেতাকে হেনস্তা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচি চলাকালে ক্যাম্পাসের ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক সহাবস্থানের সংস্কৃতি ভেঙে দিয়ে ছাত্রশিবির বারবার উসকানিমূলক তৎপরতা চালিয়েছে।

এ টি এম আজহারের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা বিবৃতিতে বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ইতিহাসের এক ভয়াবহ অধ্যায়কে অস্বীকার করার একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপিত হলো। পরদিনই শাহবাগে জামায়াত ইসলামীর নেতা–কর্মীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নায়কসুলভ প্রত্যাবর্তন উপহার দিয়েছেন। এই ঘটনা কেবল যুদ্ধাপরাধকে অস্বীকার করার প্রচেষ্টাই নয়, বরং এটি সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের উত্থানের জোরালো ইঙ্গিত দেয়। শাহবাগ, যেখানে একসময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের দাবি উঠেছিল, সেখানেই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শোনা গেল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র জ ট শ হব গ

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত

ভোলায় গ্যাস ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে চলমান ছয় দফা আন্দোলন স্থগিত করেছে ‘আমরা ভোলাবাসী’। সরকারি আশ্বাসের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন নেতারা।

সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও আমরা ভোলাবাসীর জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সদস্য রাইসুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোতাসিন বিল্লাহ, ভোলা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী, ভোলা আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, ইসলামী আন্দোলনের ভোলা উত্তর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তরিকুল ইসলাম, ভোলা সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. কামাল হোসেন ও আমরা ভোলাবাসীর সদস্যসচিব মীর মোশাররফ হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভোলার গ্যাস স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের দাবিসহ ছয় দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে দাবি আদায়ে অগ্রগতি হয়েছে।

আমরা ভোলাবাসীর দাবির মধ্যে রয়েছে, ভোলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন, বিদ্যমান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুবিধা নিশ্চিত করা, ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ, ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ, গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন ও নদীভাঙন প্রতিরোধ।

সংগঠনটি জানায়, আন্দোলনের আগে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে মাত্র আট চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জন। আরও চিকিৎসক, নার্স ও যন্ত্রপাতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে নতুন মেডিকেল কলেজ হলে, সেটি ভোলায় হবে। ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও ফিজিবিলিটি স্টাডি ও নকশা সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সার কারখানা ও ইপিজেড স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতারা। গ্যাস–সংযোগের বিষয়ে জানানো হয়, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে ডিমান্ড নোট জমা দেওয়া ২ হাজার ১৪৫ গ্রাহককে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে এবং ন্যায্যমূল্যে ২০ হাজার সিলিন্ডার বিতরণ করা হবে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আবার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের থেকে তরুণদের দূরে থাকতে হবে: মজিবুর রহমান
  • শিশু নাঈমের পাশে ইবি ক্রিকেট ক্লাব
  • ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত