জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, ইসরায়েলের কারণে গাজার মানুষেরা অনাহারে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি মনে করেন, এ কারণেই গাজায় ইসরায়েলি হামলা প্রশ্নে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন এসেছে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ফ্লেচার এসব কথা বলেন।

বিবিসির পক্ষ থেকে ফ্লেচারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এ ‘জোরপূর্বক অনাহার’ যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে কিনা। উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা যুদ্ধাপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে থাকে। অবশ্যই, এ বিষয়ে আদালত চূড়ান্ত রায় দেবেন। আর শেষ পর্যন্ত ইতিহাসই এর বিচার করবে।’

ফ্লেচার সম্প্রতি গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর করা সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি সম্প্রতি বলেছিলেন, সহায়তা না পৌঁছালে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। পরে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ তথ্য সংশোধন করা হয়। ফ্লেচার স্বীকার করেছেন, ভাষা ব্যবহারে ‘নির্ভুল’ হওয়া জরুরি।

হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চলাকালে গত ২ মার্চ থেকে গাজায় কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না ইসরায়েল। প্রায় তিন মাসের অবরোধের পর গত সপ্তাহে উপত্যকাটিতে সীমিত পরিসরে খাবার, ওষুধ, জ্বালানি এবং আশ্রয় সামগ্রীর মতো ত্রাণগুলো সরবরাহের অনুমতি দেয় তারা। এরই মধ্যে ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় নতুন করে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ইসরায়েল বলছে, গাজায় এখনো আটক থাকা ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করার জন্যই তারা চাপ প্রয়োগের এ কৌশল নিয়েছে। ধারণা করা হয়, ৫৮ জিম্মির মধ্যে অন্তত ২০ জন এখনো জীবিত।

অবরোধ শিথিল করার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত সংস্থা—গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের পরিচালনাধীন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। জাতিসংঘ বলেছে, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে গাজায় ত্রাণ দেওয়ার একটি জায়গায় ভিড়ের মধ্যে পড়ে ৪৭ জন আহত হয়েছেন। হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করতে জাতিসংঘ অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা দেখছি সীমান্তে খাবার রাখা হয়েছে। কিন্তু সীমান্তের ওপারে গাজার মানুষেরা অনাহারে দিন কাটালেও, সে খাবার সেখানে পৌঁছাতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা শুনছি যে ইসরায়েলি মন্ত্রীরা বলছেন, গাজার মানুষদের ওপর চাপ তৈরি করার জন্য এমনটা করা হচ্ছে।’

সম্প্রতি ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, ‘গাজার বাসিন্দারা যেন পুরোপুরি নিরুপায় হয়ে বুঝতে পারে যে তাদের কোনো আশা নেই,  কিছুই পাওয়ার নেই। এবং তারা যেন অন্য কোথাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করার কথা ভাবতে শুরু করে।’

ফ্লেচার মনে করেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উচিত স্মোট্রিচের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেওয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, বিশ্বের সব সরকারই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পক্ষে দাঁড়াবে—এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট।’

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, ‘আমরা দেখছি সীমান্তে খাবার রাখা হয়েছে কিন্তু সীমান্তের ওপারে গাজার মানুষেরা অনাহারে দিন কাটালেও সে খাবার সেখানে পৌঁছাতে দেওয়া হচ্ছে না। এবং আমরা শুনছি যে ইসরায়েলি মন্ত্রীরা বলছে গাজার মানুষদের ওপর চাপ তৈরি করার জন্য এমনটা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা বাড়ছে। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কালাস বলেন, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যতটুকু হামলা করা প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি মাত্রায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এর আগে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য কী, তা তিনি এখন আর বুঝতে পারছেন না।

চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ এবং অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর জবাবে নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, এসব নেতা হামাসের পক্ষ নিচ্ছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল অন হ র মন ত র সহ য ত র জন য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: ‘মৃত’ নন জীবিত এমন ১৫ জনকে হাজির করলে ব্যবস্থা

বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ চিহ্নিত ১৫ জন জীবিতকে হাজির করাতে পারলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নেবেন। বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারীদের আইনজীবীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী এ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আবেদনকারীদের উদ্দেশে দুই বিচারপতি বলেছেন, প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।

মামলাকারীদের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। তবে ইসিকে তাঁরা বলেছেন, তাদের কাজ গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া নয়। তাদের দেখা উচিত যাতে গণহারে ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা যায়।

এসআইআর–প্রক্রিয়া অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনের পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ আগস্ট। সে লক্ষ্যেই ইসি এগিয়ে চলেছে। ইসি সূত্রে খবর, নিবিড় সংশোধনপ্রক্রিয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লাখেরও বেশি নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ‘মৃত’, ৩৬ লাখ ‘নিখোঁজ’। এ ছাড়া বেশ কয়েক লাখ ভোটারের নাম বিভিন্ন এলাকার তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ একই ভোটার অন্তত দুই জায়গায় নথিভুক্ত। আগের তালিকা অনুযায়ী বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৮৯ লাখ। ইসির দাবি, এই তালিকায় বহু ভোটার ভুয়া। তাদের বাদ দিতেই এই নিবিড় সংশোধন।

যে প্রক্রিয়ায় এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, মামলাকারীদের আপত্তি তা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ইসি যেভাবে নাগরিকত্বের যাচাই করছে, সে জন্য যেসব নথি পেশ করতে বলা হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তেমন করা তাদের কাজও নয়। সেই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বহু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ইসি কেড়ে নিচ্ছে।

গত সোমবার ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে আশ্বস্ত করে বিচারপতিরা বলেন, কমিশনের ত্রুটি–বিচ্যুতি দেখলে তাঁরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। ভোটার প্রমাণে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে গ্রাহ্য করার সুপারিশ বিচারপতিরা জোরের সঙ্গে করেছেন। এই দুই নথি জাল করা সহজ বলে ইসির দাবি নস্যাৎ করে বিচারপতিরা বলেছেন, যে ১১টি নথির ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিই জাল করা সম্ভব। কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতিরা বলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ অথচ আসলে জীবিত, এমন ১৫ জনকে আপনারা হাজির করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।

আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে ৮ আগস্টের মধ্যে মামলাকারীদের বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে পেশ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ