১২তম প্রজন্মের ২০০ কম্পিউটার দেওয়ার কথা। একেকটির দাম লাখ টাকা। এর বদলে দিয়েছে ষষ্ঠ প্রজন্মের। এর মধ্যে প্রায় ১০০টি চালু হচ্ছে না। এ সব কম্পিউটার নিয়ে বিপাকে পড়েছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দরপত্র অনুযায়ী, ডেস্কটপ হবে এইচপি ব্র্যান্ডের। কোরআই থ্রি প্রসেসর। ৪ জিবি (গিগাবাইট) র্যাম। এক হাজার জিবি হার্ডডিস্ক ড্রাইভ। ৪৫০ ওয়াট পাওয়ার সাপ্লাই। মনিটর ২১.
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, কোনো ব্র্যান্ডের কম্পিউটার দেওয়া হয়নি। ১২তম প্রজন্মের বদলে ষষ্ঠ প্রজন্মের যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে। দরপত্রে যেসব শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে, তার কোনোটি মানেননি ঠিকাদার। এতে সরকারের ২ কোটি টাকা গচ্চা গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ক্যান্টিন ও স্টোরের কয়েকটি কক্ষে বিকল কম্পিউটারগুলো তালাবদ্ধ করে ফেলে রাখা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফেরত নেওয়ার কথা বললেও তা নেয়নি।
স্টোরকিপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘২০০ কম্পিউটারের অর্ধেক অচল। চালু করা যায়নি। টুয়েলভ জেনারেশনের ক্ষেত্রে যদি সিক্সথ জেনারেশন দেয়, তাহলে কি হবে?’ এগুলো তারা প্রকল্প পরিচালককে ফেরত দিয়েছেন।
ছয় হাজারের বদলে ১২০০ জিপিডি: পানি শোধন যন্ত্র কেনায় নীতিমালা মানা হয়নি। ছয় হাজার জিপিডি (গ্যালন পার ডে) সক্ষমতার পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ জিপিডির যন্ত্র সরবরাহ করেছে ঠিকাদার। যন্ত্রটি এখন পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি।
ডুপ্লিকেটের বদলে ফটোকপি: উচ্চ রেজুলেশনের কয়েকটি ডিজিটাল ডুপ্লিকেট যন্ত্র কেনার জন্য দরপত্র দেওয়া হয়। এর বদলে সরবরাহ করা হয়েছে নিম্নমানের ফটোকপি যন্ত্র। এতে সরকারের ৪ লাখ টাকা অপচয় হয়েছে। এ তিনটি সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সজিব আল হাসান। নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহের বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা ও নম্বরে যোগাযোগ করলেও কেউ সাড়া দেয়নি।
তড়িঘড়ি বিল প্রদান: ২০২৩ সালের ৭ মে ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নিউরোসার্জারি বিভাগের ১৯টি যন্ত্র কেনার জন্য দরপত্র ডাকা হয়। তৎকালীন মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশে কাজ পায় ঢাকার প্রতিষ্ঠান এম/এস এসপি ট্রেডিং হাউস। ওই বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সব যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার কথা। কয়েকবার সময় বাড়িয়ে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ৬টি যন্ত্র সরবরাহ করে। পরে বাকিগুলো সরবরাহ করে। এর মধ্যে রয়েছে ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার ইমেজ গাইডেড নিউরো নেভিগেশন সিস্টেম ফর ক্রানিয়াল অ্যান্ড স্পাইনাল সার্জারি। ৪১ লাখ টাকার ইলেক্ট্রিক ড্রিল সিস্টেম উইথ ক্রানিটিমি অ্যান্ড মাইক্রো ডিভাইডার হ্যান্ড পিচ ক্রানিয়াল। স্পাইনাল অ্যান্ড পিটুইটারি সেট, থ্রিডি ভিজ্যুয়ালাইজেশন মাইক্রোস্কোপ সিস্টেম ফর মাইক্রো নিউরোসার্জারি সেট কেনা হয়েছে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকায়। মিনিমালি ইনভেসিভ স্পাইন সার্জারি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা। প্রিকিটেনিয়াস ভরসো লাম্বার পেডিকল স্ক্রু ডোনেশন অ্যান্ড ইন্টার বডি ফাংশন সেট ৩০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এসিডিএফ স্পাইন সার্জারি ইনস্ট্রুমেন্ট সেট ৪৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
মেডিকেলের একাধিক সূত্র জানায়, যন্ত্রপাতি কেনার পর নিয়ম অনুযায়ী এক সদস্যের সার্ভে কমিটি সেটি প্রথমে বুঝে নেবে। অথচ স্টোরের স্টক লেজারে না তুলে সার্ভে প্রতিবেদন আসার আগে তড়িঘড়ি ৭ কোটি ৫ লাখ টাকা বিল প্রদান করা হয় ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর। এর ৩ মাস পর সার্ভে প্রতিবেদন আসে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে। এটি দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের টেকনিক্যাল ম্যানেজার (ট্রেনিং) নিমিউ অ্যান্ড টিসির কর্মকর্তা সার্ভে কমিটির সদস্য এম এন নাশিদ রহমান।
এক ভবন থেকে ৫ কোটি টাকা লোপাট: ২০১২ সালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০২৩ সালে। ৬১৪ কোটি টাকার মধ্যে ৪৮৫ কোট ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কলেজের একাডেমিক, হাসপাতালসহ কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। আর যন্ত্রপাতি ও ফার্নিচার কেনায় ব্যয় হয় ১২৯ কোটি টাকা। একাডেমিক ভবনের প্রথম ৪ তলা নির্মাণে ৩০ কোটি ও পরে বর্ধিত ২ তলা নির্মাণে আরও ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
একটি সূত্র জানায়, একাডেমিক ভবনের বেজমেন্ট, টাইলস লাগানোসহ অন্যান্য কাজে সাড়ে ৫ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এতে কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদ মো. কবিরসহ একাধিক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী, উপসহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের যোগসাজশ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য: এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ডা. সরোয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেসব নিম্নমানের কম্পিউটার দিয়েছে, সেগুলো ফেরত নেবে বলে জানিয়েছে। ২০০ কম্পিউটারের অর্ধেক খারাপ পাওয়া গেছে। আমরা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া পিউরিফায়ার ও ডুপ্লিকেট মেশিনের বিষয়েও কথা হচ্ছে।’ যন্ত্রপাতি বছর ধরে পড়ে আছে কেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘পরিচালকের দপ্তর বুঝে না নেওয়ায় আমরা যন্ত্রপাতি নিয়ে সমস্যায় আছি। বুঝে দেওয়ার জন্য বারবার চিঠি দিলেও তারা সাড়া দিচ্ছেন না। এখন এসব যন্ত্রপাতি অচল হয়ে গেলে কে দায় নেবে?’
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে যন্ত্রপাতিগুলো পড়ে আছে। এগুলো বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’ নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘নিম্নমানের কম্পিউটারসহ অন্যান্য কিছু সারঞ্জাম আমরা নিইনি।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসপি ট্রেডিং হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাফিজুর রহমান পুলক বলেন, ‘আমরা শুধু নিউরো বিভাগের ১৯টি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছি। সরকারের ক্রয় নীতিমালা শতভাগ মেনেছি। সেগুলো আমরা বুঝিয়েও দিয়েছি। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।’
তবে অনিয়মের অভিযোগে এরই মধ্যে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন কুষ্টিয়া কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। অনুসন্ধানে ভবন নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়মের সত্যতা মিলেছে বলে জানান উপপরিচালক মাঈনুল হাসান রওশনী। তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধান চলছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রজন ম র সরক র র দরপত র র চ লক স প ইন র বদল
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।
ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।
ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’
ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টশুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।
জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং