নাসিরনগরে গরু আনতে গিয়ে নদে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু
Published: 31st, May 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় গরু আনতে গিয়ে সিঙ্গার নদের স্রোতে পড়ে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ এলাকায় নদের দুটি পৃথক স্থান থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হল গোকর্ণ গ্রামের মিনার আলীর মেয়ে মারিয়া আক্তার (১২) ও ফারিয়া আক্তার (৯)। তারা স্থানীয় গোকর্ণ মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। মিনার আলী সৌদি আরবে থাকেন। দুই বোনের মৃত্যুতে এলাকায় শোক নেমে এসেছে।
নিহতদের পরিবার, স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকালে আকাশিয়া মাঠে গরু চরাতে যায় মারিয়া ও ফারিয়া। প্রতিদিনের মতো তাদের দুপুরের মধ্যে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু গরুগুলো ফিরে এলেও দুই বোন আর ফেরেনি। পরিবার তাদের খোঁজ করতে থাকে। সন্ধ্যা পর্যন্তও কোনো সন্ধান না মেলায় বিষয়টি স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হয়।
পরে রাত ১২টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে উদ্ধার অভিযান চালালেও তাদের পাওয়া যায়নি। পরদিন, অর্থাৎ আজ সকালে নিখোঁজস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে বড় বোন মারিয়ার লাশ ভেসে থাকতে দেখা যায়। সকাল ৯টার দিকে ছোট বোন ফারিয়ার লাশ দেড় কিলোমিটার দূরে একটি মাছ ধরার জালে আটকে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় ব্যক্তিরা তাদের উদ্ধার করে একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়রা জানান, বাড়ি ফেরার পথে বেড়িবাঁধ এলাকায় সিঙ্গার নদ পার হওয়ার সময় স্রোতের তোড়ে পড়ে দুই বোন ডুবে যায়।
গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো.
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খাইরুল আলম বলেন, শুক্রবার বিকেলে বাড়ির পাশের নদ পার হয়ে গরু আনতে যায় মারিয়া ও ফারিয়া। দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোত তৈরি হয়। এ সময় নদ পার হতে গিয়ে স্রোতের তোড়ে ভেসে যায় দুই বোন। এর পর থেকে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে শনিবার সকালে নদে দুই বোনের লাশ ভেসে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই ডকুমেন্টরিতে ‘ফুটেজ’ না থাকায় জাবি ছাত্রদল নেতার হট্টগোল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত দেশের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রচারিত ডকুমেন্টরিতে ফুটেজ না থাকায় এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে হট্টগোল করা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৩৯তম ব্যাচের (২০০৯-১০ সেশন) সাবেক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হলের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে এ হট্টগোল করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
ডকুমেন্টরি প্রদর্শন শেষে ওই ছাত্রদল নেতা উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে থাকেন, “এই ডকুমেন্টরিতে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। ডকুমেন্টরিতে ছাত্রদলের অবদানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আমরাও আন্দোলন মাঠে ছিলাম, জেল-জুলুম, মামলা আমরাও খেয়েছি।”
এ সময় তার সঙ্গে শাখা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোমান রাশিদুল ও হাসান শাহরিয়ার রমিমকেও হট্টগোল করতে দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের জন্য তাদের দুইদিন সময় দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে একটি মাত্র ক্যামেরা দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনের ইন্টারভিউ নেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পর্যাপ্ত ইকুইপমেন্ট ও সময় না পাওয়ায় তাদের পূর্ণাঙ্গ ডকুমেন্টরি নির্মাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
তবে এ ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের এক প্রভাবশালী শিক্ষকের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।
তারা জানান, ডকুমেন্টরি নির্মাণের পূর্বে তারা জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব পাবলিক ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেছিলেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পাঠানো ও সাংবাদিকদের থেকে সংগৃহীত ছবি ও ফুটেজ দিয়ে ডকুমেন্টরি নির্মাণ করা হয়েছে। যে ব্যক্তি দাবি করেছেন তার ছবি বা ফুটেজ দেয়া হয়নি, তার ছবি বা ফুটেজ তাদের কাছে কেউ দেয়নি। এজন্য তারা ডকুমেন্টরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি?
এ নিয়ে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “আজ যে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেখেছি, এটাও জাহাঙ্গীরনগরের বৈশিষ্ট্য, এটাও ২৪ এর অর্জন। খারাপভাবে দেখার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেকটি কাজের মধ্যে ভুল থাকতে পারে, এখানে শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ঠিক একইসঙ্গে প্রতিবাদের যে ভাষা, সেখানেও শিক্ষিত হবার প্রয়োজন রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সমালোচনা ও কুৎসার পার্থক্য শিখবে। একইসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশংসা ও পূজার পার্থক্য শিখবে ও বুঝবে।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী