লভ্যাংশ দেবে না ইউসিবি, মুনাফে কমেছে প্রথম প্রান্তিকেও
Published: 1st, June 2025 GMT
২০২৪ সালের জন্য শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দেবে না ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। গত বছর কোম্পানিটির মুনাফা বা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ টাকা। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছিল ১ দশমিক ৪৫ টাকা। মুনাফা কমে যাওয়ার কারণে এবার কোম্পানিটি লভ্যাংশ দিচ্ছে না।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম বা জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকেও একই ধারা অব্যাহত আছে। এ সময় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) মুনাফা বা শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তবে এ সময় ব্যাংকটি নগদ প্রবাহে (এনওসিএফপিএস) ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকটির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫ সময়ে ইউসিবির ইপিএস নেমে এসেছে শূন্য দশমিক শূন্য ৪ টাকায়। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল পুনর্নির্ধারিত হিসাবে শূন্য দশমিক ৪২ টাকা। আয় হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ঋণ ও অগ্রিমের বিপরীতে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের পরিমাণ বৃদ্ধি।
অন্যদিকে বছরের প্রথম প্রান্তিকে ইউসিবির সমন্বিত নেট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো প্রতি শেয়ার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে এটি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৬ টাকা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ঋণাত্মক ৪ দশমিক ৭৬ টাকা (পুনর্নির্ধারিত)। এই প্রবাহ বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল বেশি পরিমাণে ঋণ বিতরণ, যদিও আমানতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
৩১ মার্চ ২০২৫ তারিখে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৬ দশমিক ১১ টাকা; আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৬ দশমিক ৫৩ টাকা (পুনর্নির্ধারিত)। এনএভিপিএস হ্রাসের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, ২০২৪ সালে ২০২৩ অর্থবছরের নগদ লভ্যাংশ পরিশোধ, যে কারণে সংরক্ষিত মুনাফা কমে গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউস ব প রথম দশম ক বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
বাজেটে টাকা আসবে কোথা থেকে, যাবে কোথায়
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এবং দেশের ৫৪তম বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থের বড় অংশের জোগান দেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাকিটা আসবে অন্যান্য খাত থেকে।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এবার গত অর্থবছরের চেয়ে বাজেটের আকার কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৮৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ আসবে এনবিআর থেকে। টাকার অঙ্কে তা ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি। অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
আরো পড়ুন:
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা থাকল না
বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য ৩ প্রস্তাব, বিনিয়োগকারীরা উপেক্ষিত
নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৩ দশমিক ৬২ ভাগ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে আসবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বা মোট ঘাটতির ৫৫ দশমিক ৩ শতাংশ। বিদেশি ঋণ থেকে আসবে ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বা ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ। নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিচালন ব্যয় ছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এবার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর ৫৭ ভাগই যাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ পরিশোধে। নতুন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১০ থেকে ২০ ভাগ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে দেশি-বিদেশি সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকিতেও বড় ব্যয় ধরা হচ্ছে। পরিচালন ব্যয়ের প্রায় ৪০ ভাগ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে এই দুই খাতে। এর মধ্যে সুদ পরিশোধে সরকারের খরচ হবে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এরপর ১৯ শতাংশ ব্যয় হবে ভর্তুকি ও প্রণোদনা দিতে, টাকার অঙ্কে যা ২ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা।
শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বরাদ্দ প্রায় ১২ ভাগ। সরকারি কর্মচারীদের পেনশনে বরাদ্দ সাড়ে ৬ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সাড়ে ৫ ও কৃষি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ ভাগ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পেনশন ছাড়া এ খাতে বরাদ্দ প্রায় ৯১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা আনতে বাজেটে এই খাতকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। এবার এ কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও মাথাপিছু বরাদ্দ উভয়ই বাড়ানোর প্রস্তাব রাখেছেন অর্থ উপদেষ্টা। বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বেশকিছু ভাতার হার বৃদ্ধিরও প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
বয়স্ক ভাতা কর্মসূচিতে নতুন করে ১ লাখ উপকারভোগীকে যুক্ত করা হবে। মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৫০ টাকা। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুস্থ নারী ভাতা ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া, প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রদত্ত মাসিক ভাতা ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা করা হয়েছে।
বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সুবিধাভোগীর সংখ্যা এবং মাথাপিছু বরাদ্দ উভয়ই বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দিয়েছি। এ প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছর থেকে বেশকিছু ভাতার হার বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো বয়স্ক ভাতার হার মাসিক ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য মাসিক ভাতার হার ৬৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে ৫৫ লাখ পরিবারকে স্বল্প মূল্যে ১০ লাখ টন চাল বিতরণ করবে সরকার।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মেয়াদ আগামী অর্থবছরের ৬ মাসে উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে বর্তমানে সহায়তাপ্রাপ্ত ৫০ লাখ পরিবারের অতিরিক্ত আরো ৫ লাখ পরিবারকে এর আওতাভুক্ত করার প্রস্তাব করছি।
এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। সাময়িক হিসাবে অর্জিত হয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ ভাগ।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটেও সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। গত এপ্রিলের হিসেবে দেশের বর্তমান সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।
সংসদ না থাকায় এবারের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ঢাকা/হাসান/রফিক