খেলার মাঠে বাংলাদেশের হয়ে এক যুগের বেশি সময় লড়েছেন। এবার মাঠের বাইরেও অবদান রাখতে চান দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। জাতীয় দলের এই দুই সাবেক তারকা খেলোয়াড়ি জীবন শেষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোচ হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এমনটাই জানালেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নবনিযুক্ত সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

রোববার বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ) আয়োজিত এক অনানুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান বিসিবি সভাপতি। বুলবুল জানান, বিসিবিতে যোগ দেওয়ার আগেই মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং তারা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক কোচ হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি না বলা ঠিক হবে কি না, তবে তারা (মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ) বিসিবিতে আমার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই যোগাযোগ করেছিলেন। তারা কোচ হতে চান। এজন্য আমরা বিসিবির পক্ষ থেকে একটি কোচিং শিক্ষা কর্মসূচি শুরু করার পরিকল্পনা করেছি।’

এসময় সাবেক ক্রিকেটারদের অবদান এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন বুলবুল। তিনি বলেন, ‘নান্নু ভাই, আকরাম, লিপু ভাই, বাশার—এরা সবাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা মাঠ, উইকেট, ড্রেসিং রুম সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।’

তবে কেবল খেলোয়াড় হিসেবে সফল হলেই যে কেউ ভালো কোচ কিংবা প্রশাসক হবেন, এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। ‘সফল কোচ হতে হলে যথাযথ প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এজন্য বিসিবির পক্ষ থেকে আমরা পরিকল্পিতভাবে এগোতে চাই,’ বলেন বুলবুল।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরি

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সেখানে পর্যটন সীমিত করা হয়েছে। ডিসেম্বর-জানুযারি—এ দুই মাসে প্রতিদিন নির্দিষ্টসংখ্যক পর্যটক দ্বীপটিতে যেতে পারেন। ঐতিহ্যগতভাবে মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো পেশা এখানে নেই বললেই চলে। বালুমাটি ও লবণপানির কারণে কৃষির সুযোগও একেবারে সীমিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটন ঘিরেই মূলত দ্বীপটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চাকা সচল থেকেছে। ফলে পর্যটন সীমিত হওয়ায় এমনিতেই ৮ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপটির প্রায় ১১ হাজার বাসিন্দার জীবিকা সংকটের মুখে পড়েছে।

পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিনে যেতে না পারলেও দ্বীপটির বাসিন্দারা ট্রলারে করে টেকনাফে যেতে পারেন। চাল, ডাল, আলু, তেল, ডিম, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য টেকনাফ থেকেই দ্বীপটিতে যায়। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা বিরূপ আবহাওয়ার কারণে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন পথে ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বীপটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় জোগান কমে গেলে অর্থনীতির চিরাচরিত সূত্র অনুযায়ীই দাম বাড়বে।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, সেন্ট মার্টিনে একটি ডিম ১৮-২০ টাকায়, ১ কেজি আলু ৫০ টাকায় এবং সবজির কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জীবিকা ও আয়ের সুযোগ বড়ভাবে সংকুচিত হয়ে আসা একটা জনপদের বাসিন্দাদের পক্ষে এতটা বাড়তি ব্যয় করে খাদ্যপণ্য কেনা কতটা দুঃসাধ্য হতে পারে, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। 

উপজেলা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তার বরাতে আমরা জানতে পারছি, ১৫ দিন আগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিডি, ভিজিএফসহ খাদ্যসহায়তার চাল এসেছে। ফলে চালের সংকট হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু ভাত খেয়ে তো মানুষ দিন পার করতে পারবে না। চালের সঙ্গে তাদের জন্য অন্যান্য খাদ্য উপকরণও লাগবে।

সেন্ট মার্টিনের বর্তমান সংকটকে শুধু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট সংকট হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। আবহাওয়া ভালো হলে দু–এক দিনের মধ্যে এবারের সংকট কেটে যাবে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটা আমাদের দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনার বড় দুর্বলতারও প্রতিফলন। শুধু চালকে ত্রাণসহায়তা হিসেবে দেওয়ার যে রেওয়াজ, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। এ সময়ে নগদ সহায়তা ভুক্তভোগীদের অনেক উপকারে আসে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, সেন্ট মার্টিনের বাজারে পণ্য সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে, তার বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। জরুরি পরিস্থিতিতে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর জাহাজ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেই পারে।

পর্যটন সীমিত হওয়ায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যাপারেও সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, অভাব, দারিদ্র্য দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিরতা ও অসন্তোষ তৈরি করতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ