‘ঈদের দিন ছোট পোলাপান মানুষের বাড়িতে গোস্ত আনতে গেলে কেউ দেয়, কেউ দেয় না।’ আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন হোসনে আরা বেগম (৫৫)। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান বাজারে পাওয়া যায় বেদে পরিবারের এই সদস্যকে। 
চুড়ি-ফিতা, সিংগা-তাবিজ বিক্রি করে শৈশব থেকেই সংসার চালিয়ে আসছেন হোসনে আরা। কিন্তু দিন বদলেছে। এখন তাদের কদর কমেছে। সেই বর্ণনা মেলে হোসনে আরার কথায়, ‘আমাদের কাছ থেইক্কা মানুষ আগে চুড়ি-ফিতা কিনলেও এখন বাড়ির বউ-ঝিরা হাটবাজারে গিয়া কিনে। এ ছাড়া যেহানে-সেহানে ডাক্তার। আমাগো কাছ থাইক্যা সিংগা-তাবিজ কেউ নেয় না। তাই গ্রামগঞ্জে ঘুরে কোনো কাজ না পাইয়া বাঁচার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততাছি।’
হোসনে আরার মতো সিরাজদীখানের বেদে পরিবারের সদস্যরা এখন দিন পার করছেন অতিকষ্টে। উপজেলার বেদেপল্লিতে ঈদের আনন্দ আগের মতো দেখা যায় না। কোরবানি দেওয়া তো দূরের কথা, বছরে মাংসই জোটে সামান্য। তাই ঈদের দিনের সঙ্গে বছরের অন্য দিনের তেমন পার্থক্য পান না।
প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে বেদেরা মালখানগর ইউনিয়নের তালতলা এলাকায় ইছামতী নদীতে বসতি শুরু করেন। এখন সিরাজদীখান বাজার, রাজানগর, শেখরনগর, তুলসীখালী, ভবানীপুর এলাকায় তাদের ভাসমান জীবন। সব মিলিয়ে এসব এলাকায় বেদে পরিবারের সংখ্য প্রায় ৩০০।
তালতলার বেদে সর্দার মিনহাজ উদ্দিন জানান, ‘ঈদে কোরবানি দেওয়া তো আমাদের কাছে দিবাস্বপ্ন; এক টুকরা গোস্তের জন্য ছোট বাচ্চারা পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়ায়। কেউ দেয়, কেউ দেয় না।’ 
সিরাজদীখানের ইউএনও শাহিনা আক্তার বলেন, বেদেরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভকালীন ভাতাসহ নাগরিক সুবিধা দেওয়া সহজ হচ্ছে। সরকারি সব সুবিধাই পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক রব ন

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ