অভিনয় ক্যারিয়ারে এটাই ছিল আমার ব্যস্ততম ঈদ: নওবা
Published: 2nd, June 2025 GMT
নওবা তাহিয়া হোসাইন। অভিনেত্রী। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘বঙ্গ’তে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর অভিনীত নাটক ‘গ্যাংস্টার ব্রোস’। এ নাটক ও অন্যান্য প্রসঙ্গে অভিনেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এমদাদুল হক মিলটন
‘গ্যাংস্টার ব্রোস’ নাটকটির দর্শক প্রতিক্রিয়া জানার কী সুযোগ হয়েছে?
কাছের মানুষরা নাটকটি দেখে ভালোলাগার কথা জানিয়েছেন। সবাই আমার লুকটা বেশি পছন্দ করেছেন। গল্পটি অসাধারণ। এ কারণে কাজটি দর্শকের ভালো লেগেছে। ইরফান সাজ্জাদ ও পাভেল ভাইয়ের সঙ্গে এটিই ছিল আমার প্রথম কাজ। সহশিল্পীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও ভালো ছিল।
শুনেছি, এবারের ঈদে নাটকে কাজ করেননি। কারণ কী?
পড়াশোনা নিয়েই একটু ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। এ কারণে ঈদে নতুন কোনো নাটকে অভিনয় করিনি। অনেক দিন ধরে মনে হচ্ছিল একই রকমের অনেকগুলো কাজ করেছি। ভালো কাজ করার জন্য মাঝেমধ্যে বিরতি নেওয়া দরকার। বিরতি নিলে কাজের একঘেয়েমি দূর হয়। কাজ করতে করতে হাফিয়ে উঠেছিলাম। তবে এটি সাময়িক বিরতি। আগস্টের পরে পুরোদমে কাজে ফিরব। পরবর্তী উৎসবগুলোতে আমাকে পর্দায় বেশি বেশি দেখা যাবে বলে আশা করছি। গত রোজার ঈদে অনেকগুলো কাজ করেছিলাম। এমনকি চাঁদরাত পর্যন্ত শুটিং হয়েছে। অভিনয় ক্যারিয়ারে এটাই ছিল আমার ব্যস্ততম ঈদ। অভিনয় শুরুর পর এর আগেও একবার ঈদ পালন করেছি। এতটা ব্যস্ত ছিলাম না; তবে এই ঈদে দর্শকরা একেবারেই নিরাশ হবেন না। আগে কিছু কাজ করা ছিল, যা এই ঈদে প্রচার হবে।
ওটিটি দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন। সেখানে খুব একটা পাওয়া যায় না আপনাকে?
হ্যাঁ, ওটিটি আমাকে অন্যরকম পরিচিতি পাইয়ে দিয়েছে। তবে ওটিটি থেকে খুব একটা কাজ এসেছে, তেমন নয়। মাঝে একটা কাজ এসেছিল, তবে ব্যাটেবলে মেলেনি। ওটিটির কাজে বেশি সময় দরকার। ওই সময়ে আমার হাতে বেশি সময় ছিল না। আমি ওটিটির ভক্ত। এটি অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম। এখানে ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। আমি ওটিটিতেও বেশি বেশি কাজ করতে চাই।
এবার ঈদের পরিকল্পনা কী?
আমি ঢাকার মেয়ে। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকায় ঈদ উদযাপন করব। দাদাদাদি, মাবাবাসহ পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা ঢাকায় থাকেন। সবার সঙ্গে ঈদে আনন্দময় সময় কাটবে। আমার ঈদের সকাল শুরু হয় মায়ের হাতের সেমাই দিয়ে। বিকেলে একটু ঘোরাঘুরি করব। রাতটা শেষ হয় খুশির ঘুম দিয়ে।
অভিনয় নিয়ে স্বপ্নের কথা বলুন?
আমি এখনও পড়াশোনা করছি, সঙ্গে অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়ছি। দুটি একসঙ্গে ভারসাম্য করা কঠিন। পড়াশোনা ঠিক রেখে যতটুকু অভিনয়ে মন দেওয়া যায়, সেটা চেষ্টা করি। নিরীক্ষাধর্মী কাজ আমার পছন্দের। এ কারণে বেশি বেশি নিরীক্ষাধর্মী কাজ করতে চাই। আগামীতে অসাধারণ সব কাজ আসুক। সর্বোপরি ভালো কাজ দিয়ে দর্শকদের ভালোবাসা পেতে চাই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ ন ত র ট ভ ন টক ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্য কমানোর দিকনির্দেশনা নেই
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ তাঁর বাজেট বক্তৃতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও সর্বস্ব ত্যাগ স্বীকার করা মা-বোনদের কথা স্মরণ করেছেন, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন চব্বিশের আন্দোলনের শহীদদের কথাও। একাত্তর ও চব্বিশ—দুই সংগ্রামেরই যে উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা, বাজেট প্রস্তাবে তার প্রতিফলন তেমন নেই।
২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫–২৬ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করলেন, তাতে অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও নীতিকাঠামোগত সাহসী পদক্ষেপ আছে, এটা বলা যাবে না। এই বাজেটে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে, এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাজেটেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজস্ব আয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা হলো রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বাজেটটি করা হয়েছে পুরো অর্থবছরের জন্য। কিন্তু অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে যদি নির্বাচন হয়, সে ক্ষেত্রে বাজেটের নীতিপরিকল্পনায় কোনো বদল আসবে কি না, সেই প্রশ্নও আছে।
অর্থ উপদেষ্টা প্রবৃদ্ধির চেয়ে মানবকল্যাণের ওপর জোর দিলেও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের বরাদ্দে, প্রস্তাবে বা পরিকল্পনায় এর প্রতিফলন নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ অপ্রতুল।
বাজেটে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু তারুণ্যের উৎসবের নামে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা আছে কি? বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে নানা উৎসবের নামে জনগণের করের অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে তারা নিজেরাই উৎসব করতে পারবে।
অর্থ উপদেষ্টা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। স্টার্টআপের জন্য আগেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাকে এবারের বাজেটের অন্যতম সাফল্য হিসেবে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। গত ডিসেম্বর মাসের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে। সরকার জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
এবারের বাজেটের বড় দুর্বলতা হলো দারিদ্র্যবিমোচনে সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকা। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। ২০২২ সালে যা ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। চরম দারিদ্র্যের হারও ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যার মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকেই।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বিনিয়োগবান্ধব হয়নি বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাঁরা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, শিল্প প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছিলেন। বাজেটে ভবন, ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা আছে। সিপিডি ও টিআইবি একে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে।
বাজেট প্রণয়নের চেয়ে বাস্তবায়ন অনেক কঠিন কাজ। আমরা আশা করতে চাই, রাজনৈতিক সরকারের আমলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে অপরিমেয় দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপচয় হতো, অন্তর্বর্তী সরকার সেটা পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও অনেকখানি কমিয়ে আনতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ‘অর্ধেক গ্লাস খালি, অর্ধেক গ্লাস পূর্ণ বাজেট’ থেকেও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে।