মাদকসেবী ছেলেকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগে মা আটক, বাবা-ভাই পলাতক
Published: 2nd, June 2025 GMT
বন্দর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে মাদকাসক্ত ছেলে আজিম মিয়া (৩৮)কে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় নিহতের মা আনোয়ারা বেগম (৫৫)) কে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২ জুন) সকালে উপজেলার দক্ষিণ ঘারমোড়াস্থ নাজিরাপট্রি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আজিম মিয়া দুই সন্তানের জনক ও ওই এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। আটককৃত- আনোয়ারা বেগম ওই এলাকার মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ও নিহত নিহত আজিম মিয়ার মা। অভিযুক্তরা হলেন- নিহত আজিম মিয়ার বাবা মোহাম্মদ আলী, তার ভাই দিদার ও অনোয়ার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত আজিম একজন মাদক সেবী। তিনি প্রায় সময় মাদক ব্যবসার টাকা জন্য তার বাবা-মা সহ তার ভাইদের নানা ভাবে হয়রানি ও অত্যাচার করতো। সোমবার সকালে পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে আজিমের সাথে তার বাবা ও ভাইদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।
এর এক পর্যায়ে বাবা মোহাম্মদ আলী, ভাই দিদার হোসেন ও অনোয়ার হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে ইট দিয়ে বুকে আঘাতসহ মারধর করে। এ সময় শ্বাসরোধ করে আজিমকে হত্যা করে পালিয়ে যায় তারা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জে জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
নিহতের স্ত্রী দিবা বেগম বলেন, সকালে আমার স্বামীকে তার বাবা ও ভাইয়ের মিলে মারধর করে হত্যা করেছে। আমার স্বামীকে মারধরের সময় আমি তাদের বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও কিল ঘুষি মেরেছে। আমি এই ঘটনায় মামলা করবো।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, নিহত আজিম একজন মাদক সেবী ছিল। এ নিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। এর জের ধরে আজ সকালে তার বাবা ও ভাইয়ের সাথে আজিমের কথা কাটাকাটি হয়।
এর এক পর্যায়ে তাকে মারধর করে ও শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। নিহতের গলায় শ্বাসরোধের চিহ্ন রয়েছে। এই ঘটনায় নিহতের মাকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ আজ ম ম য় ন হত র ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫