নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চলন্ত যানবাহন থেকে জোর করে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী চালকরা জানিয়েছেন, মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের থামিয়ে টাকা আদায় করে একটি চক্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পৌরসভার কাছ থেকে যানবাহনের পাঁচটি স্ট্যান্ড ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। তাদের নাম ভাঙিয়ে যানবাহন থামিয়ে চাঁদা নিচ্ছে কিছু লোক।
গতকাল সোমবার বিকেলে যাত্রী নিয়ে ভূলতা-বিশনন্দী আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে পায়রা চত্বরে যান অটোরিকশাচালক মোগল হোসেন। এ সময় গতিরোধ করে চাঁদা দাবি করে ইমন মিয়া। কীসের চাঁদা জানতে চাইতেই ক্ষিপ্ত ইমন রড দিয়ে অটোরিকশায় আঘাত করেন। আতঙ্কে কান্না শুরু করে ভেতরে থাকা এক শিশু। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে রড হাতে তাদের দিকে তেড়ে যান ইমন মিয়া। শেষ পর্যন্ত মোগল হোসেনের কাছ থেকে ২০ টাকা চাঁদা আদায় করেন তিনি। 

প্রত্যক্ষদর্শী আলতাফ হোসেনের ভাষ্য, গোলচক্কর হিসেবে পরিচিত এই পায়রা চত্বরে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। পৌরসভার নাম ভাঙিয়ে এই চত্বরের চারপাশ থেকে ৮-১০ জন এভাবে ট্রাক, পিকআপ, সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করেন। টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয় চালকদের। কখনও মারধরও করা হয়। 
আড়াইহাজার পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোজাহিদুল ইসলাম তুষারের ভাষ্য, গোলচক্করে মদনগঞ্জ রুট, ভূলতা রুট ও মাধবদী রুট, থানার মোড়, উপজেলা শহীদ মিনার সংলগ্ন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সংলগ্ন মোট পাঁচটি সিএনজি স্ট্যান্ড ইজারা দেওয়া হয়েছে। শুধু ওই স্ট্যান্ড ব্যবহারকারী যানবাহন ও মালপত্র ওঠানামা করলেই নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল নেওয়ার নিয়ম। মহাসড়কে যানবাহনের গতিরোধ করে টাকা তোলা যাবে না। 
তাঁর এই বক্তব্যের ভিন্ন তথ্য মেলে না বাঞ্ছারামপুরগামী অটোরিকশার চালক মোক্তার হোসেনের কথায়। তিনি বলেন, গোলচক্কর ও আশপাশের চারটি জায়গায় ২০-৩০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। এখানে লাঠি নিয়ে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলেই আঘাত করে।  
এই পাঁচটি স্পটের আশপাশ থেকে দিনে ৫০-৬০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে কয়েকজন চালকের ধারণা। তাদের ভাষ্য, পায়রা চত্বর, কলেজ রোড, ভূলতা-বিশনন্দী সড়ক ও নোয়াপাড়া, দিঘিরপার সিএনজি অটো স্টেশন, নরসিংদী-মদনগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক– সবগুলোই সওজ বিভাগের। পুলিশ স্টেশন মোড়, থানার মসজিদ রোড এলজিইডির। সড়কগুলোর কোথাও পৌরসভার টার্মিনালের জায়গা নেই। অথচ পাঁচটি স্পটকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারের লোকেরা চলন্ত অটোরিকশা, সিএনজি ও  ইজিবাইক থেকে ২০ টাকা, পিকআপ ভ্যান থেকে ৫০ টাকা, ট্রাক থেকে ৫০-৭০ টাকা চাঁদা আদায় করছে। 
ভূলতা রুটের স্ট্যান্ডটির ইজারাদার পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন। তাঁর নামে দীন ইসলাম, আরমান ও সাজন আশপাশ থেকে চাঁদা আদায় করেন। সোমবার রাতে আল আমিনের নম্বরে কল দেওয়া হলেও ধরেননি।
এদিন বিকেলে গোলচক্করে বিশনন্দীমুখী ট্রাক থামিয়ে ৫০ টাকা নেন ইমন মিয়া। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘চাঁদা তোলার রাইট আছে বলেই নিচ্ছি। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না।’ বলে হুমকিও দেন। এ সময় গোলচক্করে ভূলতা রুটে চারজন ও মদনগঞ্জ রুটে চারজনকে টোল আদায়ের রিসিট ও লাঠি হাতে এবং মাধবদী রুটে দু’জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
এলাকাবাসীর ভাষ্য ইমন মিয়া মাধবদী রুটের স্ট্যান্ডের ইজারাদার ও আড়াইহাজার পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হজরত আলীর লোক। এ ছাড়া মনির হোসেনসহ আরও দু-তিনজন তাঁর হয়ে চাঁদা আদায় করেন। এ বিষয়ে ফোনে হজরত আলী বলেন, স্ট্যান্ডটি গত ১ বৈশাখ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। ইমনকে চেনেন না। মনির তাঁর লোক। তাঁর চারজন লোক স্ট্যান্ড থেকেই টোল আদায় করে। তাঁর দাবি, ট্রাক আটকানোর নিয়ম নেই। তারা আশপাশেই থাকেন কেউ যদি সমস্যায় পড়েন, তাহলে সমাধান করেন। অনেকে টাকা আদায় করে নিজেরা নেন। হয়রানির অভিযোগ পেলে শাস্তি দেন। 

পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, পৌরসভার নিজস্ব পার্কিং টার্মিনাল ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহন থেকে কোনো টোল আদায়ের বিধান নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন। 
নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল, পৌরকর বা যে কোনো নামেই টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ছাত্রলীগ নেতার বিচার চেয়ে অবরোধ
গাজীপুরের শ্রীপুরে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে সোমবার সকালে মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। উপজেলার জৈনাবাজারে তারা প্রায় দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তারা গাজীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে তাঁর বিচার দাবি করেন। 
এ বিষয়ে প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের আবুল হোসেন বলেন, রোববার মধ্যরাতের পর ফাহিম আহমেদ ২০-২৫ জন সহযোগী নিয়ে জৈনাবাজারের পশ্চিমে প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের স্ট্যান্ডে এসে দুটি বাস ভাঙচুর করেন। পরে তারা শ্রমিকদের মারধর করেন। এ সময় ফাহিম এ পরিবহনের প্রতিটি গাড়ি থেকে দিনে ১ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দিলে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকিও দেন। 
ফাহিম আহমেদের ভাষ্য, ‘আমি কাউকে মারধর বা চাঁদা দাবি করিনি। রোববার রাতে আমার ভাতিজাকে মারধর করেন পরিবহন শ্রমিকরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে কারণ জানতে চেয়েছিলাম। পরদিন বিষয়টি মীমাংসার কথা ছিল। তারা উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে আন্দোলন করছেন।’ 
শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, শ্রমিকরা গুজব ছড়িয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করেছেন। সেনাবাহিনী, হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের আশ্বাসে তারা সড়ক থেকে সরে যান। 

চাঁদা না পেয়ে মারধর
এদিকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় চাঁদা না পেয়ে নির্মাণশ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার রাতে ফুকুরহাটি ইউনিয়নের কান্দাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে কান্দাপাড়া খালের ওপর সেতু নির্মাণকাজের সাব-ঠিকাদার মো.

বাবুল হোসেন রাতেই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সাটুরিয়া থানার ওসি মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, রাতেই লিখিত অভিযোগ পেয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশ পাঠানো হয়। সে পালিয়ে গেছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইমন ম য় প রসভ র পর বহন ম রধর আশপ শ স এনজ এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্

ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র‌্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।

সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ

চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।

জিইও কী?

জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!

এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল

অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।

* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া

* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর

* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি

* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ

এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব

বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে। 

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)

তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।

মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।

জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।

১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন

জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’

যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।

২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন

জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।

গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন-  ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।

বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।

E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।

এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন

এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।

৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন

এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন

ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র‌্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।

এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।

দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।

বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা

জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র‌্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।

আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে- 

‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’

অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’

যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।

বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।

এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।

জিইও’র ভবিষ্যৎ

খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।

তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।

উপসংহার

জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।

এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।

‘ভবিষ্যতের সার্চে র‌্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’

লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ