নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে চলন্ত যানবাহন থেকে জোর করে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী চালকরা জানিয়েছেন, মহাসড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের থামিয়ে টাকা আদায় করে একটি চক্র। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পৌরসভার কাছ থেকে যানবাহনের পাঁচটি স্ট্যান্ড ইজারা নিয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। তাদের নাম ভাঙিয়ে যানবাহন থামিয়ে চাঁদা নিচ্ছে কিছু লোক।
গতকাল সোমবার বিকেলে যাত্রী নিয়ে ভূলতা-বিশনন্দী আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে পায়রা চত্বরে যান অটোরিকশাচালক মোগল হোসেন। এ সময় গতিরোধ করে চাঁদা দাবি করে ইমন মিয়া। কীসের চাঁদা জানতে চাইতেই ক্ষিপ্ত ইমন রড দিয়ে অটোরিকশায় আঘাত করেন। আতঙ্কে কান্না শুরু করে ভেতরে থাকা এক শিশু। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে রড হাতে তাদের দিকে তেড়ে যান ইমন মিয়া। শেষ পর্যন্ত মোগল হোসেনের কাছ থেকে ২০ টাকা চাঁদা আদায় করেন তিনি। 

প্রত্যক্ষদর্শী আলতাফ হোসেনের ভাষ্য, গোলচক্কর হিসেবে পরিচিত এই পায়রা চত্বরে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। পৌরসভার নাম ভাঙিয়ে এই চত্বরের চারপাশ থেকে ৮-১০ জন এভাবে ট্রাক, পিকআপ, সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করেন। টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয় চালকদের। কখনও মারধরও করা হয়। 
আড়াইহাজার পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মোজাহিদুল ইসলাম তুষারের ভাষ্য, গোলচক্করে মদনগঞ্জ রুট, ভূলতা রুট ও মাধবদী রুট, থানার মোড়, উপজেলা শহীদ মিনার সংলগ্ন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস সংলগ্ন মোট পাঁচটি সিএনজি স্ট্যান্ড ইজারা দেওয়া হয়েছে। শুধু ওই স্ট্যান্ড ব্যবহারকারী যানবাহন ও মালপত্র ওঠানামা করলেই নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল নেওয়ার নিয়ম। মহাসড়কে যানবাহনের গতিরোধ করে টাকা তোলা যাবে না। 
তাঁর এই বক্তব্যের ভিন্ন তথ্য মেলে না বাঞ্ছারামপুরগামী অটোরিকশার চালক মোক্তার হোসেনের কথায়। তিনি বলেন, গোলচক্কর ও আশপাশের চারটি জায়গায় ২০-৩০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। এখানে লাঠি নিয়ে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে থাকে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলেই আঘাত করে।  
এই পাঁচটি স্পটের আশপাশ থেকে দিনে ৫০-৬০ হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয় বলে কয়েকজন চালকের ধারণা। তাদের ভাষ্য, পায়রা চত্বর, কলেজ রোড, ভূলতা-বিশনন্দী সড়ক ও নোয়াপাড়া, দিঘিরপার সিএনজি অটো স্টেশন, নরসিংদী-মদনগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক– সবগুলোই সওজ বিভাগের। পুলিশ স্টেশন মোড়, থানার মসজিদ রোড এলজিইডির। সড়কগুলোর কোথাও পৌরসভার টার্মিনালের জায়গা নেই। অথচ পাঁচটি স্পটকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ইজারাদারের লোকেরা চলন্ত অটোরিকশা, সিএনজি ও  ইজিবাইক থেকে ২০ টাকা, পিকআপ ভ্যান থেকে ৫০ টাকা, ট্রাক থেকে ৫০-৭০ টাকা চাঁদা আদায় করছে। 
ভূলতা রুটের স্ট্যান্ডটির ইজারাদার পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আল আমিন। তাঁর নামে দীন ইসলাম, আরমান ও সাজন আশপাশ থেকে চাঁদা আদায় করেন। সোমবার রাতে আল আমিনের নম্বরে কল দেওয়া হলেও ধরেননি।
এদিন বিকেলে গোলচক্করে বিশনন্দীমুখী ট্রাক থামিয়ে ৫০ টাকা নেন ইমন মিয়া। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘চাঁদা তোলার রাইট আছে বলেই নিচ্ছি। বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না।’ বলে হুমকিও দেন। এ সময় গোলচক্করে ভূলতা রুটে চারজন ও মদনগঞ্জ রুটে চারজনকে টোল আদায়ের রিসিট ও লাঠি হাতে এবং মাধবদী রুটে দু’জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
এলাকাবাসীর ভাষ্য ইমন মিয়া মাধবদী রুটের স্ট্যান্ডের ইজারাদার ও আড়াইহাজার পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হজরত আলীর লোক। এ ছাড়া মনির হোসেনসহ আরও দু-তিনজন তাঁর হয়ে চাঁদা আদায় করেন। এ বিষয়ে ফোনে হজরত আলী বলেন, স্ট্যান্ডটি গত ১ বৈশাখ থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। ইমনকে চেনেন না। মনির তাঁর লোক। তাঁর চারজন লোক স্ট্যান্ড থেকেই টোল আদায় করে। তাঁর দাবি, ট্রাক আটকানোর নিয়ম নেই। তারা আশপাশেই থাকেন কেউ যদি সমস্যায় পড়েন, তাহলে সমাধান করেন। অনেকে টাকা আদায় করে নিজেরা নেন। হয়রানির অভিযোগ পেলে শাস্তি দেন। 

পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, পৌরসভার নিজস্ব পার্কিং টার্মিনাল ছাড়া সড়ক-মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহন থেকে কোনো টোল আদায়ের বিধান নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবেন। 
নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল, পৌরকর বা যে কোনো নামেই টাকা নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ছাত্রলীগ নেতার বিচার চেয়ে অবরোধ
গাজীপুরের শ্রীপুরে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে সোমবার সকালে মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। উপজেলার জৈনাবাজারে তারা প্রায় দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তারা গাজীপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে তাঁর বিচার দাবি করেন। 
এ বিষয়ে প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের আবুল হোসেন বলেন, রোববার মধ্যরাতের পর ফাহিম আহমেদ ২০-২৫ জন সহযোগী নিয়ে জৈনাবাজারের পশ্চিমে প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের স্ট্যান্ডে এসে দুটি বাস ভাঙচুর করেন। পরে তারা শ্রমিকদের মারধর করেন। এ সময় ফাহিম এ পরিবহনের প্রতিটি গাড়ি থেকে দিনে ১ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দিলে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার হুমকিও দেন। 
ফাহিম আহমেদের ভাষ্য, ‘আমি কাউকে মারধর বা চাঁদা দাবি করিনি। রোববার রাতে আমার ভাতিজাকে মারধর করেন পরিবহন শ্রমিকরা। ঘটনাস্থলে গিয়ে কারণ জানতে চেয়েছিলাম। পরদিন বিষয়টি মীমাংসার কথা ছিল। তারা উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে আন্দোলন করছেন।’ 
শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, শ্রমিকরা গুজব ছড়িয়ে আন্দোলন চাঙ্গা করেছেন। সেনাবাহিনী, হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের আশ্বাসে তারা সড়ক থেকে সরে যান। 

চাঁদা না পেয়ে মারধর
এদিকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় চাঁদা না পেয়ে নির্মাণশ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার রাতে ফুকুরহাটি ইউনিয়নের কান্দাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে কান্দাপাড়া খালের ওপর সেতু নির্মাণকাজের সাব-ঠিকাদার মো.

বাবুল হোসেন রাতেই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সাটুরিয়া থানার ওসি মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, রাতেই লিখিত অভিযোগ পেয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশ পাঠানো হয়। সে পালিয়ে গেছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইমন ম য় প রসভ র পর বহন ম রধর আশপ শ স এনজ এ সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ভাবিনি এই দিন আসবে, এবার শিশুর মতো ঘুমাব: কোহলি

রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে তিনবার ফাইনালে তুলে শিরোপা জেতাতে পারেননি বিরাট কোহলি। ফাইনালে দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। নিজেকে অপয়া ভেবে নেতৃত্বই ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ জাতীয় দলেও তার নেতৃত্ব হৃদয় ভাঙছিল দলের।

অবশেষে ১৮ বছর একই ক্লাবে খেলে প্রথমবার আইপিএলের শিরোপা জিতলেন বিরাট কোহলি। শিরোপা উঠল বেঙ্গালুরুর ঘরে। এই শিরোপা কোহলির কাছে বিশ্বকাপের চেয়ে কোন অংশে কম নই। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন আইপিএল শিরোপা জেতা হবে না। ওই শিরোপা জিতে এবার শিশুর মতো চাপহীন, নির্বিকার একটা ঘুম দিতে চান কিংবদন্তি ক্রিকেটার কোহলি।

এই ক্লাবে তারুণ্য, দম্ভ ও অভিজ্ঞতা দিয়েছি: এই শিরোপা যতটা দলের ঠিক ততটাই ভক্তদের। ১৮ বছরের একটা দীর্ঘ যাত্রার ফল। এই দলকে আমি আমার যৌবন, দম্ভ ও অভিজ্ঞতা দিয়েছি। প্রতি বছর আমি এটা জিততে চেয়েছি। নিজের যা কিছু ছিল উজাড় করে দিয়েছি। অবশেষে এই মুহূর্ত আলিঙ্গন করতে পারা অবিশ্বাস্য অনুভূতি। আমি ভাবিনি, এইদিনটা আসবে। শেষ বল হওয়ার আগ পর্যন্ত মোহবদ্ধ ছিলাম। এটার মূল্য আমার কাছে কম নয়। আমি আমার শক্তির শেষ বিন্দু পর্যন্ত উৎসর্গ করেছি এই দলের জন্য। এটা অসাধারণ অনুভূতি।

এবি ডি ভিলিয়ার্সের উপস্থিতি: তিনি এই ক্লাবের জন্য যা করেছেন তা অসাধারণ। ম্যাচের আগে আমি ওকে তা বলেওছিলাম, ‘এই শিরোপা জিতলে তা যতটা আমাদের হবে ততটাই তোমার। এবং আমরা চাই এই শিরোপা আমরা জিতলে উদযাপনে তুমিও থাকবে।’ কারণ আরসিবিতে তার অবদান খুবই বিশেষ। সে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক ম্যাচ অব দ্য ম্যাচ জেতা ক্রিকেটার। এই ক্লাব, ভক্তদের কাছে তিনি যে কী তা ভাষার প্রকাশ করতে পারবো না। সুতরাং চ্যাম্পিয়নের পোডিয়ামে থাকাটা তার প্রাপ্য।

এই শিরোপার গুরুত্ব: গত ১৮ বছর এই ক্লাবে সবই দিয়েছি। আমি ক্লাবের প্রতি আনুগত্য থাকতে চেয়েছি, যাই ঘটুক। আমি তাদের পাশে ছিলাম, তারা আমার পাশে ছিলেন। সব সময় এই শিরোপা জিততে চেয়েছি। কারণ আমার মনে, প্রাণে বেঙ্গালুরু। আমি শেষ পর্যন্ত এই ক্লাবে খেলতে চাই। ক্রীড়াবিদ হিসেবে যখন আপনি কোন শিরোপার জন্য কাঁদবেন এর অর্থ ওটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই টুর্নামেন্টের মর্যাদা, গুরুত্বও বোঝা যায় এতে। আমি বড় টুর্নামেন্ট জিততেও চাই। এটাই কেবল মিসিং ছিল। আমি এবার শিশুর মতো একটা ঘুম দেব।

এতো বছর উৎসাহ ধরে রাখার উপায়: আমি এখনো মনে করি, অনেক বছর খেলে ফেলিনি। জুতো জোড়া একদিন তুলে রেখে নিজেই বলতে চাই, আমার এবার শেষ হলো। আমি ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার হিসেবে খেলতে চাই না। কারণ ২০ ওভারের টুর্নামেন্টে মাঠে থেকে ইমপ্যাক্ট রাখার সামর্থ্য আমার আছে। খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে আমি এভাবেই দেখি। এই জয়টা আমার একার নয়, এটা বেঙ্গালুরুর। খেলোয়াড়, স্টাফ, ফ্রাঞ্জাইজি, তাদের পরিবার সকলের। এটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি। আমি তরুণদের টেস্টে মনোযোগ দিতে বলবো। আমি মনে করি, টেস্টে ভালো করলে সব জায়গায় ভালো করা সম্ভব। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ