২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে মঙ্গলবার বেলা ৩টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদারের সঞ্চালনায় এই সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিনসহ আরও উপস্থিত রয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মানসুর প্রমুখ।
এর আগে গতকাল আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা—যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব
এছাড়াও পড়ুন:
‘প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব’
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কিছু প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, তালিকাভুক্ত কোম্পানি তথা পুরো পুঁজিবাজারই লাভবান হবে। যদিও এবারের বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রত্যক্ষভাবে কেনো প্রণোদনা রাখা হয়নি। তবে পুরো পুঁজিবাজার লাভবান হলে পরোক্ষভাবে বিনিয়োগকারীরাও উপকৃত হবেন। তাই একবারের প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজেটে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো- পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ২.৫০ শতাংশ বাড়ানো, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর লেনদেনর ওপর উৎসে কর হার ০.০২ শতাংশ কমানো ও মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানো।
সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন।এবার তিনি এবার ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।
আরো পড়ুন:
৫৯ দেশে বাংলাদেশ মিশনে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতিবিদ-ব্যবসায়ীরা
এবারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ২.৫০ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তাতে এই ব্যবধান দাঁড়াবে ৭.৫০ শতাংশ। বর্তমানে এই দুই ধরনের কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান ৫ শতাংশ। এক সময় এটি ১০ শতাংশ ছিল। গত চলতি অর্থবছরের বাজেটে এটি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর হারের ব্যবধান বাড়লে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে কিছুটা আগ্রহী হবে।
এবার স্টক ব্রোকারদের দাবির প্রেক্ষিতে বাজেটে লেনদেনর ওপর উৎসে করের হার কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে, আগামী অর্থবছরে ব্রোকারহাউজগুলোকে ০.০৩ হারে এই কর দিতে হবে। বর্তমানে লেনদেনের ওপর ০.০৫ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হতো এসব প্রতিষ্ঠানকে। ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর লেনদেনর ওপর উৎসে কর হার ০.০২ শতাংশ কমেছে। এতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সক্ষমতা বাড়বে।
এছাড়া বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো প্রকৃত অর্থে ব্যাংক না হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ব্যাংকের সমান হারে অর্থাৎ ৩৭.৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগামী অর্থবছরে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ২৭.৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সক্ষমতা বাড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মো. আল-আমিন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য যেসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। কিন্তু বাজেটে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো সুখবর নেই। তবে একটা ভালো দিক হলো-এ সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবছে, যা বাজেট বক্তৃতায় উঠে এসেছে। বিগত সরকারের বাজেটগুলোতে এমন চিত্র দেখা যায়নি। বাজেটে যেসব প্রস্তাব এসেছে তা বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারের স্টকহোল্ডারদের সক্ষমতা বাড়বে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান পরিস্থিতি পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক বাজেট বলা যেতে পারে।”
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ব্রোকারদের দাবির প্রেক্ষিতে বাজেটে লেনদেনর ওপর উৎসে করের হার কমানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরে ব্রোকারহাউজগুলোকে ০.০৩ হারে এই কর দিতে হবে। বর্তমানে লেনদেনের ওপর এটা দিতে হতো ০.০৫ শতাংশ হারে।এটা আমাদের দীর্ঘদিনে দাবি ছিল। অবশেষে এ সরকারকে আমরা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।সরকারের এমন সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। এতে হাউজগুলো ব্যবসায় টিকে থাকার সক্ষমতা বা[ড়বে।”
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে মার্চেন্ট ব্যাংকের করহার ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব খুবই ইতিবাচক। এতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আয় বাড়বে, আর্থিক সক্ষমতা বাড়বে। এই অর্থ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগের পাশাপাশি ভালো কোম্পানিকে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আনার জন্য কাজ করতে পারব।”
ঢাকা/এনটি/এসবি