অনলাইন ‘জুয়ার ফাঁদে’ যুবক, স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ
Published: 5th, June 2025 GMT
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত মাহবুব নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ মামলায় ১০ দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে তাঁর স্ত্রীর পরিবারের অভিযোগ, তিনি নিজেই স্ত্রীকে খুন করেছেন। পরে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়েছেন।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়েছে, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত মাহবুব স্ত্রী আকলিমা আক্তারকে (১৯) দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। নির্যাতনের বিষয়ে ভাইদেরও জানিয়েছিলেন তিনি। নির্যাতন করায় প্রায়ই কান্নাকাটি করতেন।
আকলিমার ভাই সুমন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৬ মে বেলা ৩টায় ফোন করে আকলিমার ভাইকে জানানো হয় তাঁর বোন আত্মহত্যা করেছেন। পরে পুলিশ গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে।
আকলিমার ভাইয়ের দাবি, তাঁর বোনকে হত্যা করে মরদেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়েছেন মাহবুব। পরে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
তবে আসামি মাহবুবের পক্ষ থেকে আদালতে দাবি করা হয়েছে, আকলিমা আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য মাহবুব কোনোভাবে দায়ী নন।
জানতে চাইলে কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আকলিমার মৃত্যুর ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা সম্ভব নয়।’
যেভাবে সংসারে অশান্তির শুরুপরিবার সূত্রে জানা গেছে, আকলিমা আক্তারের (১৯) গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বছর দেড়েক আগে তাঁর সঙ্গে মাহবুবের (২৪) বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে কামরাঙ্গীরচরের ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন তিনি। বিয়ের সময় আকলিমার তিন ভাই সাধ্যমতো মাহবুবকে সহযোগিতা করেন। বিয়ের আগে মাহবুব বলেছিলেন, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পরে তিনি একটি রঙের কারখানায় কাজ নেন। দুজনের সংসার ভালোই চলছিল। তবে অনলাইনে জুয়ার নেশা এবং ঠিকমতো কাজ না করায় সংসারে অনটন দেখা দেয়। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।
মামলার বাদী মো.
আকলিমার বড় বোনের স্বামী নূর আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাই শ্যালিকাকে বড় করেছেন। মাহবুবের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর সে সুখেই ছিল। পরে শুনতে পান, তাঁর ভায়রা জুয়ায় আসক্ত হয়েছেন।
পুলিশ যা বলছেআকলিমার পরিবারের এমন অভিযোগের বিষয়ে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, আকলিমার সঙ্গে মাহবুবের বিরোধের জের একটি শোবার খাটকে কেন্দ্র করে। আকলিমার ভাইদের কাছে খাট চেয়েছিলেন মাহবুব। সেই খাট দেননি তাঁরা। এ নিয়ে মাহবুবের সঙ্গে আকলিমার বিরোধ হয়। আবার মাহবুব অনলাইনে জুয়া খেলতেন, সেটি মামলার এজাহারে অভিযোগ এনেছেন আকলিমার ভাই সুমন।’
ওসি আরও বলেন, আকলিমার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
মাহবুবের বিচার দাবিআকলিমার ভাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বোনজামাই ঠিকমতো কাজ করতেন না। অনলাইন জুয়ায় আসক্ত ছিলেন। আয় না থাকায় সংসারে অশান্তির শুরু। এসব বিরোধের জের ধরে আমার বোনকে হত্যা করে ঝুলিয়ে দিয়েছেন মাহবুব। আমার বোনের মৃত্যুর জন্য দায়ী মাহবুবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ য় য় আসক ত আকল ম র ভ ই প রথম আল ক ন ম হব ব ম হব ব র আম র ব ন কর ছ ন করত ন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।