নতুন টাকার দাম বান্ডেলপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা বেশি
Published: 6th, June 2025 GMT
ঈদের ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার থেকে। তাতে খোলাবাজারে নতুন টাকার দাম বেড়ে গেছে। নতুন টাকা কিনতে বান্ডিলপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে মতিঝিল ও গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নতুন নোটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। একের পর এক ক্রেতাও আসছেন। তবে চড়া দাম শুনে দরদাম না করেই অনেকে চলে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির পরিবর্তে বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার প্রতিকৃতি–সংবলিত নতুন নোট ২ জুন বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে সীমিত পরিসরে ২০, ৫০ ও ১ হাজার টাকার নোট বিতরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিস ও সরকারি–বেসরকারি কিছু ব্যাংক শাখা। চাহিদার তুলনায় কম নোট বাজারে ছাড়ায় বেশির ভাগ ক্রেতা নতুন নোট হাতে পায়নি।
এমনিতে ঈদে নতুন নোটের বিক্রি ও চাহিদা দুটিই বেড়ে যায়। প্রতিবছর ঈদের আগে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হলেও এবার দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫০০ কোটি টাকার। ফলে এবার ব্যাংক কর্মকর্তারা চাহিদামতো নতুন নোট পাননি। এরপরও বিভিন্ন হাত ঘুরে খোলাবাজারে চলে এসেছে নতুন নোটের বান্ডিল। মতিঝিল ও গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের প্রতি বান্ডিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আর ১ হাজার টাকার নতুন নোট প্রতি পিটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়তি দামে।
এবারের ঈদে অনেক অল্প পরিমাণ নতুন নোট বাজারে এসেছে—এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও সেই সুযোগে নতুন নোটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। খোলাবাজারে নতুন নোটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার তাঁদেরও বাড়তি দামে নতুন নকশার নোট কিনতে হয়েছে, তাই বিক্রিও করছেন বাড়তি দামে।
এদিকে নতুন নকশার নোটের পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ নতুন নোটও বিক্রি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নতুন নকশার নোটের পাশাপাশি চলতি সপ্তাহে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ পুরোনো নকশার নতুন নোটও বাজারে ছাড়া হয়েছে। এ জন্য খোলাবাজারেও পুরোনো নকশার নতুন নোটও পাওয়া যাচ্ছে।
গুলিস্তান ও মতিঝিলে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো নকশার ৫ টাকার নতুন এক বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা বাড়তি দামে। ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার পুরোনো নকশার একেকটি বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি দামে। দর-কষাকষি করে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমেও কেউ কেউ একেকটি বান্ডিল কিনছেন; অর্থাৎ পুরোনো নকশার নতুন নোটের একেকটি বান্ডিল কিনতে ক্রেতাদের বাড়তি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের রাস্তায় ১৯৮০ সাল থেকে ছেঁড়া ও নতুন টাকার ব্যবসা করেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মচারী–কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নতুন নোট কেনেন। এ ছাড়া তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকেও সংগ্রহ করা হয় নতুন নোট। ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নকশার নোট কিনতে প্রতি বান্ডেলে ৬৫০ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। তাই আমরাও বিক্রি করছি বেশি দামে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বটতলায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আসিফ খানের সঙ্গে। ৫০ টাকার ১০টি নতুন নোট কিনতে তাঁকে বাড়তি গুনতে হয়েছে ১০০ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে নতুন টাকা না পেয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকের গেটের পাশে ভ্রাম্যমাণ নতুন নোটের দোকানে আসেন তিনি। আলাপকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, ঈদের দিন বাড়ির দারোয়ান ও কর্মচারীদের এই টাকা দেবেন। তাই নতুন নোট সংগ্রহ করতে এসেছেন। তবে এবার আগের বছরের চেয়ে দাম অনেক বেশি।
গুলিস্তানের খোলাবাজারের নতুন নোটের আরেক ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, এবার নতুন নোট ও পুরোনো নকশার সরবরাহ কম থাকায় ১০, ২০ ও ৫০ টাকার পুরোনো নোটের বান্ডিলপ্রতি দাম বেড়েছে।
কীভাবে চিনবেন নতুন টাকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান হাবিব মনসুর স্বাক্ষরিত ১ হাজার টাকা মূল্যমানের নতুন ব্যাংক নোটটি শতভাগ সুতি কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে থাকছে বেঙ্গল টাইগারের মুখ। নোটটিতে থাকছে বেগুনি রঙের আধিক্য। নোটের সামনে বাঁ পাশে থাকছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি। নোটের মাঝখানের ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা-কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলার ছবি মুদ্রিত রয়েছে। নোটের পেছনভাগে আছে জাতীয় সংসদ ভবনের ছবি।
গভর্নর স্বাক্ষরিত ৫০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটটিও শতভাগ সুতি কাগজে মুদ্রিত। এই নোটে জলছাপ হিসেবে থাকছে বেঙ্গল টাইগারের মুখ। নোটটিতে গাঢ় বাদামি রঙের আধিক্য। এটির সামনের বাঁ পাশে আহসান মঞ্জিলের ছবি। মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা-কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলার ছবি। আর পেছনে জলছাপের ডান পাশে থাকছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘সংগ্রাম’-এর ছবি। গভর্নর স্বাক্ষরিত ২০ টাকার ব্যাংক নোটটিও শতভাগ সুতি কাগজে মুদ্রিত। এটিতেও জলছাপ হিসেবে থাকছে বেঙ্গল টাইগারের মুখ। ২০ টাকার এই নোটে সবুজ রঙের আধিক্য। নোটটির সামনের বাঁ পাশে ঐতিহাসিক স্থাপনা কান্তজিউ মন্দিরের ছবি। নোটের মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা-কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলার ছবি এবং পেছনে জলছাপের ডান পাশে থাকছে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ছবি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট ক র নত ন ন নত ন ন ট র র নত ন ন ট ৫০ ট ক র নত ন ট ক ব যবস য় মত ঝ ল র স মন সহ প র জলছ প
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন টাকার দাম বান্ডেলপ্রতি ৮০০-১০০০ টাকা বেশি
ঈদের ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে বৃহস্পতিবার থেকে। তাতে খোলাবাজারে নতুন টাকার দাম বেড়ে গেছে। নতুন টাকা কিনতে বান্ডিলপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে মতিঝিল ও গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নতুন নোটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। একের পর এক ক্রেতাও আসছেন। তবে চড়া দাম শুনে দরদাম না করেই অনেকে চলে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির পরিবর্তে বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার প্রতিকৃতি–সংবলিত নতুন নোট ২ জুন বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে সীমিত পরিসরে ২০, ৫০ ও ১ হাজার টাকার নোট বিতরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিস ও সরকারি–বেসরকারি কিছু ব্যাংক শাখা। চাহিদার তুলনায় কম নোট বাজারে ছাড়ায় বেশির ভাগ ক্রেতা নতুন নোট হাতে পায়নি।
এমনিতে ঈদে নতুন নোটের বিক্রি ও চাহিদা দুটিই বেড়ে যায়। প্রতিবছর ঈদের আগে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হলেও এবার দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫০০ কোটি টাকার। ফলে এবার ব্যাংক কর্মকর্তারা চাহিদামতো নতুন নোট পাননি। এরপরও বিভিন্ন হাত ঘুরে খোলাবাজারে চলে এসেছে নতুন নোটের বান্ডিল। মতিঝিল ও গুলিস্তান ঘুরে দেখা গেছে, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের প্রতি বান্ডিল ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আর ১ হাজার টাকার নতুন নোট প্রতি পিটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বাড়তি দামে।
এবারের ঈদে অনেক অল্প পরিমাণ নতুন নোট বাজারে এসেছে—এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও সেই সুযোগে নতুন নোটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। খোলাবাজারে নতুন নোটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার তাঁদেরও বাড়তি দামে নতুন নকশার নোট কিনতে হয়েছে, তাই বিক্রিও করছেন বাড়তি দামে।
এদিকে নতুন নকশার নোটের পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ নতুন নোটও বিক্রি হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নতুন নকশার নোটের পাশাপাশি চলতি সপ্তাহে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ পুরোনো নকশার নতুন নোটও বাজারে ছাড়া হয়েছে। এ জন্য খোলাবাজারেও পুরোনো নকশার নতুন নোটও পাওয়া যাচ্ছে।
গুলিস্তান ও মতিঝিলে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো নকশার ৫ টাকার নতুন এক বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা বাড়তি দামে। ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার পুরোনো নকশার একেকটি বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি দামে। দর-কষাকষি করে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমেও কেউ কেউ একেকটি বান্ডিল কিনছেন; অর্থাৎ পুরোনো নকশার নতুন নোটের একেকটি বান্ডিল কিনতে ক্রেতাদের বাড়তি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের রাস্তায় ১৯৮০ সাল থেকে ছেঁড়া ও নতুন টাকার ব্যবসা করেন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মচারী–কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নতুন নোট কেনেন। এ ছাড়া তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকেও সংগ্রহ করা হয় নতুন নোট। ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নকশার নোট কিনতে প্রতি বান্ডেলে ৬৫০ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে। তাই আমরাও বিক্রি করছি বেশি দামে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বটতলায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আসিফ খানের সঙ্গে। ৫০ টাকার ১০টি নতুন নোট কিনতে তাঁকে বাড়তি গুনতে হয়েছে ১০০ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে নতুন টাকা না পেয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকের গেটের পাশে ভ্রাম্যমাণ নতুন নোটের দোকানে আসেন তিনি। আলাপকালে এই প্রতিবেদককে বলেন, ঈদের দিন বাড়ির দারোয়ান ও কর্মচারীদের এই টাকা দেবেন। তাই নতুন নোট সংগ্রহ করতে এসেছেন। তবে এবার আগের বছরের চেয়ে দাম অনেক বেশি।
গুলিস্তানের খোলাবাজারের নতুন নোটের আরেক ব্যবসায়ী জামাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, এবার নতুন নোট ও পুরোনো নকশার সরবরাহ কম থাকায় ১০, ২০ ও ৫০ টাকার পুরোনো নোটের বান্ডিলপ্রতি দাম বেড়েছে।
কীভাবে চিনবেন নতুন টাকা
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান হাবিব মনসুর স্বাক্ষরিত ১ হাজার টাকা মূল্যমানের নতুন ব্যাংক নোটটি শতভাগ সুতি কাগজে মুদ্রিত এবং নোটে জলছাপ হিসেবে থাকছে বেঙ্গল টাইগারের মুখ। নোটটিতে থাকছে বেগুনি রঙের আধিক্য। নোটের সামনে বাঁ পাশে থাকছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি। নোটের মাঝখানের ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা-কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলার ছবি মুদ্রিত রয়েছে। নোটের পেছনভাগে আছে জাতীয় সংসদ ভবনের ছবি।
গভর্নর স্বাক্ষরিত ৫০ টাকা মূল্যমানের ব্যাংক নোটটিও শতভাগ সুতি কাগজে মুদ্রিত। এই নোটে জলছাপ হিসেবে থাকছে বেঙ্গল টাইগারের মুখ। নোটটিতে গাঢ় বাদামি রঙের আধিক্য। এটির সামনের বাঁ পাশে আহসান মঞ্জিলের ছবি। মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা-কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলার ছবি। আর পেছনে জলছাপের ডান পাশে থাকছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘সংগ্রাম’-এর ছবি। গভর্নর স্বাক্ষরিত ২০ টাকার ব্যাংক নোটটিও শতভাগ সুতি কাগজে মুদ্রিত। এটিতেও জলছাপ হিসেবে থাকছে বেঙ্গল টাইগারের মুখ। ২০ টাকার এই নোটে সবুজ রঙের আধিক্য। নোটটির সামনের বাঁ পাশে ঐতিহাসিক স্থাপনা কান্তজিউ মন্দিরের ছবি। নোটের মাঝখানে ব্যাকগ্রাউন্ডে পাতা-কলিসহ প্রস্ফুটিত জাতীয় ফুল শাপলার ছবি এবং পেছনে জলছাপের ডান পাশে থাকছে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ছবি।