গ্রাহকেরা কেন ভোগান্তির শিকার হবেন
Published: 6th, June 2025 GMT
বিভিন্ন দাবি নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা লাগাতার আন্দোলন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে সংকট সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীন গ্রাহকেরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের সাত দফা দাবির মধ্যে আছে আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ ও সমিতির চেয়ারম্যানের অপসারণ।
গত জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন সমিতির কর্মীরা। এর ধারাবাহিকতায় ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। ঈদের ছুটির আগে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর ফলে দেশের অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, মেরামতের কাজও বন্ধ আছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন গ্রাহকেরা। এ অবস্থায় কয়েকটি স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। ৪ কোটি ৮২ লাখ বিদ্যুতের গ্রাহকের মধ্যে আরইবির গ্রাহক ৩ কোটি ৬৮ লাখ। দেশজুড়ে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার।
গত কয়েক দিনে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে বিএনপি, কমিউনিস্ট পার্টি, বাসদ, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তাঁদের পেছনে ফেরার উপায় নেই। দাবি আদায় করেই কাজে ফিরতে চান তাঁরা।
অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবিদাওয়ার বিষয়ে সরকার অনেকটা নির্বিকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, তাঁরা যেসব দাবি তুলে ধরেছেন, সেগুলো পূরণ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সড়ক অবরোধ করে কোনো সংগঠন আন্দোলন করলে সরকার দ্রুতই দাবি মেনে নেয়। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন সড়ক বন্ধ করেননি বলেই কি সরকারের চৈতন্যোদয় হচ্ছে না?
বিদ্যুৎ উপদেষ্টার এই যুক্তি মেনে নিয়েও বলব, সমস্যার সমাধান করতে হবে সরকারকেই। আন্দোলনকারী কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতে সমস্যা কোথায়?
সমিতির দাবি কতটা যৌক্তিক আর কতটা অযৌক্তিক, সেই বিতর্কের চেয়েও জরুরি প্রশ্ন হলো আন্দোলনের কারণে পল্লী অঞ্চলের গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বর্তমানে বর্ষার মৌসুম চলছে। কোথাও ঝড়বৃষ্টির কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে সেটা পুনঃস্থাপনেরও সুযোগ থাকছে না।
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের অভিযোগ, ২০১০ সাল থেকেই বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রেসক্রিপশনে পল্লী বিদ্যুৎকে বেসরকারীকরণের পরামর্শ দেওয়া হয়। গত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী এটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। সেটির দায় কেন এ সরকার নেবে?
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের সব দাবি এখন পূরণ করা সম্ভব না হলে, সেটাও তাঁদের বুঝিয়ে বলতে হবে। সংকট সমাধানে আলোচনার বিকল্প নেই। চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়োগ স্থায়ী করার ক্ষেত্রে আইনি বাধা থাকার কথা নয়।
জনস্বার্থ উপেক্ষা করে কোনো সংস্কারই প্রত্যাশিত নয়। এ ক্ষেত্রে কর্মীদের চাকরি সুরক্ষার পাশাপাশি গ্রাহকদের স্বার্থও সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা আশা করব, সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে এ সংকট নিরসনে কাজ করবে। গ্রাহকদের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে আন্দোলনকারীরাও অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে কীভাবে দাবি পূরণে সচেষ্ট হওয়া যায়, সেটিও দেখবেন আশা করি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত গ র হক র কর ম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে
বিপর্যয়ের মুখে পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। এর আগেই গতকাল মঙ্গলবার থেকে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণছুটিতে যান। ফলে দেশের অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা না থাকায় সরবরাহ ব্যবস্থা মেরামত কাজও করা যাচ্ছে না। সারাদেশে প্রায় ৪৮টি সমিতিতে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন দেড় কোটি গ্রাহক। কয়েকটি স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে হামলা চালিয়েছেন গ্রাহকরা।
দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দেশের ৪ কোটি ৮২ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে আরইবির গ্রাহক ৩ কোটি ৬৮ লাখ। দেশজুড়ে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগসহ নানা দাবিতে গত জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন সমিতির কর্মীরা। এর ধারাবাহিকতায় গত ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। আন্দোলনে গত কয়েক দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সংহতি জানিয়েছে। আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এখন আর পেছনে ফেরার উপায় নেই। আমরা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরব। কাজে ফিরব।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, তারা যেসব দাবি তুলে ধরেছেন, সেগুলো পূরণ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যেমন– পল্লী বিদ্যুৎ ও সমিতি একীভূত করা। এখানে আইনি নানা বিষয় রয়েছে। শহীদ মিনারে বসে থাকলে তো চলবে না। আবার তারা আরইবির চেয়ারম্যানের অপসারণ চেয়েছে। সরকার তো সমাবেশ দেখে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
বিদ্যুৎ নেই অনেক এলাকায়
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও ২, গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে গণছুটির কারণে লাইনম্যানরা কাজ করছেন না। ফলে ঝড়বৃষ্টিতে যে সব স্থানে লাইন বন্ধ হয়েছে, তা আর চালু করা সম্ভব হবে না। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম-২ সমিতির লাইনম্যানরা কাজ বন্ধ রাখেন। এতে কয়েকটি উপকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরে পবিসের সব লাইনম্যান কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।