আদিরূপ ফিরে পাচ্ছে বরিশালের লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি
Published: 8th, June 2025 GMT
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া জমিদারবাড়িকে তার আদিরূপে ফিরিয়ে আনতে সংস্কারকাজ শুরু করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। ধ্বংসপ্রায় প্রাসাদোপম এই ভবন সংরক্ষণের মাধ্যমে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্থাপত্যরীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।
বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের কর্মকর্তারা বলেন, বাবুগঞ্জ উপজেলার লাকুটিয়ায় অবস্থিত জমিদারবাড়ির সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে গত ৪ মে। সরেজমিনে দেখা যায়, দোতলা ভবনটির চারপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে গোলাকার ইটের পিলার। ভেঙে ফেলা হয়েছে পুরোনো ছাদ, সাতক্ষীরা থেকে আনা টালি দিয়ে নতুন ছাদ নির্মাণ করা হবে।
বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের সহকারী কাস্টেডিয়ান আরিফুর রহমান বলেন, প্রথম পর্যায়ে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে মূলত ভবনের ভিত্তি, ইটের গাঁথুনি ও ছাদ নির্মাণের কাজ হচ্ছে। তবে প্রাচীন দরজা-জানালা, মেঝে এবং আলো-বাতাস চলাচলের কাঠামো আপাতত এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত নয়। এগুলো পরবর্তী ধাপে যুক্ত করা হতে পারে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ‘পুরোনো ছবি ও ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে আমরা চেষ্টা করছি ভবনটিকে তার প্রকৃত রূপে ফিরিয়ে আনতে।’
জাদুঘর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, জমিদারবাড়ির উচ্চতা ৮ দশমিক ২০ মিটার, দৈর্ঘ্য ২৫ দশমিক ৪০ মিটার ও প্রস্থ ৯ দশমিক ২০ মিটার। দোতলা ভবনটিতে আছে মোট ৯টি কক্ষ। তবে বাড়ির এক পাশে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) গোডাউন ও ট্রাক্টর রাখার ঘর থাকায় ভবনটির নান্দনিকতা ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা। পেছনের পাকা উঠানে বীজ শুকানো হয়, যা এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার পরিবেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিঙ্কন বায়েন বলেন, ‘বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে জমিদারবাড়ির পাশেই বিএডিসির গুদাম ও স্থাপনা থাকায় এর সৌন্দর্য এবং প্রত্নতাত্ত্বিক আবেদন মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া জরুরি, না হলে ঐতিহাসিক গুরুত্ব কমে যেতে পারে।’
জেলা প্রশাসনের অর্পিত সম্পত্তিবিষয়ক কৌশলি সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, সরকার ইতিমধ্যে জমিদারবাড়ির সীমানাভুক্ত প্রায় আট একর জমি এবং একটি বড় পুকুরের মালিকানা পেয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
ঐতিহাসিক পটভূমিঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা গেছে, জমিদার রূপচন্দ্র রায় ছিলেন লাকুটিয়া জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নাতি রাজচন্দ্র রায়ের সময় জমিদারির পরিধি ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। তিনি প্রায় ৪৯ দশমিক ৫০ একর জমির ওপর মূল জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করেন। প্রজাদরদি হিসেবে খ্যাত রূপচন্দ্র রায়ের আমলেই লাকুটিয়া থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়ক নির্মিত হয়।
রূপচন্দ্রের দুই ছেলে রাখালচন্দ্র রায় ও প্যারীলাল রায় ছিলেন ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী। প্যারীলাল রায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যারিস্টার ও সমাজসেবক। তাঁর দুই পুত্র—বিখ্যাত বৈমানিক ইন্দ্রলাল রায় এবং নামকরা বক্সার পরেশলাল রায়—তাঁদের কীর্তির জন্য ইতিহাসে স্মরণীয়।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া জমিদারবাড়ির পুরোনো রূপ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের সেই বিদ্যালয়টি অবশেষে ভেঙেই পড়ল পদ্মা নদীতে
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি পদ্মা নদীতে ভেঙে পড়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি। বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবন নদীতে বিলীন হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার বিকেলে ভবনটির একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নটির একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও আরেক দিকে চাঁদপুর জেলা। ওই এলাকাটির চার দিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবারের বসবাস। ওই গ্রামের বাসিন্দারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁদের মধ্যে পড়ালেখার আগ্রহ কম। এ ছাড়া গ্রামটিতে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে ওই গ্রামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে সরকার। পরের বছর ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়। একতলা একটি পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চলছিল। সোমবার বিকেলে বিদ্যালয় ভবনের একটি অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে।
আরও পড়ুনযেকোনো সময় পদ্মায় বিলীন হতে পারে শরীয়তপুরের বিদ্যালয়টি১৯ ঘণ্টা আগেবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা জানান, ২০২৩ সালে বিদ্যালয়টি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করে। এ বছরের জুন মাসে সেই বালুর বস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভবনটি রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ভাঙনের কবল থেকে বিদ্যালয় ভবনটি রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙনের মুখে পড়লে ৪ সেপ্টেম্বরের থেকে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোববার বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে উত্তর মাথঅভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে