পবিত্র ঈদুল আজহা ও সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে ১০ দিনের ছুটিতে সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত রূপ নিয়েছে উৎসবের মিলন মেলায়। ঈদের দ্বিতীয় দিন (৮ জুন) সকাল থেকেই বেড়েছে পর্যটকের উপস্থিতি। যা ঈদের চতুর্থদিনও অব্যাহত রয়েছে। ফলে দেশের অন্যতম এই পর্যটনকেন্দ্রটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকরা সৈকত জুড়ে আনন্দে মেতেছেন। তীব্র গরমে একটু প্রশান্তি পেতে অনেকেই সমুদ্রের নোনা জলে গা ভাসিয়েছেন। অনেকে সৈকতের বেঞ্চিতে বসে উপভোগ করছিলেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পর্যটকদের অনেকেই বিভিন্ন বাহনে চড়ে তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর বন, শুটকি পল্লী, ঝাউবাগান, গঙ্গামতি, চর গঙ্গামতি ও কাঁকড়ার চরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখছেন। 

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, কুয়াকাটার ৯০ শতাংশ হোটেল-মোটেলের রুম বুকিং আছে। বিক্রি বেড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তৎপর রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ ও থানা পুলিশের সদস্যরা।

আরো পড়ুন:

রুমা ও থানচি যেতে পর্যটকদের বাড়তি আগ্রহ

ঈদের তৃতীয় দিন কুয়াকাটা পর্যটকে মুখর

ঢাকার কামরাঙ্গীর চর থেকে আসা সোলায়মান-রাহিমা দম্পতি বলেন, “সূর্য উদয় দেখতে খুব সকালে গঙ্গামতি সৈকতে এসেছি। মেঘের কারণে সূর্য উদয়টা ঠিকভাবে দেখতে পারলাম না। তবে, এখানের বন এবং সমুদ্রের ঢেউ বেশ দারুন লেগেছে।” 

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে আসা সোহেল বলেন, “আমরা তিতুমীর কলেজে পড়ি। ঈদের ছুটি উপভোগে ৮ বন্ধু মিলে কুয়াকাটা এসেছি। এখানের পরিবেশ সবকিছু ভালোই লেগেছে। আমরা সমুদ্রে সাঁতার কেটে সময় উপভোগ করছি।” 

সৈকত সংলগ্ন কসমেটিকস ও আচার ব্যবসায়ী সুলতান আকন বলেন, “ঈদের দ্বিতীয় দিন অল্প কিছু পর্যটক আসেন। সে সময় আমাদের পণ্য বিক্রির পরিমাণ অনেকটা কম ছিল। তবে, তৃতীয় দিন থেকে পর্যটক বেড়েছে এবং বিক্রিও ভালো হচ্ছে। আশা করছি, আগের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব।”

কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তাপস চন্দ্র রায় বলেন, “বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটে আমাদের বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আমাদের টহল টিম এবং সাদা পোশাকের সদস্যরাও মাঠে নিয়োজিত রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণে আমরা তৎপর রয়েছি।”

ঢাকা/ইমরান/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর যটক

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু