চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে জরুরি সেবা চলছে স্বল্প পরিসরে, দুর্ভোগে রোগীরা
Published: 10th, June 2025 GMT
এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গত বুধবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা সীমিত পরিসরে চালু হয়। তবে জরুরি সেবার বাইরে বাড়তি চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন অনেক রোগী।
আজ মঙ্গলবার সকালে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগে প্রায় অর্ধশত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছেন।
জরুরি বিভাগে সেবা চালুর পর এই রোগীরা হাসপাতালে আসেন। কিন্তু চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সেবা বন্ধ থাকায় অনেক রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরতে হচ্ছে।
ঢাকার বছিলার একটি বাসায় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন মো.
জসীম উদ্দিন জানান, তাঁর ছেলের চোখের বেশ কিছু পরীক্ষা দরকার। কিন্তু চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের বেশির ভাগ সেবা বন্ধ থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁদের অন্য কোথাও গিয়ে চোখের পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। জসীম উদ্দিন তাঁর সন্তানকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও শিশু হাসপাতাল ঘুরে পরীক্ষা করাতে পারেননি। এখন তিনি অপেক্ষা করছেন চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে সেবা পুরোপুরি সচল হওয়ার জন্য।
জসীম উদ্দিন বলেন, ‘শিশু হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাচ্চা মেশিন দেখলে কান্নাকাটি শুরু করে। অন্য হাসপাতালে পরীক্ষা করাতে না পেরে এখানে আবার ফেরত এসেছি। বেসরকারি কোনো হাসপাতালে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। অনেক খরচ। এখানে পরীক্ষা করাতে পারলে সবচেয়ে ভালো হতো। এ অবস্থায় বাচ্চার চোখ নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জরুরি বিভাগে এ মুহূর্তে প্রায় অর্ধশত রোগী আছেন। যাঁদের বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন আছে। আরও অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা আরও পাঁচজন সাধারণ রোগী ও জুলাই আহত ব্যক্তিদের পাঁচজন বিশেষায়িত ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। তবে জুলাই আহত রোগীদের ওয়ার্ডে প্রবেশ করা যায়নি। হাসপাতালের চতুর্থ তলার বিশেষায়িত ওয়ার্ডের ফটকে ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে তাঁরা অবস্থান করছেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আপাতত জরুরি সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। সংকট নিরসন করে আগামী শনিবার থেকে সব সেবা চালুর চেষ্টা করছি।’
হাসপাতালে চিকিৎসার অপেক্ষায় রোগীরাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।