গাইবান্ধার ভেলু রবিদাস (৫৬) পেশায় ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী। বাড়ি সাদুল্যাপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে। আশপাশের এলাকায় ঘুরে তিনি পশুর চামড়া কেনেন। পরে সেগুলো পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। এ বছর তিনি ২২৫টি গরু ও ১৩০টি ছাগলের চামড়া কিনে মজুত করেছেন। প্রতিটি গরুর চামড়া ৯০০ ও ছাগলের চামড়া ২৫০ টাকায় কিনেছেন। গরু ও ছাগলের প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে খরচ পড়েছে গড়ে ২০০ ও ১০০ টাকা করে।

সেই হিসাবে প্রতিটি গরুর চামড়া ক্রয়মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১০০ ও ছাগলের ৩৫০ টাকা। এসব চামড়া বিক্রি করতে হবে এর চেয়ে বেশি দামে। কিন্তু বাজারে সেই পরিস্থিতি নেই বলে দাবি করেছেন ভেলু। মোট ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকার চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তবে আশা করছেন, আগামীকাল বুধবার পলাশবাড়ী উপজেলার পশুর চামড়ার হাটে ভালো দাম পাবেন। ওই দিন সেখানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের আসার কথা আছে।

ভেলু রবিদাস বললেন, ‘দেনা করি ম্যালা ট্যাকার চামড়া কিনি চিনতাত পড়চি। একোনো বেচপ্যার পাই নাই। পাকেররা (পাইকার) কম দাম কয়। কম দামোত বেচলে নচ (লোকসান) হবি। বুদব্যারের দিন (আগামী বুধবার) পলাশবাড়ীত চামড়ার হাট বসপে। সেই দিন নাকি মোনতোরি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) আসপে। ওই হাটোত বেচি ভালো দাম পামো। সেই আশা নিয়া আচি। তারপরেও চিনতে, ভালো দাম পামো কিনে।’

প্রায় ৪০ বছর ধরে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে পশুর চামড়া কেনাবেচার হাটটি বসছে। শুরু থেকে প্রতিটি ঈদুল আজহার পর প্রথম বুধবারে এই হাট বসে। এর আগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে সংরক্ষণ করেন। আর অপেক্ষায় থাকেন হাটবারের।

চামড়ার হাটটিকে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্য দাবি করে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাইবান্ধা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সেখানে চামড়া বিক্রি করতে আসেন। হাটের দিন ঢাকা থেকে ট্যানারির মালিকের প্রতিনিধিরা চামড়া কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান।

পলাশবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল আলম বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন উপজেলার অস্থায়ী চামড়া সংরক্ষণাগার পরিদর্শনের পাশাপাশি ও স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এদিকে গাইবান্ধায় চামড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ঈদে পশুর চামড়ার দাম তুলনামূলক কম। বাজারে চামড়া অনেক, কিন্তু ক্রেতা কম। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ধারদেনা করে চামড়া ব্যবসায় লগ্নি করেছেন। সেই চামড়া তাঁরা বিক্রি করতে পারছেন না। চামড়া কিনে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন।

চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার এবার ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও ছাগলের চামড়া ১৭ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গ্রাম ঘুরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও ছাগলের চামড়া ২২ থেকে ২৫ টাকা দামে কিনে বিপাকে পড়েছেন। কারণ, সরকার নির্ধারিত দামে ট্যানারির মালিকেরা চামড়া কেনেন না।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোডের একটি চামড়ার আড়তে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা চামড়ায় লবণ দিচ্ছেন। কেউ ভালো চামড়া বাছাই করে স্তূপ করে রাখছেন। শ্রমিকদের কাজ তদারক করছেন আড়তের মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ী আরশাদ আলী। তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে কিছু চামড়া কিনে সংরক্ষণ করেছি। কিন্তু তাঁরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনেছেন। ফলে তাঁদের কাছ থেকে বেশি দামে চামড়া কিনতে মহাজনেরা আগ্রহী হচ্ছেন না। এখন সবার ভরসা আগামী বুধবারের পলাশবাড়ীর হাট।’

পলাশবাড়ী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর হাটের দিন ঢাকা থেকে ট্যানারির মালিকেরা চামড়া কিনতে আসেন। তাঁদের চাহিদার ওপর চামড়ার বাজার অনেকটাই নির্ভর করছে।

অন্যদিকে তদারকির অভাবে এ বছর ঈদের আগে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত অনেক গরু বেচাকেনা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেই না বুঝে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর চামড়া কিনে বিপদে পড়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ষ দ র ব যবস য় র ব যবস য় দ র উপজ ল র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দোয়ার ফজিলত ও আদব

দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)

আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)

মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)

‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)

দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)

দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)

নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)

নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)

দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।

হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ