ভারতের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় দিনাজপুরের হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বসানো হয়েছে মেডিকেল টিম, করা হচ্ছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, শুরু হয়েছে মাস্কের ব্যবহার।
মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুরে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বসানো হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে মেডিকেল টিম। মেডিকেল টিমের দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীদের করোনা ভাইরাসের উপসর্গ আছে কিনা তা হেল্থ স্ক্যানারের মাধ্যমে পরীক্ষা করছেন। ইমিগ্রেশনে সকলেই মাস্ক ব্যবহার করছে। এছাড়াও ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াত পাসপোর্ট ধারী যাত্রী এবং কাস্টমস ও সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরাও মাস্ক ব্যবহার করছেন।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত ওসি আবু তালেব বলেন, ‘‘করোনার বিষয়ে আমরা হিলি ইমিগ্রেশন সচেতন আছি। পাসপোর্ট ধারী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষার জন্য মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। হেলথ স্ক্যানারও বসানো হয়েছে। সকল যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। সবার মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে।’’
হিলি কাস্টমস সুপার শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা কাস্টমস সজাগ রয়েছি। অফিসে সবাই মাস্ক ব্যবহার করছি। এছাড়াও পাসপোর্টধারী যাত্রীদের মাস্ক ছাড়া অফিসে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।’’
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘ভারতে জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, দেশটির কিছু স্থানে ওমিক্রনের নতুন এক ধরণ বা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে। দেশে এ ধরণটি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে একটি মেডিকেল টিম বসানো হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সতর্কতার জন্য ভারত ফেরত সকল যাত্রীকে আমরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। যাত্রীদের স্ক্যানারের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা হচ্ছে। এছাড়াও যাত্রীদের করোনার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যদি কারও শরীরে করোনা বা ওমিক্রনের উপসর্গ পাওয়া যায় তাহলে যেন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে রাখা হয়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বর্তমানে করোনার যে নতুন উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে, সেটি তেমন মারাত্মক নয়। প্রথমে জ্বর-সর্দি কাশি হচ্ছে। নিয়মমাফিক চললে এটা প্রতিহত করা সম্ভব। এটা নিয়ে তেমন আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’
ঢাকা/মোসলেম/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র পর ক ষ কর ন র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের
প্রতিবছর জুলাই মাস বিশ্বব্যাপী ‘জরায়ুর ফাইব্রয়েড সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য নারীদের মধ্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এর সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা।
ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর একধরনের নন ক্যানসারাস টিউমার বা মাংসপিণ্ড, যা প্রজননক্ষম নারীদের হতে পারে। লেইওমায়োমা বা মায়োমা নামেও এটি পরিচিত। জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হয়। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে জীবনমানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।
লক্ষণ বা উপসর্গ
এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যায় পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব।
তলপেটে চাপ বা ব্যথা। শরীর ফুলে যাওয়া।
ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রনালির সমস্যা।
সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা।
গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব।
বয়স ও বংশগতির প্রভাব।
ওজনাধিক্য, হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি।
নির্ণয় ও চিকিৎসা
আলট্রাসাউন্ড, পেলভিক ইমেজিং, এমআরআই বা জরুরি ক্ষেত্রে হাইফু বা হিস্টেরস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড শনাক্ত করা যায়।
টিউমার ছোট হলে বা উপসর্গ না থাকলে ওষুধ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি, ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন, এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা জরায়ু অপসারণ করা হয়। চিকিৎসার ধরন বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন সচেতনতা জরুরি
ফাইব্রয়েড খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু অনেক নারী উপসর্গ পেয়েও সময়মতো এর চিকিৎসা নেন না। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্ষুধা, ক্লান্তি, বন্ধ্যত্ব নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
এই টিউমার ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ফাইব্রয়েড নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। ফাইব্রয়েড হলে সন্তান হবে না, এমন ধারণাও অমূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ