গাজার মুক্তিতে বিশ্বের দায় এবং ম্যাডলিন জাহাজ
Published: 12th, June 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপকূলের কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ৯ জুন ম্যাডলিন জাহাজকে আটকে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। জাহাজটিতে গ্রেটা থুনবার্গসহ সাতটি দেশের ১২ জন অ্যাক্টিভিস্ট মানবিক ও খাদ্য সহায়তা নিয়ে আসছিলেন। জাহাজটিতে ত্রাণ সহায়তা কতটা ছিল, তা বড় বিষয় নয়।
ফিলিস্তিনের ক্ষুধার্ত গাজাবাসীর জন্য সে সহায়তা হয়তো খুব বেশি উপকারও করতে পারত না। কারণ জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, গাজাবাসীর মৌলিক চাহিদা পূরণে সেখানে প্রতিদিন ৫০০ ট্রাক ত্রাণ সহায়তা দরকার। তারপরও ম্যাডলিন জাহাজটি গাজায় পৌঁছার আগেই যে ইসরায়েলি বাহিনী থামিয়ে দেবে– তা হয়তো অনুমিতই ছিল।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ম্যাডলিন জাহাজটি একটি মিশন সামনে নিয়ে চলছিল। এটি বিশ্ববাসী ও সরকারগুলোকে দেখাতে সক্ষম হয়– তারা এক চরম সত্যকে অস্বীকার করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে গাজার গণহত্যা বন্ধ এবং গাজাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করা তাদের দায়িত্ব ছিল, যা পালনে তাদের ব্যর্থতা ভোলার নয়।
এই ম্যাডলিন জাহাজটি ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) আয়োজনে চলছিল, যে গ্রুপটি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে ক্যাম্পেইন করছে। মে মাসে তাদের আরও নৌযান মাল্টার জলসীমার বাইরে ড্রোন হামলার শিকার হয়। ওই সময় তারা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গাজা সফর অব্যাহত রাখতে পারেনি। বলাবাহুল্য, এফএফসি গাজা অবরোধ তুলে দেওয়ার জন্য দেড় দশক ধরে আন্দোলন করে আসছে। ২০১০ সালে তুরস্ক থেকে ছয়টি জাহাজের একটি বহর গাজা উপত্যকার উদ্দেশে রওনা দেয়। সেগুলোকেও ইসরায়েলি সেনারা আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাধা দেয়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জাহাজ মাভি মারমারায় ইসরায়েলি কমান্ডোরা হামলা চালায়। তারা গুলি করে ৯ জন মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিককে হত্যা করে; সবাই ছিলেন তুরস্কের নাগরিক। এখন পর্যন্ত সেই হত্যাযজ্ঞের বিচার হয়নি।
সে ঘটনায় নোয়াম চমস্কি লিখেছিলেন: ‘দশকের পর দশক ধরে সাইপ্রাস ও লেবাননের মধ্যবর্তী আন্তর্জাতিক জলসীমায় নৌকা ছিনতাই করে আসছে ইসরায়েল। যাত্রীদের হত্যা, অপহরণ এবং কখনও তাদের ইসরায়েলি কারাগারে নিয়ে যায়। এমনকি গোপন নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যায়। আবার কখনও তাদের দীর্ঘদিন জিম্মি করে রাখে। ইসরায়েল মনে করে, এসব অপরাধ তারা নিরাপদেই চালিয়ে যেতে পারে। তাদের শাস্তি হয় না, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এসব প্রশ্রয় দেয় এবং ইউরোপ সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাকে।’
মাভি মারমারা ও ম্যাডলিন উভয় জাহাজকেই যেভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে; আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে তা অন্যায়। আন্তর্জাতিক জলসীমায় আন্তর্জাতিক অ্যাক্টিভিস্টদের আটক করার অধিকার ইসরায়েলের নেই। ফিলিস্তিনি-আমেরিকান আইনজীবী ও এফএফসির সংগঠক হুয়াইদা আরাফ বলেন, ‘এসব স্বেচ্ছাসেবক ইসরায়েলি আইনের এখতিয়ারে নয় এবং ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া কিংবা অবৈধ অবরোধকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তাদের অপরাধী করতে পারে না। তাদের আটক করা বিধিবহির্ভূত, অন্যায়। অনতিবিলম্বে তাদের ছেড়ে দিতে হবে।’ (ইতোমধ্যে অবশ্য তাদের চারজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।)
আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, যখন কোথাও জেনোসাইডের মতো ভয়ানক অপরাধ সংঘটিত হয় তখন জাতিসংঘ সদস্যদের তা থামাতে ভূমিকা রাখা উচিত। তাদের দায়িত্ব হলো, অবরোধ আরোপ করা এবং অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া। অথচ তার পরিবর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশির ভাগ সদস্য দেশ, ম্যাডলিন জাহাজের অধিকাংশ সদস্যই সেসব দেশের; আন্তর্জাতিক এই আইন তো মানছেই না, উপরন্তু ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। যদিও ইউরোপীয় জনগণের একটি বড় অংশ এই অস্ত্র রপ্তানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
ম্যাডলিন জাহাজের কর্মীরা জানতেন, তারা হয়তো তাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য তথা গাজায় পৌঁছাতে পারবেন না। তবুও তারা এই বিপজ্জনক মিশনে অংশ নিয়েছিলেন, যাতে বিশ্বকে গাজা অবরোধ ও তাদের সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, ‘আমরা এটি করছি কারণ যত বাধাই আসুক, আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ আমরা চেষ্টা থামালেই আমাদের মানবতা হারিয়ে যাবে।’
ম্যাডলিন সমুদ্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থেমে গেলেও এর বার্তা স্পষ্ট: অবরোধ অদৃশ্য নয় এবং এটি চিরস্থায়ীও নয়। প্রতিটি আটকানো জাহাজ, প্রত্যেক গ্রেপ্তারকৃত কর্মী, প্রতিটি প্রতিবাদ গাজার মুক্তির সংগ্রামে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করে। তার মানে, গাজাকে ভুলে থাকা যাবে না। যতক্ষণ মুক্তি না আসবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ সমুদ্রও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার সংগ্রামে সম্মুখসারির ভূমিকায় থাকবে।
ইয়ারা হাওয়ারি: ফিলিস্তিনি পলিসি নেটওয়ার্ক আল শাবাকার সহপরিচালক; আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল জ হ জট অন স র অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ