‘ভুল’ চিকিৎসার কারণে পচন ধরায় এক কয়লা শ্রমিকের পায়ের আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে হালুয়াঘাট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। 
একই ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। ভুক্তভোগী রাকিব মিয়া  হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া এলাকার রহিম উদ্দিনের ছেলে।
জানা গেছে, রাকিব মিয়া গোবরাকুড়া বন্দরে কয়লা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর আয়ে টেনেটুনে ছয় সদস্যের সংসার চলত। গত ৭ জানুয়ারি বন্দরে কাজ করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত একটি কয়লার স্তূপ বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে পড়ে যায়। এতে পায়ের নখসহ থেতলে যায়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে যান রাকিব। চিকিৎসা দেন জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা.

জাকারিয়া। পায়ের নখ তুলে ফেলার পরামর্শ দেন তিনি। পরে পরিবারের সম্মতিতে নখ তোলার সময় পা অবশের ইনজেকশন দেন ডা. জাকারিয়া। 
ভুক্তভোগী রোগীর দাবি, একে একে তিনটি ইনজেকশন দেন। এক পর্যায়ে পা অবশ হলে নখ তুলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্যাডে ওষুধের ব্যবস্থাপত্র লিখে ছুটি দিয়ে দেন। এ সময় এক হাজার টাকাও দিতে হয় ডা. জাকারিয়াকে। বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী যথারীতি ওষুধ সেবন করতে থাকেন। কিন্তু আঙুলের কোনো উন্নতি না হওয়ায় আবারও যান জরুরি বিভাগে। ওষুধ খাওয়া চালিয়ে যেতে বলেন ডা. জাকারিয়া। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। একপর্যায়ে পচন ধরতে শুরু করে আঙুলে। বাধ্য হয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১২ এপ্রিল ময়মনসিংহ শহরের বি আর বি প্রাইভেট হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক এক্স-রে করতে বলেন। এক্স-রে রিপোর্টে ধরা পড়ে, আঙুলের ভেতরে হাড়ের সঙ্গে ভাঙা সুঁইয়ের অংশ লেগে রয়েছে। 
রোগীর দাবি– ডা. জাকারিয়া অবশের ইনজেকশন দেওয়ার সময় ভাঙা সুঁইয়ের অংশ রেখে দিয়েছেন। এতে পচন ধরায় পুরো আঙুল কেটে ফেলার পরামর্শ দেন বি আর বি হাসপাতালের চিকিৎসক। সেখানে সাতদিন চিকিৎসা নেওয়ার পরও সুস্থ না হওয়ায় পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। এ কথা শুনে হাসপাতালে ৭০ হাজার টাকার বিল পরিশোধ করে জোর করে ছুটি নিয়ে চলে যান তারা। পরে ডা. জাকারিয়ার কাছে তারা ভুল চিকিৎসার কথা জানতে চাইলে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষ বরাবর ডা. জাকারিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয় রোগীর পরিবার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপসহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. জাকারিয়া সমকালকে বলেন, ‘যতদূর মনে পড়ে তিনি ৪-৫ মাস আগে এসেছিলেন, এরপর আর যোগাযোগ করেন নাই। হঠাৎ শুনি এমন ঘটনা।’ তবে ভাঙা সুঁই রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এমন ঘটনা কখনও হতে পারে না। তাঁর দাবি, মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাঁকে সামাজিকভাবে হেয় করতে চাচ্ছে একটি চক্র। আসলে এটি সুঁই কিনা খতিয়ে দেখা হলে সত্য বেরিয়ে আসবে।
হালুয়াঘাট থানার ওসি হাফিজুর রহমান হারুন জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রাণেশ চন্দ্র পণ্ডিতের ভাষ্য, ভুল চিকিৎসার বিষয়ে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সত্য জানা যাবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’

ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।

আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।

রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।

কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?

কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।

রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।

রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।

এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।

রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ