বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পদগুলোর একটি হলো চট্টগ্রাম বন্দর। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমের বেশির ভাগ পরিচালিত হয় এই বন্দরের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) দুবাইভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। 

সরকারের ভাষ্য, ডিপি ওয়ার্ল্ড পৃথিবীর অনেক দেশের বন্দর পরিচালনার কাজ করছে; তারা আন্তর্জাতিক মানের বন্দর পরিচালনায় দক্ষ। ডিপি ওয়ার্ল্ডের মতো অভিজ্ঞ কোম্পানির মাধ্যমে বন্দরের আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্ভব হবে এবং এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে এবং বন্দরের কার্যকারিতা বাড়বে। 

সরকারের ভাষ্যের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করে কেউ কেউ বলছেন, সমুদ্রবন্দর ইজারা কেবল অর্থনীতির বিষয় নয়; এটি একটি কৌশলগত বিষয়। এর ফলে জাতীয় সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোনো কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্ন উঠেছে।

এই চুক্তির আওতায় বিদেশি কোম্পানিগুলো পরিচালনা, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত এবং প্রবেশাধিকারসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। এর ফলে জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিদেশি কর্তৃত্বের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে; ভবিষ্যতে এ সম্পদ ঘিরে জটিলতা ও বিরোধের আশঙ্কা বাড়তে পারে, এমনকি জাতীয় নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে। ফলে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পরিচালনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া আদৌ কতটা যৌক্তিক? 

চট্টগ্রাম বন্দর শুধু একটি সমুদ্রবন্দর নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির প্রায় ৯২ শতাংশই এই বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। খাদ্যপণ্য, জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের নির্বিঘ্ন প্রবাহ নিশ্চিত করতে এই বন্দর অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এই বন্দর প্রতিবছর প্রায় তিন মিলিয়ন টিইইউ (২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনারের একক হিসাব) কনটেইনার হ্যান্ডল (পরিচালনা) করে। 

■ বন্দরের কর্মদক্ষতা কেবল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে না; ভৌগোলিক অবস্থান ও কাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ওপরও নির্ভর করে।  ■ বিদেশি অপারেটর নিয়োগ–সংক্রান্ত চুক্তির শর্তাবলি, সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করা আবশ্যক। 

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস যথার্থই চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে একে বাংলাদেশের ‘হৃৎপিণ্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। হৃৎপিণ্ড সবল না হলে যেমন শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, তেমনি এই বন্দর দুর্বল হলে দেশের অর্থনীতির কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটবে।

এখন প্রশ্ন আসে, এই ‘হৃৎপিণ্ড’ কে সবল রাখতে আমরা কোন পথ বেছে নেব? সঠিক জীবনযাপন ও স্বাস্থ৵বিধি মেনে শরীরচর্চা করে হৃৎপিণ্ডের সক্ষমতা বাড়াব, নাকি সহজ সমাধানের খোঁজে ‘বিদেশি দাওয়াইয়ের’ ওপর নির্ভর করব? আগেই বলা হয়েছে, সিদ্ধান্তটি কেবল অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত এবং এর সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা জড়িত। 

২.

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ২০০৭ সালে নির্মিত হয়, যার প্রাথমিক সক্ষমতা ছিল ১.১ মিলিয়ন টিইইউ। সাম্প্রতিক সময়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো সংযোজনের মাধ্যমে এটি আরও উন্নত করা হয়েছে। বর্তমানে দেশীয় ব্যবস্থাপনায় টার্মিনালটি বছরে ১.৩ মিলিয়ন টিইইউর বেশি কনটেইনার হ্যান্ডল করছে, যা তার নির্ধারিত সক্ষমতার চেয়েও বেশি।

এনসিটি প্রতিবছর এক হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, যে টার্মিনাল দেশীয় ব্যবস্থাপনায় সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং লাভজনকভাবে কাজ করছে, সেটি বিদেশি পরিচালনায় হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তা আসলে কতটুকু বাস্তবসম্মত?  

চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ব্যস্ত বন্দর হলেও এর দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অনেক কম। 

বর্তমানে একটি জাহাজ বার্থিংয়ের (জাহাজের অপেক্ষার সময়) জন্য চট্টগ্রামে তিন–চার দিন অপেক্ষা করে, সেখানে সিঙ্গাপুরে এটি মাত্র ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা এবং কলম্বোয় ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই সম্পন্ন হয়। একইভাবে কনটেইনার খালাসে চট্টগ্রাম বন্দরে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে, যা বিশ্বের শীর্ষ বন্দরে সাধারণত ২–৩ দিনের মধ্যে শেষ হয়; এর ফলে রপ্তানি ও আমদানির খরচ বেড়ে যায়। 

বন্দরের কর্মদক্ষতা কেবল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে না; ভৌগোলিক অবস্থান ও কাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ওপরও নির্ভর করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলী নদীর তীরে একটি সরু চ্যানেলে অবস্থিত, যেখানে পানির গভীরতা (ড্রাফট) প্রায় ৯ দশমিক ৫ মিটার যা আবার জোয়ার-ভাটার কারণে অনেক সময় কম-বেশি হয়। 

পানির অগভীরতার পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর সরু চ্যানেল, তীক্ষ্ণ বাঁক ও জোয়ার-ভাটার পরিবর্তন জাহাজ চলাচলে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে জাহাজের ‘টার্ন-অ্যারাউন্ড টাইম’ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। অবস্থানগত সীমাবদ্ধতার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতাকে সিঙ্গাপুর বা কলম্বো বন্দরের মানদণ্ডে সরাসরি মূল্যায়ন করা যৌক্তিক নয়।

প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা ছাড়াও আধুনিক স্ক্যানিং প্রযুক্তি ও ডিজিটাল সিস্টেমের অভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। অবকাঠামো ও গুদাম ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা পণ্য হস্তান্তরে বিলম্ব ঘটায় আর শ্রমিকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতার ঘাটতি অপারেশনাল কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই চট্টগ্রাম বন্দরের চ্যালেঞ্জ কেবল কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েই সীমাবদ্ধ নয়, এর কার্যকর সমাধানে প্রয়োজন কাস্টমস–প্রক্রিয়ার দ্রুততর ডিজিটালাইজেশন, শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং গুদামজাতকরণ ও পরিবহনব্যবস্থার আধুনিকীকরণ।

৩.

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০২৩ সালে; সরকারের সঙ্গে সরকার (জিটুজি) আলোচনার মাধ্যমে। তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বন্দর নিয়ে কেন একই নীতি অনুসরণ করছে?

বিষয়টি শুধু একটি সরকারের সিদ্ধান্ত নয়; বরং এটি এক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মতবাদ—‘নব উদারনৈতিক (নিউ লিবারেল) দর্শনের প্রতিফলন।’ এই দর্শনের লক্ষ্য হলো বাজারব্যবস্থার সম্প্রসারণ, সরকারি সম্পদের বেসরকারীকরণ, নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে মূলধনের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর জন্য প্রবেশাধিকারের পথ উন্মুক্ত করা।

বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইএফসি, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো এই দর্শন বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে চলেছে। তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বৈদেশিক বিনিয়োগের নামে কৌশলগত খাতগুলোতে বেসরকারীকরণে উৎসাহ দিচ্ছে, যা অনেক সময় জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। 

একাধিক উদাহরণ থেকেই বোঝা যায়, এ ধরনের চুক্তির পরিণতি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে; যেমন আফ্রিকার ছোট্ট দেশ জিবুতি ২০০৬ সালে দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ‘ডোরালে কনটেইনার টার্মিনাল’ পরিচালনার জন্য ৫০ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছিল। শুরুতে বিনিয়োগ ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। ফলে ২০১৮ সালে জিবুতি সরকার একতরফাভাবে চুক্তি বাতিল করে। জবাবে ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংস্থায় মামলা করে এবং পরে ক্ষতিপূরণ দাবি করে জয়লাভও করে।

এ ধরনের উদাহরণ শুধু আফ্রিকায় নয়, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতেও দেখা গেছে। যেমন ২০১৪ সালে কেনিয়ার মোম্বাসা বন্দরের একটি টার্মিনাল চীনা কোম্পানি সিআরবিসিকে দিয়েছিল। শুরুতে রাজস্ব বাড়লেও পরে স্থানীয় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ কমে যায়। কারণ, চীনা কোম্পানিগুলো নিজস্ব শ্রমিক ও সরবরাহব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল।

বিশ্বব্যাংকের ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যেসব অবকাঠামো প্রকল্পে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) বা বেসরকারীকরণ বাস্তবায়িত হয়েছে, সেগুলোর ৪২ শতাংশ ক্ষেত্রে আর্থিক ঝুঁকি ও দায় শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রকেই বহন করতে হয়েছে। শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ও কেনিয়ার মতো দেশের অভিজ্ঞতা বলছে, বিদেশি কোম্পানিকে কৌশলগত খাতের নিয়ন্ত্রণ দিলে স্থানীয়দের ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা কমে যায়।

এ ছাড়া একাধিক গবেষণা দেখিয়েছে, কৌশলগত খাতে বেসরকারীকরণ টেকসই উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি; বরং আয়বৈষম্য, শ্রমবাজার সংকোচন এবং সামাজিক অসন্তোষ বেড়েছে।  ওইসিডির ২০২২ সালের এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, যথাযথ নিয়ন্ত্রণক্ষমতা ছাড়া কৌশলগত সম্পদের বেসরকারীকরণ দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন ও দর–কষাকষির ক্ষমতা দুর্বল করে।

৪.

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, দক্ষতা বাড়ানোর একমাত্র উপায় কি বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর ব্যবস্থাপনা তুলে দেওয়া? ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশেই নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল একটি সৌদি কোম্পানির অধীন পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী বার্ষিক পাঁচ লাখ টিইইউ হ্যান্ডল করার কথা থাকলেও এক বছর পর গড় হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৩ শতাংশ। সেখানে এখনো পর্যাপ্ত গ্যান্ট্রি ক্রেন বসানো হয়নি এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল ও টার্মিনাল অটোমেশন গড়ে তোলা হয়নি। অনেকের মতে, ২০২৩ সালে সৌদি অপারেটরের সঙ্গে করা চুক্তিটি জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। 

  এ দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে, শুধু বিদেশি অপারেটর আনলেই দক্ষতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত হয় না। অবকাঠামো, জনবল ও সুশাসনের ঘাটতি থাকলে তারাও ব্যর্থ হয়। একই অভিজ্ঞতা আফ্রিকার মোমবাসা ও লাতিন আমেরিকার গুয়ায়াকিল বন্দরে দেখা গেছে; যেখানে বিদেশি পরিচালনা সেবার মান বাড়াতে পারেনি, বরং দুর্বল চুক্তি, শ্রমিক অসন্তোষ ও অতিরিক্ত খরচের মতো সমস্যা তৈরি করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়াতে সবচেয়ে দ্রুত, সহজ এবং স্বল্প ব্যয়ে বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ হলো কাস্টমস সংস্কার। বর্তমানে একটি কনটেইনার ক্লিয়ারেন্সে গড়ে সাত দিন লাগে, অথচ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী এটি এক–দুই দিনে সম্ভব। বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিকস পারফরম্যান্স সূচক অনুযায়ী, কাস্টমস দক্ষতায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩২ দেশের মধ্যে ১০০তম; যা আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আধুনিক স্ক্যানার, স্বয়ংক্রিয় রিস্ক ম্যানেজমেন্ট, ২৪/৭ অপারেশন ও দক্ষ জনবল নিশ্চিত করা গেলে বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া ছাড়াই বন্দরের সামগ্রিক স্থবিরতা অনেকাংশে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

৫.

এনসিটি পরিচালনা বিষয়ে দুবাইভিত্তিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ইজারার শর্তাবলি এখনো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। এর ফলে চুক্তির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতি কিংবা কৌশলগত ঝুঁকি সম্পর্কে স্বচ্ছ ও বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন করা দুরূহ। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বলছে, বিদেশি অপারেটর নিয়োগে বন্দরের দক্ষতা বাড়লেও কনটেইনার চার্জ বৃদ্ধি, শ্রমিক অধিকার সংকোচন, কৌশলগত তথ্যঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক বিরোধের আশঙ্কা বাড়ে। 

বিশ্বব্যাংকের একটি গবেষণা অনুযায়ী, বেসরকারীকরণে বন্দর পরিচালনার ব্যয় ২০–৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের অভিজ্ঞতায়ও দেখা গেছে, বিদেশি অপারেটরের নিয়ন্ত্রণে বন্দরের পরিচালনা সরাসরি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাপের মুখে ফেলে। ভারতের মুন্দ্রা ও শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দরে বিদেশি অপারেশনের অধীন কনটেইনার চার্জ ২০–৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যবসায়িক ব্যয় ও  প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে আর এই প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। তবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সমাধান শুধু বিদেশি অপারেটরের ওপর নির্ভর করে সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি সুসমন্বিত বহুমাত্রিক রোডম্যাপ; যেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন এবং নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার একসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কাস্টমস প্রক্রিয়া, অপারেশনাল ব্যবস্থাপনা, শ্রমিক ব্যবস্থাপনা এবং পণ্য পরিবহন ও গুদামজাতকরণসহ সমগ্র লজিস্টিকস শৃঙ্খলকে আধুনিক ও কার্যকর করতে হবে একটি সমন্বিত পদ্ধতির মাধ্যমে।

চট্টগ্রাম বন্দরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ নিয়ে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিদেশি অপারেটর নিয়োগ–সংক্রান্ত চুক্তির শর্তাবলি, সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করা আবশ্যক। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া হতে হবে খোলামেলা, অংশগ্রহণমূলক এবং

প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের ভিত্তিতে; যাতে দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো সমভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। একই সঙ্গে এ রকম একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ ও আলোচনার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। 

গোলাম রসুল অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা


* মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব সরক র করণ ব শ বব য প রক র য় ক স টমস সরক র র র ওপর ন অবস থ ন অবক ঠ ম ক শলগত দ র বল র জন য অন য য় গ রহণ ক ষমত এনস ট

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ও জামায়াতের কাছে কেন আরপিওর ২১ ধারা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল

নির্বাচনের আগেই সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকটাই মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এ নিয়ে গত ছয় দিনে দল দুটির পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর ২১ ধারার সংশোধনীর পরিবর্তন। জামায়াত মনে করে, সরকার বিএনপির চাপে নতি স্বীকার করে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত খসড়া সংশোধনী বাতিল করেছে। আর বিএনপি মনে করে, জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশের খসড়ায় ২১ ধারার পরিবর্তন করে; যা গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদিত হয়। আরপিওর ২১ ধারা সংশোধনীর ওই পরিবর্তন বহাল থাকলে কোনো দল জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে বাধ্য ছিল। ৩০ অক্টোবর সেটি আবার পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে জোটগত নির্বাচন করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এতে জামায়াত বেশ ক্ষুব্ধ হয়।

যদিও সরকারের দিক থেকে এই নতুন সিদ্ধান্তের তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে সরকার-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সেটি শুধু বিএনপির দাবির কারণে নয়, ছোট বিভিন্ন দলেরও দাবি ছিল।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার নিশ্চিত করেছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবেই। আমরা সরকারের কথায় বিশ্বাস করি। সুতরাং এখন থেকে আমাদের সব কার্যক্রম নির্বাচনকেন্দ্রিক। এখন সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কীভাবে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করবে, সেটি তাদের বিষয়। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারকে যতটুকু সহযোগিতা দেওয়া দরকার, সেটা বিএনপি করবে।’

বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে...একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব, বিএনপি

এ দিকে আজ সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভা হবে। তবে অন্য দিন রাতে সভা হলেও আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় সভা বসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আজকের সভায় আলোচ্যসূচিতে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিষয় থাকবে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন–সংক্রান্ত বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।

হঠাৎ কেন সামনে এল আরপিওর সংশোধনী

আরপিওর ২১ ধারার সংশোধন বিএনপি ও জামায়াতের কাছে হঠাৎ করে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, সে প্রশ্ন সামনে এসেছে। গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের সভায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়। এর পরেই সরকার আরপিওর ২১ ধারার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, নতুন সিদ্ধান্তে বিএনপি উপকৃত হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো, এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ভোটের হিসাব-নিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হতো বিএনপি। অন্য দিকে এতে লাভবান হয় জামায়াতসহ তার মিত্র দলগুলো। এর হিসাবটা হচ্ছে, ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আছে একসঙ্গে নির্বাচন করার জন্য এবং সংসদ সদস্য পদে জোটের প্রার্থী হওয়ার আশায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ প্রতীককে ছোট দলগুলোর নেতারা জয়ের ক্ষেত্রে ‘ভরসা’ হিসেবে দেখেন।

...যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছে না। সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের নায়েবে আমির, জামায়াত

এখন জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হলে ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করতে খুব আগ্রহী হবে না। এর কারণ দুটি। প্রথমত, বিএনপির সমর্থন পেলেও ব্যক্তি জনপ্রিয়তা না থাকলে ছোট দলগুলোর নেতাদের নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করে জেতা কঠিন হয়ে পড়বে। অন্য দিকে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপি আসন ছাড় দিলেও দলের কেউ বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে ভোটে জেতা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিদ্রোহীকে সরাতে বিএনপির নেতৃত্ব কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সে প্রশ্নও আছে।

এ ছাড়া এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে যে আটটি দল আছে, তারা আরপিওর ওই ধারা পরিবর্তনের পক্ষে। অর্থাৎ দলগুলো জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে—এর পক্ষে। এর জন্য দলগুলো যৌথ কর্মসূচিও করছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জামায়াত যে নির্বাচনী জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা করতে চাইছে, সে দলগুলো পরস্পর আস্থাশীল। তাদের কাছে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বা ‘হাতপাখা’ বা ‘রিকশা’ প্রতীক কোনো বিষয় নয়। সমঝোতা হলে সবাই ওই প্রতীকের পক্ষে এক হয়ে কাজ করবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা নেই। অন্যদিকে বিএনপির জোটের ক্ষেত্রে ভাবনা হচ্ছে, ধানের শীর্ষ প্রতীক না দিলে ভোটের আগেই আসন হারানোর আশঙ্কা থাকবে।

গতকাল সকালে এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, একটি দলের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে সরকার আরপিওর সর্বশেষ সংশোধনী বাতিল করেছে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বাতিল করা হলে সেটি ন্যক্কারজনক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হবে।

আরপিওর ২১ ধারার এই সংশোধনীর ফলে জোটে ভোট করলেও নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হতো। এতে জামায়াত খুশি হলেও বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো অস্বস্তিতে পড়েছিল। এ কারণে এর পরিবর্তন চেয়ে বিএনপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন উপদেষ্টাকে পৃথক চিঠি দেয়।

ঐকমত্য কমিশন সুপারিশের পর থেকেই উত্তাপ

২৮ অক্টোবর জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ জমা দেয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে—সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। এই সময়ের মধ্যে সংবিধান সংশোধন না করলে আপনা–আপনি সেটা সংবিধানে যুক্ত হবে। এ ছাড়া গণভোট কবে, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন নাকি তার আগে—সেটা ঠিক করবে সরকার।

চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ

বিএনপি প্রথমত ক্ষুব্ধ হয় বাস্তবায়নের সুপারিশ থেকে ভিন্নমত বাদ দেওয়ায়। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন, ২৭০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া, সেটা না হলে আপনা-আপনি সংবিধানে যুক্ত হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে দলটির আপত্তি আছে। দলটি গণভোট আগে নয়, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে চায়। জামায়াতের অবস্থান এর পুরো বিপরীত।

এসব নিয়ে পরস্পরকে লক্ষ্য করে দল দুটির রাজনৈতিক বক্তৃতা-বিবৃতি ক্রমেই বাড়তে থাকে। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।

গতকাল দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা দেখছি যে বাংলাদেশের শত্রুরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে, ততই বাংলাদেশে একটা অ্যানার্কিক সিচুয়েশন, একটা পুরোপুরি নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে।’

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে এটা আসছে যে জামায়াত নির্বাচন পেছাতে চায়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এমন বক্তব্য অবশ্য বিএনপি আরও আগে থেকেই দিয়ে আসছে।

এর আগের দিন শনিবার বিএনপির মহাসচিব জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে যতটা বাধা সৃষ্টি করেছেন, সেটা আপনারা করেছেন।’

পাল্টা বক্তব্য এসেছে জামায়াতের দিক থেকেও। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের গতকাল বিকেলে ঢাকায় এক সেমিনারে বলেছেন, ‘বিএনপি ভেতরে-ভেতরে আবার ফ্যাসিস্ট হওয়ার একটা খায়েশ আছে মনে হচ্ছে। যে কারণে ফ্যাসিজমের যে রাস্তা, আমরা সংস্কারে বন্ধ করতে চেয়েছিলাম, এগুলো ওনারা বন্ধ করতে দিচ্ছেন না।’

অবশ্য সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতই উসকানি দিক, জামায়াত বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চায় না। মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক আছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দূর করে স্পষ্ট করা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। সুতরাং আসুন আমরা সব ভুলে আলোচনায় বসি।’

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এই মুখোমুখি অবস্থা চলতে থাকলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, একটা চরম অনৈক্যের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটি রাষ্ট্রের জন্য সুখকর নয়। যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুক্ত ছিল, তারা কীভাবে হারানো ঐক্য ফিরে পেতে পারে, সেটি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখা দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ