তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদসহ আগের দাবিগুলোর বিষয়ে নমনীয় থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে বিএনপি। সরকারকে রাজনৈতিকভাবে চাপে রাখার জন্য দলটি এসব দাবি সামনে নিয়ে এসেছিল। লন্ডনে ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠকের পর জ্যেষ্ঠ নেতারা এমন অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

গত শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে মতৈক্য হয়। সংস্কার ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে অগ্রগতি হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একমত হন তারা।
বিএনপির একাধিক নেতা সমকালকে বলেন, এর মধ্য দিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের দূরত্ব যেমন কমে আসবে, তেমনি জনগণও নির্বাচন নিয়ে স্বস্তি অনুভব করবে। অন্তর্বর্তী সরকারও স্বাচ্ছন্দ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে পারবে।

বিএনপি সম্প্রতি যে তিন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিল, তারা হলেন– জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। শেষের দু’জন অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের প্রতিনিধি। তরুণরা নতুন দল করায় এবং এ দু’জন সরকারে থাকায় সরকারের নিরপেক্ষতা থাকছে না বলে দাবি করেছিল বিএনপি।

আর করিডোরসহ একাধিক বিষয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় খলিলুর রহমানের পদত্যাগ চেয়েছিল বিএনপি। লন্ডন বৈঠকের প্রথম পর্বে ড. ইউনূসের সঙ্গে খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। হোটেল ডরচেস্টারে তারেক রহমানকে স্বাগত জানান এবং বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিং করেন এই নিরাপত্তা উপদেষ্টা। বিএনপির সূত্র জানায়, এখন এই তিনজনের বিষয়ে নমনীয় থাকবে দলটি।

বিএনপি নেতাদের প্রত্যাশা, এখন নির্বাচন কমিশন (ইসি) দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার উদ্যোগ নেবে। সরকার সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ করবে। এর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়াও এগিয়ে যাবে, দেশ নির্বাচনমুখী হবে।

দক্ষিণ সিটির মেয়র পদ
আদালতের রায়ের পর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে শপথ অনুষ্ঠানের দাবি করে নগর ভবন ঘেরাও করে ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। তারা নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। রাস্তা অবরোধ করে। সেখান থেকে এসে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাস ভবন যমুনার কাছে কাকরাইলে অবস্থান নেয়। ঈদের কারণে এ কর্মসূচিতে বিরতি ছিল। 

গতকাল বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বিষয়েও তারা নমনীয়তা দেখাবেন।  আজ রোববার বেলা ১১টায় ইশরাক হোসেন নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। এখান থেকে ঢাকাবাসীর কষ্ট লাঘবে নাগরিক সেবা চালু করার কথা ঘোষণা করতে পারেন তিনি।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে সবার মধ্যে স্বস্তি এসেছে। এটিকে ধরে রাখতে হবে। সবাই সবার অবস্থান থেকে করণীয় নির্ধারণ করে এগিয়ে যাবেন। সংস্কার হবে, বিচার হবে, নির্বাচনও হবে। 

মতৈক্যে স্বস্তি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সমকালকে বলেন, লন্ডন বৈঠকটি ছিল যুগান্তকারী ও জাতির জন্য দিকনির্দেশনামূলক। এ বৈঠকে গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। জাতি দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। সেই অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে।

স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘পলিটিক্স ইজ অ্যান আর্ট অব কম্প্রোমাইজ, অর্থাৎ রাজনীতি আপসের শিল্প। এ কথাটি আমরা অনুসরণ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা অনুধাবন করেছেন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণে আবহাওয়া, রমজান, পাবলিক পরীক্ষার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রমজান মাস শুরুর এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছেন। আশা করি, সেই সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে তিনি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) যথাযথ প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলবেন।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জাতি গঠনের প্রক্রিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শকে কাজে লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছি। দেশের একজন সম্মানিত নাগরিক হিসেবে তিনি অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ প্রদান করবেন বলেও আশা করি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন উপদ ষ ট প রক র য় ব এনপ র সরক র র র জন য নমন য় রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু

ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি শুরু করেছে নেপাল। ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপাল এই প্রথম ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করছে, যা দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।

রবিবার (১৫ জুন) পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ (পিজিবি) সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

পিজিবি দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শনিবার রাত ১২টা থেকে এই বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়েছে। আজ রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ৩৮ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে।

আরো পড়ুন:

গ্রাহকদের জরুরি বার্তা দিল ডেসকো

বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ‘নাকাল’ কুবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহালের ভারত সফরের সময় এই বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে সময় তিন দেশ আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংযোগ জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হবে। নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুসারে, এই বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ইউনিট ০ দশমিক ০৬৪ ডলার বা ৬ দশমিক ৪ সেন্ট।

এরই ধারাবাহিকতায়, ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি সই হয়। এতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল–নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথোরিটি (এনইএ), বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম (এনটিপিসি)।

ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, নেপাল ২০২৫ সাল থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। এর অর্থ হলো, বছরের একটি নির্দিষ্ট শুষ্ক মৌসুমে নেপালের এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ