ধাপে ধাপে ইরানে হামলার যে কৌশল নেয় ইসরায়েল
Published: 15th, June 2025 GMT
একে একে সব বাধা ধ্বংস করে পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করে। পরিকল্পনা সফল করতে কিছুটা সময় লাগলেও অবশেষে ইরানে বড় হামলা চালায় ফিলিস্তিন দখলকারী দেশটি। তাদের এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন মূলত শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর মধ্য দিয়ে। ইরানে গত শুক্রবারের হামলা সেই পরিকল্পনার শেষ পদক্ষেপ। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপে ইসরায়েল ধীরে ধীরে ইরানকে দুর্বল করে ফেলে। তবে এই সংঘাত কোথায় শেষ হবে, তা বলা কঠিন। দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল যে আক্রমণ শুরু করেছিল, তাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হন। গাজায় এত এত বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণ তারা করেছে, হামাস সামরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলে পারেনি।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইরান হামাসের মতো কতগুলো সশস্ত্র সংগঠন তৈরি করেছিল। ফলে গত এক দশকে দেশটি এই অঞ্চলে পুরোপুরি শক্তি নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম হয়। ইরানের প্রধান লক্ষ্য ছিল, পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া। যাতে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে।
ইসরায়েল ২০২৪ সালের এপ্রিলে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলা চালায়। এই হামলায় ইরানের সামরিক কর্মীসহ অন্তত সাতজন নিহত হন। এর জবাবে ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে হামলা করে বসে। কিন্তু সেই ড্রোনগুলো ইসরায়েলকে কাবু করতে ব্যর্থ হয়। এভাবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চলেছে দীর্ঘকাল। এখন সেই সংঘাত দুই দেশের মধ্যে সরাসরি পর্যায়ে চলে এসেছে।
হামাস দুর্বল হয়ে পড়লে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে কাজে লাগায় ইরান। হিজবুল্লাহর মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইরান। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল ব্যাপক হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর মজুত রাখা অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে। তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই লেবাননের কেন্দ্রস্থলে ভয়াবহ হামলা চালাতে সক্ষম হয় দখলদার দেশটি। এতে হিজবুল্লাহ বড় পরাজয়ের শিকার হয়। যদিও সশস্ত্র সংগঠনটি যুদ্ধে জয়লাভের দাবি করে।
হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হলে ইরান আরেক দফা সরাসরি হামলা চালায় ইসরায়েলের ওপর। এই হামলার অধিকাংশই আকাশ প্রতিরক্ষার মাধ্যমে ফিরিয়ে দেয় তেল আবিব। এতেই মূলত ইরানের দুর্বলতা সম্পূর্ণ প্রকাশ পেয়ে যায়। ফলে ইসরায়েলের সামনে ইরানে বৃহত্তর হামলার পথ খুলে যায়। অন্যদিকে, হিজবুল্লাহর দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ার পরই সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পরিণতিতে ইরানসমর্থিত আসাদ সরকারের পতন ঘটে। এতে তেহরান-দামেস্কের মধ্যে গড়ে ওঠা কয়েক দশকের সম্পর্ক চূর্ণ হয়ে যায়। সিরিয়ায় ইরানের লক্ষ্যবস্তু আরও সহজ হয়ে ওঠে ইসরায়েলের জন্য।
সিরিয়া ও লেবাননে হিজবুল্লাহ যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন ইরানের সামনে শুধু হুতি গোষ্ঠীই অবশিষ্ট ছিল। এই হুতিরাই এখনও ইরানের সমর্থনে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা লোহিত সাগরে ইসরায়েলের মিত্রদের জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যাপক বাধা সৃষ্টি করে। সমুদ্রপথে হামলা করে একের পর এক জাহাজ দখল করতে শুরু করে। তেল আবিবে তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়ে।
এসব ঘটনার পর চলতি বছরের শুরুতে ইরানের প্রতিরক্ষা খাতের দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। এই দুর্বলতার সুযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তেহরানে চূড়ান্ত আঘাত হানার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
গত এপ্রিলে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আরও একটি হুমকি সৃষ্টি করে। ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দেয়, ৬০ দিনের মধ্যে ইরান যদি পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে না আসতে পারে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় ইসরায়েল দাবি করে বসে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি চলে গেছে এবং তেহরানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ইরানে বড় হামলা চালিয়ে ইসরায়েল সেই ক্ষোভ উগরে দেয়।
এই যুদ্ধ শেষ হলে ইরান হয়তো দুর্বল হয়ে পড়বে, কিন্তু দেশটি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের প্রতি আনুগত্য দেখাবে– এমন ভাবা বোকামি হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র দ র বলত সশস ত র
এছাড়াও পড়ুন:
এনসিপির জাতীয় ছাত্রশক্তির কমিটি ঘোষণা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে জাহিদ–বাকের
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রে সভাপতি হয়েছেন জাহিদ আহসান, সাধারণ সম্পাদক আবু বাকের মজুমদার। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরীকে সভাপতি ও আল আমিন সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার রাত ১০টায় এই দুই কমিটি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) থেকে নাম বদলে জাতীয় ছাত্রশক্তি হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় সংগঠনটির চার সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলো। আর সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি তিন সদস্যের।
জাতীয় ছাত্রশক্তির নতুন কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদ আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আবু বাকের মজুমদার—দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জাহিদ এর আগে বাগছাসের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আর বাকের সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চার সদস্যের আংশিক কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন দুজন। সাংগঠনিক সম্পাদক (উত্তরাঞ্চল) পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু তৌহিদ মো. সিয়াম আর সাংগঠনিক সম্পাদক (দক্ষিণাঞ্চল) করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহির আলমকে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশিত হবে।
ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন সরকারও বাগছাসের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। এই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে মো. সাইফুল্লাহকে। তাঁদেরও সাত কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হয়েছে।
তাহমিদ আল মুদ্দাসসির