একে একে সব বাধা ধ্বংস করে পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করে। পরিকল্পনা সফল করতে কিছুটা সময় লাগলেও অবশেষে ইরানে বড় হামলা চালায় ফিলিস্তিন দখলকারী দেশটি। তাদের এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন মূলত শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর মধ্য দিয়ে। ইরানে গত শুক্রবারের হামলা সেই পরিকল্পনার শেষ পদক্ষেপ। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপে ইসরায়েল ধীরে ধীরে ইরানকে দুর্বল করে ফেলে। তবে এই সংঘাত কোথায় শেষ হবে, তা বলা কঠিন। দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল যে আক্রমণ শুরু করেছিল, তাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হন। গাজায় এত এত বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণ তারা করেছে, হামাস সামরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলে পারেনি। 

মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইরান হামাসের মতো কতগুলো সশস্ত্র সংগঠন তৈরি করেছিল। ফলে গত এক দশকে দেশটি এই অঞ্চলে পুরোপুরি শক্তি নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম হয়। ইরানের প্রধান লক্ষ্য ছিল, পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়া। যাতে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। 

ইসরায়েল ২০২৪ সালের এপ্রিলে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে হামলা চালায়। এই হামলায় ইরানের সামরিক কর্মীসহ অন্তত সাতজন নিহত হন। এর জবাবে ইরান প্রথমবারের মতো সরাসরি ইসরায়েলে হামলা করে বসে। কিন্তু সেই ড্রোনগুলো ইসরায়েলকে কাবু করতে ব্যর্থ হয়। এভাবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ চলেছে দীর্ঘকাল। এখন সেই সংঘাত দুই দেশের মধ্যে সরাসরি পর্যায়ে চলে এসেছে। 

হামাস দুর্বল হয়ে পড়লে লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে কাজে লাগায় ইরান। হিজবুল্লাহর মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইরান। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল ব্যাপক হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর মজুত রাখা অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে। তেমন কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই লেবাননের কেন্দ্রস্থলে ভয়াবহ হামলা চালাতে সক্ষম হয় দখলদার দেশটি। এতে হিজবুল্লাহ বড় পরাজয়ের শিকার হয়। যদিও সশস্ত্র সংগঠনটি যুদ্ধে জয়লাভের দাবি করে। 

হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হলে ইরান আরেক দফা সরাসরি হামলা চালায় ইসরায়েলের ওপর। এই হামলার অধিকাংশই আকাশ প্রতিরক্ষার মাধ্যমে ফিরিয়ে দেয় তেল আবিব। এতেই মূলত ইরানের দুর্বলতা সম্পূর্ণ প্রকাশ পেয়ে যায়। ফলে ইসরায়েলের সামনে ইরানে বৃহত্তর হামলার পথ খুলে যায়। অন্যদিকে, হিজবুল্লাহর দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়ার পরই সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পরিণতিতে ইরানসমর্থিত আসাদ সরকারের পতন ঘটে। এতে তেহরান-দামেস্কের মধ্যে গড়ে ওঠা কয়েক দশকের সম্পর্ক চূর্ণ হয়ে যায়। সিরিয়ায় ইরানের লক্ষ্যবস্তু আরও সহজ হয়ে ওঠে ইসরায়েলের জন্য। 

সিরিয়া ও লেবাননে হিজবুল্লাহ যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন ইরানের সামনে শুধু হুতি গোষ্ঠীই অবশিষ্ট ছিল। এই হুতিরাই এখনও ইরানের সমর্থনে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা লোহিত সাগরে ইসরায়েলের মিত্রদের জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যাপক বাধা সৃষ্টি করে। সমুদ্রপথে হামলা করে একের পর এক জাহাজ দখল করতে শুরু করে। তেল আবিবে তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়ে। 

এসব ঘটনার পর চলতি বছরের শুরুতে ইরানের প্রতিরক্ষা খাতের দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। এই দুর্বলতার সুযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তেহরানে চূড়ান্ত আঘাত হানার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। 

গত এপ্রিলে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আরও একটি হুমকি সৃষ্টি করে। ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দেয়, ৬০ দিনের মধ্যে ইরান যদি পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে না আসতে পারে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় ইসরায়েল দাবি করে বসে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি চলে গেছে এবং তেহরানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সর্বশেষ গত শুক্রবার ইরানে বড় হামলা চালিয়ে ইসরায়েল সেই ক্ষোভ উগরে দেয়। 

এই যুদ্ধ শেষ হলে ইরান হয়তো দুর্বল হয়ে পড়বে, কিন্তু দেশটি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের প্রতি আনুগত্য দেখাবে– এমন ভাবা বোকামি হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র দ র বলত সশস ত র

এছাড়াও পড়ুন:

বিজিএমইএর নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, সহসভাপতি হলেন যাঁরা

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদ হাসান খান। তাঁর নেতৃত্বাধীন নবনির্বাচিত পর্ষদ ২০২৫-২৭ সাল মেয়াদে পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ এই সংগঠনটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে আজ শনিবার সংগঠনটির নতুন সভাপতিসহ সাতজন সহসভাপতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিজিএমইএর নির্বাচন বোর্ডের এক আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন বোর্ড জানায়, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রতিটি পদে কেবল একটি করে বৈধ মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে এবং কোনো আপিল দায়ের হয়নি। এ কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন না হওয়ায় সব প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।

নতুন কমিটিতে বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কেডিএস গ্রুপের এমডি সেলিম রহমান। জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অনন্ত গার্মেন্টসের এমডি ইনামুল হক খান। সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সফটেক্স সোয়েটারের এমডি মো. রেজওয়ান সেলিম, ফেব্রিকা নিট কম্পোজিটের এমডি মিজানুর রহমান (অর্থ), দেশ গার্মেন্টসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বা ডিএমডি ভিদিয়া অমৃত খান, এমিটি ডিজাইনের এমডি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী এবং ফ্যাশন ওয়্যারের এমডি মোহাম্মদ রফিক চৌধুরী।

২০২৫-২৭ সাল মেয়াদে বিজিএমইএর পরিচালনা কমিটির নতুন সদস্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তারুণ্যের ভাবনায় লাল সবুজ সোসাইটি
  • বিজিএমইএর নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, সহসভাপতি হলেন যাঁরা
  • ‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’