ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুর এই চার জেলা নিয়ে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পেরোলেও নিজস্ব ভবন পায়নি এই শিক্ষা বোর্ড। বর্তমানে নগরীর কাঠগোলায় পৃথক দুটি ভাড়া ভবনে চলছে কার্যক্রম। শিক্ষা উপকরণ রাখার জন্য আরও তিনটি আলাদা ভবন ভাড়া নেওয়া হলেও সেগুলোর অবস্থা নাজুক।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, ভবন ১ ও ২ এর মধ্যবর্তী দূরত্ব দুই কিলোমিটার। আবার গুদামগুলোর অবস্থানও নগরীর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে। এতে দুই অফিস ও গুদামগুলোতে কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীর।
তাছাড়া জনবল সংকটেও ধুঁকছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এখন পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসিত এই প্রতিষ্ঠানটির নির্দিষ্ট কোনো অর্গানোগ্রাম নেই। ১২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি চলছে মাত্র ২২ জন কর্মকর্তা ও ১৯ জন কর্মচারী দিয়ে।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের কাঠগোলা বাজারে ভবন ১-এ কার্যক্রম চলে চেয়ারম্যান, সচিব, হিসাব ও আইটি শাখার। এই ভবনের নিচতলায় গাদাগাদি করে থাকেন আনসার সদস্যরা। আর ভবন ২-এ আছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর, স্কুল-কলেজ পরিদর্শন শাখা।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দুটি মূল ভবন ও তিনটি গুদাম বাবদ প্রতিমাসে ৭ লাখ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। শিক্ষা বোর্ডে নিজস্ব ভবন থাকলে বছরে কোটি টাকা ভাড়া বেচে যেত সরকারের।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.

মো. শহিদুল্লাহ যোগদান করেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে। তিনি সমকালকে জানান, বোর্ডের ভবন তৈরির জন্য চারটি জমি প্রাথমিকভাবে দেখা হয়েছে। এর মধ্যে রহমতপুর বাইপাস এলাকায় ১ দশমিক ৯৫ একরের একটি জমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে পরিদর্শন করা হয়েছে।
পরে প্রতি ফ্লোরে ১০ হাজার বর্গফুটের ১০ তলা ভবনের চাহিদা দিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আট বছরে কেন নিজস্ব ভবন হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এ বছরই বোর্ডে যোগদান করেছি। আগে জমি কেনা ও ভবনের কাজ কেন হয়নি তা আগের চেয়ারম্যানরা বলতে পারবেন।’
সরেজমিন দেখা যায়, ভবন ১ ও ২ এ ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পরীক্ষার খাতা ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র নিতে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা এই ভবন থেকে ওই ভবনে বারবার যাতায়াত করছেন। দুই ভবনের দূরত্ব ২ কিলোমিটার এবং গুদামগুলো আরও দূরে হওয়ায় এগুলো সংগ্রহ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।
জামালপুরের শ্রীপুর কুমারিয়া এম এইচ কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আনোয়ার উল্লাহ বলেন, আগে পরীক্ষা-সংশ্লিষ্ট দাপ্তরিক কাজে তাদের ঢাকায় যেতে হতো। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড হওয়ায় ভেবেছিলেন কষ্ট কমবে। কিন্তু বোর্ডের ভবনগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্থানে হওয়ায় কষ্ট আরও বেড়ে গেছে।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, দুই ভবন ও গুদামে দৌড়ঝাঁপ করে কাজের গতি কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থায়ী ভবন জরুরি হয়ে পড়েছে। এসব সমস্যা নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক ড. দিদারুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। 
জানা গেছে, জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে আইটি শাখার কাজ স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে করতে পারছে না ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এ ক্ষেত্রে ফলাফল তৈরি ও রেজিস্ট্রেশন করার জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডের সহায়তা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, তারা চেয়েছিলেন এই পরিস্থিতিতে মূল দুটি ভবনকে একীভূত করতে। ভবন ১ ছেড়ে দিয়ে ভবন ২-এর কাছাকাছি একটি বাড়ি ভাড়া নিতে পারলে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ও সেবা গ্রহীতাদের অনেকটা হয়রানি মুক্ত করা যেত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এক নম্বর ভবনে থাকা আইটি শাখাকে স্থানান্তর করে নতুন ভবনে নিয়ে যেতে অনেক টাকা খরচ হবে। এতে সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই চিন্তা করে নতুন কোনো বাড়ি ভাড়াও নিতে পারছেন না।
জানা যায়, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে সরকারিভাবে বরাদ্দ একটিমাত্র গাড়ি বোর্ড চেয়ারম্যান ব্যবহার করছেন। বৃহৎ পরিসরে পরিচালিত শিক্ষা বোর্ডের জন্য আরও দুটি গাড়ি সরকারের কাছে চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা চলাকালীন ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরে যাতায়াত করতে হয় ভাড়া করা গাড়িতে।
সাহিত্যিক ও ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, সরকার ও জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অফিস তৈরি করার জন্য বিশাল বিশাল খাস জমি বরাদ্দ দেয় অথচ ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের জন্য একটি জমি বরাদ্দ দিতে পারে না। শিক্ষা খাতের উন্নয়নে সরকার এখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। 
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক সৈয়দ আখতারুজ্জামান জানান, ইতোপূর্বে ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার শিক্ষা বোর্ডকে ৩ একর জায়গা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান অতিরিক্ত অহংকার করে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বর্তমানে জমি কিনে নিজস্ব ভবন তৈরি করার মতো পর্যাপ্ত টাকা বোর্ডের হাতে নেই। তাঁর ভাষ্য, ভাড়া করা ভবনে পরীক্ষার সরঞ্জাম রাখতে গিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হয়। এসব ভবনে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আবার দুর্ঘটনা ঘটলে পরীক্ষার খাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
গত ১৫ মার্চ ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের জমি কেনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাইট পরিদর্শনে যান ময়মনসিংহ শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, নগরের বাইপাস মোড়ে ১ দশমিক ৯৫ একর জমি কেনার জন্য বোর্ড থেকে চিঠি দেয়। সে অনুযায়ী জমি পরিদর্শন করে ২৩ মার্চ প্রধান প্রকৌশলী বরাবর প্রতিবেদন পাঠান হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত পর ক ষ ন ত রক র জন য সরক র ভবন ১ ই ভবন র ভবন ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার

দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।

দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্‌রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’

তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’

আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫

মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা

সম্পর্কিত নিবন্ধ