আমের দাম পড়ছে কেন, কী বলছেন ব্যবসায়ীরা
Published: 16th, June 2025 GMT
এবার আমের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু দামে মার খাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। ভরা মৌসুমে বাজারে আমের ভালো দাম না পেয়ে হতাশ তাঁরা। আমের দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণের কথা বললেন ব্যবসায়ীরা।
অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন জাতের আম আগেভাগেই পেকে গেছে। ঈদের ছুটিতে ব্যাংক ১০ দিন বন্ধ থাকায় লেনদেন বন্ধ ছিল। ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির পর এখন অনেকের হাতে টাকাপয়সা নেই। তাই বাজার ভরা আম, কিন্তু ক্রেতা নেই। এসব কারণেই এবার আমের দাম পড়ে গেছে।
আরও পড়ুনকেন এবার একসঙ্গে পেকে যাচ্ছে ক্ষিরশাপাতি, আম্রপালি, ল্যাংড়া১৫ জুন ২০২৫গতকাল রোববার চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, রাজশাহীর বানেশ্বর ও নওগাঁর সাপাহারে বড় তিনটি আমার বাজার ঘুরে প্রথম আলোর প্রতিবেদকেরা আমের দাম নিয়ে চাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে হতাশার কথা শুনেছেন।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি ওসমান আলী বললেন, এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে আগেই আম পেকে গেছে। বেশ কিছু জাতের আম একসঙ্গে পেকে গেছে। বাজারে আমের প্রচুর আমদানি হয়েছে। ঈদের পরে ঢাকার যে ব্যাপারীদের আম কিনতে রাজশাহীতে আসার কথা, তাঁদের অর্ধেকও এখনো আসেননি। ফলে বাজারে আমের আমদানি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু কেনার লোক নেই। এ জন্য আমের বাজারে ধস নেমেছে।
কানসাট আমের বাজারে কথা হয় কয়েকজন আমচাষির সঙ্গে। তাঁদের মতে, ঈদের দীর্ঘ ছুটি, অনলাইনে আম পাঠানো ক্রেতাদের অনুপস্থিতি, অতিরিক্ত গরমে আম পেকে যাওয়া, আম্রপালি, কার্টিমন, এমনকি বারি-৪ জাতের আমও আগাম বাজারে চলে আসায় ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া জাতের আমের দরপতন হয়েছে।কানসাটের বাজারগতকাল সকালে কথা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট আমের বাজারের আড়তদার সাহেব আলীর সঙ্গে। তিনি বললেন, তিনি মাঝারি মানের ক্ষীরশাপাতি (হিমসাগর নামেও চেনেন অনেকে) আম কিনেছেন ২ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে। ৫২ কেজিতে মণ ধরে এ আম কেনা হয়। কেজির হিসাবে ধরলে পড়বে ৪৩ টাকা ২৫ পয়সা।
সাহেব আলী জানান, বাজারে এখন ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া জাতের আমই প্রধান। ভালো মানের আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মণ দরে। সবচেয়ে নিম্নমানের আম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে। ল্যাংড়া আম বিক্রি হচ্ছে আরও কমে। ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।
কানসাট আমের বাজারে কথা হয় কয়েকজন আমচাষির সঙ্গে। তাঁদের মতে, ঈদের দীর্ঘ ছুটি, অনলাইনে আম পাঠানো ক্রেতাদের অনুপস্থিতি, অতিরিক্ত গরমে আম পেকে যাওয়া, আম্রপালি, কার্টিমন, এমনকি বারি-৪ জাতের আমও আগাম বাজারে চলে আসায় ক্ষীরশাপাতি ও ল্যাংড়া জাতের আমের দরপতন হয়েছে। ঈদের আগে যে দরে আম বিক্রি হয়েছে, এখন তার চেয়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কমেছে আমের দাম।
এখানকার ব্যবসায়ীরাও বলছেন, গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে নাক ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গোসহ বিভিন্ন জাতের আম।নওগাঁর বাজারআমের ‘নতুন রাজধানী’খ্যাত নওগাঁয় এবার আম পাড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেওয়া সময়সীমা অনুসারে আম্রপালি আম বাজারে আসার কথা ছিল ১৮ জুন থেকে। কিন্তু প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের প্রায় ১৫ দিন আগে থেকেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে আম্রপালি। শুধু আম্রপালি নয়, প্রায় সব জাতের আম এবার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পেকে গেছে।
এখানকার ব্যবসায়ীরাও বলছেন, গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে নাক ফজলি, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ব্যানানা ম্যাঙ্গোসহ বিভিন্ন জাতের আম।
এসব ল্যাংড়া আম প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, আম্রপালি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা, নাক ফজলি ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, ব্যানানা ম্যাঙ্গো ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা এবং বারি আম-৪ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে।
অথচ গত বছর এ সময়ে নওগাঁর বাজারে ল্যাংড়া আম প্রতি মণ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, আম্রপালি ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, নাক ফজলি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
কথা হয় সাপাহার আম বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে আম্রপালি, নাক ফজলি, বারি আম-৪, ল্যাংড়া, ব্যানানা ম্যাঙ্গো আগেভাগেই পেকে গেছে। গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি ও নাক ফজলি আম বাজারে ওঠার চার-পাঁচ দিন দাম ঠিকমতো পেলেও সময়ের আগেই আম্রপালি ও ল্যাংড়া আম বাজারে উঠতে শুরু করায় দরপতন শুরু হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ জ র ৮০০ থ ক ১ হ জ র ৮০০ আম র ব জ র ব যবস য় র হ জ র ২০০ আম ব জ র আম র দ ম জ ত র আম আম ব ক র ন ক ফজল র আম র
এছাড়াও পড়ুন:
শেয়ারবাজারে লেনদেন-খরা কাটছে না, হতাশ বিনিয়োগকারীরা
ঈদের ১০ দিনের ছুটির পর লেনদেন শুরুর প্রথম দিনেই বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। দীর্ঘ ছুটির পর আজ রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় দরপতনে। যদিও দিন শেষে সূচক ও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে তা বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী হওয়ার মতো নয়। উল্টো ভালো মৌল ভিত্তির কিছু শেয়ারের দরপতন বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
ঢাকার বাজারে রোববার লেনদেন হওয়া ৩৯২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৯টিরই দরপতন হয়েছে, দাম বেড়েছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৮টির দাম। লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দামের উত্থান–পতনের প্রভাবে দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে। আর লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৯ কোটি টাকা বেশি।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারের লেনদেন বর্তমানে যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারও জন্যই তা আশান্বিত হওয়ার মতো না। এই লেনদেনে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিচালন খরচ তোলায় দুঃসাধ্য হয়ে গেছে। ফলে অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মাস শেষে বাজার থেকে পরিচালন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে। একইভাবে লেনদেন থেকে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো যে কমিশন আয় করে তা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালন খরচ উঠছে না।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বাজেটকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘোষিত বাজেটে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো সুখবর ছিল না। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে হতাশা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে বাজারে কোনো বিনিয়োগকারী তো আসছেনই না, উল্টো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরাও সুযোগ পেলে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাজার দীর্ঘ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ রোববার সূচকের পতনে যেসব কোম্পানি বড় ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে ছিল ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, রেনাটা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইউনাইটেড পাওয়ার ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এসব কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে আজ ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ পয়েন্ট কমেছে। তার বিপরীতে সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, লাভেলো আইসক্রিম, সিটি ব্যাংক, এসিআই, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও বীকন ফার্মা। এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি ১৮ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে।
লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিকে ভালো মৌল ভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে, অন্যদিকে কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি সেই পতনকে রোধ করেছে। এই কারণে দিন শেষে সূচকটি ইতিবাচক ধারায় ছিল।
ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের এক–পঞ্চমাংশ বা প্রায় ২০ শতাংশই ছিল খাদ্য খাতের দখলে। এ খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি টাকা। যার প্রায় অর্ধেকই আবার একটি কোম্পানির, সেটি লাভেলো আইসক্রিম। রোববার ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। দিন শেষে ২৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। মূলত লাভেলো আইসক্রিমের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করেই এদিন খাদ্য খাত লেনদেনের শীর্ষে জায়গা করে নেয়। খাতভিত্তিক লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। এই খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতকে এদিন লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে রাখার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ব্র্যাক ব্যাংকের। ঢাকার বাজারে আজ রোববার ব্র্যাকের ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। সেই হিসাবে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই ছিল ব্যাংকটির একক লেনদেন।
বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন নতুন করে কোনো আশা দেখছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। বাজেটকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটি পূরণ না হওয়ায় হতাশা আরও বেড়েছে। যার প্রভাব বাজারে পড়ছে।