তামাক সহজলভ্য নেশাদ্রব্য। এতে দেশের অগণিত মানুষ আসক্ত। ৩১ মে ছিল বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। ‘ধূমপান ত্যাগ কর এবং জয়ী হও’ প্রতিপাদ্যে তামাক ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে দিবসটি উদযাপন করে এডাস্ট সুহৃদ সমাবেশ। অনুষ্ঠিত হয় ‘তামাকবিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা। কর্মসূচির বিস্তারিত নিয়ে…
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (এডাস্ট) সমকাল সুহৃদ সমাবেশ আয়োজিত সেমিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারীমৈত্রীর পরিচালক খালিদ বিন ইউসুফ। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুল কাইউম সরদার আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমপিএইচ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো.
প্রধান আলোচক খালিদ বিন ইউসুফ তথ্যচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার ও এর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরী তামাক ব্যবহার করছে। তামাক কোম্পানিগুলো তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে চটকদার প্যাকেট, ফ্লেভার এবং বিজ্ঞাপনী কৌশল ব্যবহার করছে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর টোব্যাকো কন্ট্রোলের ২০২২ সালের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ১৫-ঊর্ধ্ব আনুমানিক চার কোটি মানুষ তামাকজাত পণ্য নিয়মিত ব্যবহার করে। এর এক-চতুর্থাংশ নারী। এই সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যায় বিশ্বে পঞ্চম এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার ১৩৫ জন তামাকজনিত রোগে মারা যান। তামাক ব্যবহারের কারণে বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় প্রায় ৩৯ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা।
আব্দুল কাইউম সরদার আলম বলেন, ‘তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর লাখো মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী ও প্রাণঘাতী রোগের পেছনে তামাক অন্যতম প্রধান কারণ। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী জনসমক্ষে ধূমপান নিষিদ্ধ বিজ্ঞাপন ও প্রমোশন নিষিদ্ধ, স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বাধ্যতামূলক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে এসব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ, স্কুলে তামাকবিরোধী শিক্ষা অন্তর্ভুক্তি, মোবাইল ফোনে তামাকবিরোধী বার্তা প্রচার, চিত্রায়িত স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ লেবেল বাধ্যতামূলক করা, এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর ভূমিকা, গবেষণা ও তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়ানোর কথা রয়েছে। তারপরও তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে তামাক ব্যবহার বেড়েছে।’ তিনি শিক্ষার্থীদের তামাক তথা ধূমপান থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন।
সূচনা বক্তব্যে সুহৃদ প্রধান উপদেষ্টা শারমিন আকতার তামাকবিরোধী সচেতনতায় পরিবারের ভূমিকার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। এই পর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য এবং তামাকজনিত বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধান আলোচক।
প্রতিবছর ৩১ মে নানা আয়োজনে দিনটি পালিত হয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক সচেতনতা দিবস হিসেবে ১৯৮৭ সালে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করা এবং তামাকমুক্ত সমাজ গঠনের আহ্বান জানাতে দিনটি ঘোষণা করে। সমকাল সুহৃদ সমাবেশ এডাস্টের প্রাক্তন সভাপতি সাগর হোসেনের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
তামাকের বিরুদ্ধে তারুণ্যের প্রত্যয়
তামাকবিরোধী সেমিনার শেষে সাংগঠনিক সভায় মিলিত হন সুহৃদরা। এ সময় সদস্যদের কার্যক্রমের ভিত্তিতে কমিটি পুনর্গঠন, নতুন কার্যক্রম গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় সুহৃদ সমাবেশের বিভাগীয় সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামানের পরামর্শে সুহৃদরা আরও সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এডাস্ট সুহৃদ উপদেষ্টা সারমিন আকতার সুহৃদদের কার্যক্রম ও আগামীদিনের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি জানান, সুহৃদ সমাবেশ কেন্দ্রীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গত তিন বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। বরাবরের মতো সুহৃদ সমাবেশ ও এডাস্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। সবার সম্মতিক্রমে তিনি নতুন কমিটিতে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে এমপিএইচ বিভাগের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান খানকে যুক্ত করার বিষয়টি জানান। শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন– এডাস্ট সুহৃদ উপদেষ্টা ড. মো. মাহীবুল হাসান, মেহনাজ বিনতে আমীন, কেয়া বোস, জুবায়ের আহমেদ। সুহৃদদের মধ্যে ছিলেন– খালেকুজ্জামন রাব্বি, মমিনুর ইসলাম আরমান, আশরাক আহমেদ আবির, মুনতাসির মজুমদার, জোবায়ের হোসেন প্রমুখ। এ ছাড়া পুরোনো কমিটির কয়েকজন সুহৃদও উপস্থিত ছিলেন। v
সুহৃদ এডাস্ট
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ ত ম ক ব যবহ র এড স ট স হ দ উপদ ষ ট ব শ বব
এছাড়াও পড়ুন:
মুশফিকের প্রেমকাহিনির মঞ্চে ম্যাথুসের বিদায়ী সুর
* শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬ টেস্টে বাংলাদেশের একটাই জয়। সেটি আবার শ্রীলঙ্কাতে। সেই জয় বাংলাদেশের শততম টেস্টে বলে আপনার তা খুব ভালোমতোই মনে থাকার কথা।
* টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৬০০ ছাড়ানো একমাত্র স্কোরটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেটিও শ্রীলঙ্কাতে।
* টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেটিও শ্রীলঙ্কাতেই।
শেষ দুটি আবার একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দুটি একই টেস্টে। ২০১৩ সালে যে টেস্টে বাংলাদেশের ৬৩৮, সেটিতেই মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি। টানা ১২ টেস্টে হারার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ড্র-ও।
এই পুরোনো প্যাচাল খুব বেশি অপ্রাসঙ্গিক লাগবে না, যখন জানবেন ওই টেস্টটা হয়েছিল গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। পশ্চাৎপটে অতিকায় গল ফোর্টের পাথুরে কাঠামো আর দুই পাশে সাগর মিলিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামের একটি। ২০০৪ সালে সুনামিতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার পর পুনর্জন্ম নেওয়া গলের সেই মাঠেই আজ শুরু বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট। শুরু আসলে তিন ধরনের ক্রিকেটেই একে অন্যের নাড়ি-নক্ষত্র বুঝে নেওয়ার লড়াই। যাতে টেস্ট আছে, ওয়ানডে আছে, আছে টি-টোয়েন্টিও। দুই টেস্টের পর সাদা বলের সিরিজে তিনটি করে ম্যাচ।
আরও পড়ুনআমিনুল ইসলাম বুলবুলকে চিনতে হলে এই লেখাটা পড়তে হবে০২ জুন ২০২৫দুই দল পরস্পরের খুব চেনা। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ২৬টি টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ঘন ঘন দেখা হলে হৃদ্যতা যেমন হয়, তেমনি রেষারেষিও। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। গত কয়েক বছরে এই দুই দল মুখোমুখি হলেই মাঠে বা মাঠের বাইরে উত্তেজনার ফুলকি ছুটেছে। ‘টাইমড আউট’ হয়তো সেটির এক নম্বরে, এর বাইরেও নানা কিছু মিলে লঙ্কা-বাংলা এখন গনগনে এক দ্বৈরথের নাম।
গত চার বছর দুই দলের মধ্যে চতুর্থ টেস্ট সিরিজ। দুই দলের জন্যই রণকৌশল ঠিক করা তাই খুব সহজ হওয়ার কথা। বাংলাদেশ দলের জন্য হয়তো তা থাকছে না শ্রীলঙ্কা দলে নতুনের সমারোহে। ১৮ জনের দলের এক–তৃতীয়াংশই এখনো টেস্ট খেলার অপেক্ষায়। বাংলাদেশ দলেও কিছু পরিবর্তন আছে, তবে তা ধর্তব্যের মধ্যে নয়।
টেস্টের প্রস্তুতিতে গলে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল