‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি ভাঙা নয়, পূর্বের নকশায় ফিরছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।

বুধবার (১৮ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের উদ্যোগে নির্মিত এ ভাস্কর্য  ভেঙে ফেলার খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর তিনি এ মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের পাশের পুকুরে নির্মিত এ ভাস্কর্যটি মূল নকশায় নিতে কিছু অংশ ভাঙা হয়। পরে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এরপরই ভাস্কর্যটি ভাঙার পক্ষে-বিপক্ষে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। 

আরো পড়ুন:

রাঙামাটিতে ভেঙে ফেলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

ভাস্কর মানবেন্দ্রের বাড়িতে আগুন
হয়নি রিমান্ড শুনানি, আ.

লীগের ৮ নেতা কারাগারে

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের উদ্যোগে শতাধিক গাছ কেটে প্রায় ৪ কোটির বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য। নির্মাণের আগে স্থাপনাটির একটি নকশা প্রকাশিত হলে, সেটা নিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ্য করা গেলেও  স্থাপনাটি নির্মাণের পর দেখা যায় ভিন্নচিত্র। স্থাপনার নকশার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল ছিল না। ভাস্কর্যতে বসানো হয়েছিল ‘অদ্ভুত’ দুটি হাতের স্থাপনা। 

অভিযোগ রয়েছে, সাবেক উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখরের নির্দেশে শেষ সময়ে নকশা পরিবর্তন করে দুই হাতের একটি স্থাপনা যুক্ত করা হয়। সে সময় স্থাপনাকে কেউ কেউ ‘সাম্প্রদায়িক স্থাপনা’ হিসেবে আখ্যা দেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর স্থাপনাটি ভেঙ্গে ফেলার দাবি তোলেন অনেকেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্থাপনাটিকে ভেঙ্গে পূর্বের নকশায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

এ নিয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আহমদ আব্দুল্লাহ বলেন, “অঞ্জলি লহ মোর শব্দের ভিতরে আগেরকার দুর্নীতিবাজ উপাচার্য সৌমিত্র শেখর সাহেবের পার্শ্ব দেশের প্রতি ও সনাতন ধর্মের প্রতি প্রেম ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। এখানে না আছে আমাদের ভূখণ্ডের কোনো নির্যাস, না আছে আমাদের জাতি সত্ত্বার কোনো পরিচয়। অর্থাৎ এটা স্পষ্টতই একটা সাম্প্রদায়িক প্রতীক।”

স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান রনি বলেন, “যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য কিছু বিষয় আগে থেকেই ভাবতে হয়। প্রথমত, এ উন্নয়ন পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে কি না, পরিবেশের জন্য উপকারী কি না, অথবা আদৌ সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না। কিন্তু আমার মনে হয়, ‘অঞ্জলি লহ মোর’ এর ক্ষেত্রে এসব কোনো দিকই বিবেচনা করা হয়নি।”

তিনি বলেন, “অনেককে দেখছি নজরুলের গানের সঙ্গে ভাস্কর্যটির সামঞ্জস্য খুঁজতে চাচ্ছেন। কিন্তু এটা কি হতে পারে না যে, ভাস্কর্যটি টিকিয়ে রাখার জন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছিল  ‘অঞ্জলি লহ মোর'।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ভাঙা নয়, বরং মূল নকশায় ফিরছে ‘অঞ্জলি লহ মোর’। গত ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের যে কয়েকটি দাবি ছিল, সেগুলোর মধ্যে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার দাবিও ছিল। কিন্তু আমরা অন্যান্য দাবিগুলো পূরণে উদ্যোগ নিলেও সে সময় ভাস্কর্যটি নিয়ে তখন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা এখন এটি সংস্কারের কাজ হাত দিয়েছি। ভাস্কর্যটির মূল যে ডিজাইন ছিল, সেই ডিজাইনে এখন ফিরবে।”

তিনি বলেন, “ভাস্কর্যটি যেভাবে তৈরি করার কথা ছিল, আগের প্রশাসন তা করেনি। তাই ৫ আগস্টের পর এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। বর্তমানে সেটি ভেঙে নতুন করে সংষ্কারের কাজে হাত দেওয়া হলে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভাস্কর্যটি সংস্কার করছি, যেন জলাধারটির সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়। আজকেও ডিনস কমিটির একটি মিটিং ছিল, সেখানে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলমের সময়ে তার উদ্যোগে কলা অনুষদের সামনের পুকুরটির উপর নির্মিত হয়েছিল ‘সিন্ধু সারোস’ নামের একটি স্থাপনা। অনেকেই প্রমোদ তরী বা ভাসমান ঘরও বলতো, যার সৌন্দর্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হওয়ার পর ‘সিন্ধু সরোস’ স্থাপনাটি ভেঙ্গে স্থাপন করেন ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য।

ঢাকা/তৈয়ব/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ স কর য ক জ নজর ল ইসল ম স ব ক উপ চ র য ভ স কর য র একট নকশ য়

এছাড়াও পড়ুন:

দরজায় তালা ভেতরে আগুন, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে পুুড়িয়ে মারার অভিযোগ

গাজীপুরের শ্রীপুরে পেট্রল ঢেলে ঘরে আগুন দিয়ে মারুফা আক্তার (৪৫) নামে এক গৃহবধূকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। 

শনিবার (২ আগস্ট) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার ইদ্রবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত মারুফা আক্তার পোশাক শ্রমিক এবং একই গ্রামের মো. মিজানুর রহমানের স্ত্রী। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার রাতে হঠাৎ আগুনের শিখা দেখে এবং চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা দেখতে পান, বসতঘরের মূল ফটকে তালা লাগানো। পরে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, ভেতরের ঘরের দরজাও তালাবদ্ধ। দরজার তালা ভেঙে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হলেও মারুফার শরীর আগুনে পুড়ে যায়। 

নিহতের ছোট বোন নাজমা আক্তার বলেন, “রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে ‘আগুন-আগুন’ চিৎকার শুনে আমরা ছুটে আসি। তখন দেখি ঘরের তালা ভাঙার চেষ্টা চলছে। তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি আমার বোন আগুনে পুড়ে গেছে।”

নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ আবু তাহের জানান, বিয়ের পর থেকেই মারুফা-মিজানুরের  দাম্পত্য জীবনে কলহ চলছিল। গত ১৫ দিন ধরে মারুফাকে বাড়ির বাইরে যেতে দেননি মিজানুর। 

আবু তাহের অভিযোগ করে বলেন, “পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে আমার বোনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।’’

স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, “এই দম্পতি প্রায় সময়ই ঝগড়া করত। বহুবার সামাজিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু লাভ হয়নি।”

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারিক জানান, ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত স্বামী পালিয়ে যান। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করেছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান চলছে।”

এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা/রফিক//

সম্পর্কিত নিবন্ধ