মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি: ড. দেবপ্রিয়
Published: 19th, June 2025 GMT
শুধু পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য নয়, দেশের ক্রান্তিলগ্নে অর্থনীতি বদলের যে আকাঙ্ক্ষা সবার মধ্যে তৈরি হয়েছিল, প্রস্তাবিত বাজেটে তা পূরণ হয়নি। যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানমুখী যে বাজেট করা যেত, তা হয়নি। এ বাজেট জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাজেটটি সংস্কারের ধারণাকেও ধারণ করেনি। সরকার অর্থনীতি বিষয়ে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি। এ বাজেট সংস্কারবিমুখ ও বৈষম্যমুখী বাজেট, যা হওয়ার কথা ছিল না। প্রত্যাশার বাজেট শেষ পর্যন্ত হতাশাজনক হয়েছে।
গতকাল বুধবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ : অবহেলিতরা কী পেয়েছে’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা বলেন গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো এবং নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড.
ড. দেবপ্রিয় বলেন, কেউ কেউ হয়তো বলবেন– আমলারা বাজেট করেছে, পেশাজীবীরা সহযোগিতা করেনি। এখানে প্রশ্ন– নাগরিক সমাজ কী করেছে। নাগরিকদের দিক থেকে চাহিদার চাপ তৈরির ব্যর্থতা আছে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে নাগরিক সমাজ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে পারত। এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচনের পর আগামী দিনের জন্য যে নেতৃত্ব আসবে, তাদের প্রতি চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বাজেটে কাঠামোগত সমস্যা আছে। আলোচনা ছাড়া করা হয়েছে। বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের বিষয়টিও পরিষ্কার নয়। এভাবে চললে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ যারা অবহেলিত, তারা উপেক্ষিত থাকে। ফলে আজকে যারা সচ্ছল, তারাও হুমকির মুখে পড়বে।
‘এক বছরে বিপ্লবী বাজেট দেওয়া সম্ভব নয়’– অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের এ মনোভাবের সমালোচনা করে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল, তারা কিছু পরিবর্তনের সূচনা করবে। এ বাজেটে ছাঁচের কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। পরোক্ষ করের আধিক্য কমেনি, যা অবহেলিত মানুষকে চাপে ফেলে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ানোর দরকার ছিল, তা করা হয়নি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অনেক কিছু ঢুকিয়ে আকার বড় করে দেখানো হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেই। জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেই। উল্টো ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করতে গিয়ে আমদানি পণ্যে শুল্ক কমানো হয়েছে। কর বাড়ানো হয়েছে দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্যে।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবার ভিন্নতর বাজেট করার সুযোগ হাতের মধ্যে পেয়েও সরকার ব্যর্থ হয়েছে। ঐতিহাসিক সুযোগটি ‘মিস’ নয়, ‘লস’ হয়েছে।
গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, সরকারের কাছে হয়তো রাজনৈতিক সংস্কার বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে, অর্থনৈতিক সংস্কার নয়। ফলে সামষ্টিক অর্থনীতি এবং বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা দূর করার পদক্ষেপ বাজেটে নেই। মানুষ অর্থনৈতিকভাবে চাপে আছে। তাদের জন্য কিছু নেই। এবারের বাজেটে ভিন্ন কিছু করার সুযোগ ছিল। যুব শ্রেণিকে বিবেচনায় রেখে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনমুখী করা যেত। পরোক্ষ কর নির্ভরতা কমানোর ব্যবস্থা থাকতে পারত।
অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান বলেন, আগের মতো ভুল তথ্যে ভর করে বাজেট করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও বিবিএস বলেছে, এ বছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ বাজেটে ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে ধরে নতুন লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ।
কর বিশেষজ্ঞ স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, চলতি বছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ এখন পর্যন্ত আদায় ৩ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা দিয়ে সরকারের পরিচালন ব্যয় মেটানোর পর কী করে উন্নয়ন হবে। এ ধারা থেকে বের হতে এ সরকারের উচিত ছিল পরিচালন ব্যয়ে লাগাম টানা।
আইসিএমএবির সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে স্বার্থান্বেষী মহলের চাপে রাজনৈতিক সরকার যে বাজেট করত, তা নিয়ে সমালোচনা হতো। এবার স্বার্থান্বেষী মহলের চাপ নেওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু বাজেট গতানুগতিক হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন বলেন, শিল্পে এখন স্থবিরতা। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ নেই, পুঁজিবাজারেও নেই। কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই বাজেট করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির সামান্তা শারমিন বলেন, দেশের জনগোষ্ঠীর বড় অংশই অবহেলিত। তাদের জন্য এ বাজেট প্রত্যাশা পূরণ করে না। রূপান্তর ও জুলাই অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সরকার আন্দোলনে যুক্তদের সঙ্গেও বাজেট প্রণয়নে আলোচনা করেনি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান বলেন, ‘আগে ঋণ করে ঘি খাওয়া হতো, এখন ঋণ করে ঋণ শোধ করার বাজেট হয়। বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, এ বাজেটের মাধ্যমে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, একটা সম্ভাবনা নষ্ট হয়েছে।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় বাজেটে ‘কাউকে পেছনে না ফেলে’ উন্নয়নের যে অঙ্গীকার রয়েছে, বাস্তবে তা আংশিকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকলেও কাঠামোগত সংস্কার ও বাস্তবায়নে ঘাটতির কারণে প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে সংশয় রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব জ ট কর অবহ ল ত সরক র র ন বল ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কুড়িগ্রামে ট্রাক্টরচাপায় দুই বোন নিহত
কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী বাজার এলাকায় ট্রাক্টরচাপায় দুই বোন নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত আটটার দিকে কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়কে কাঁঠালবাড়ী ডিগ্রি কলেজের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুজন হলেন উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মৃত রহমতের স্ত্রী রোকেয়া বেগম ও কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের আগমনী এলাকার আমজাদের স্ত্রী পারভীন বেগম।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোকেয়া ও পারভীন গতকাল রাতে কাঁঠালবাড়ী ডিগ্রি কলেজের সামনে দিয়ে সড়ক পার হচ্ছিলেন। এ সময় দ্রুতগামী একটি ট্রাক্টর তাঁদের চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাক্টরটি নিয়ে চালক পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।