বরিশাল বিভাগে ৫ মাসেও বিএনপির পুনর্গঠন কার্যক্রমে অগ্রগতি নেই, তৃণমূলে হতাশা
Published: 19th, June 2025 GMT
বরিশাল বিভাগে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠনের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল গত জানুয়ারিতে। লক্ষ্য ছিল তিন মাসের মধ্যে বিভাগের আট সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে তৃণমূল পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রম গতিশীল করা। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও সে কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি নেই।
এখন পর্যন্ত একটি জেলাতেও সম্মেলন না হওয়া তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বেশির ভাগ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় দলীয় শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে। বরিশাল মহানগর ও কয়েকটি জেলার নেতারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ইতিমধ্যে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে, এই সময়ে সম্মেলন আয়োজন বেশ কঠিন। ফলে আগামী শুষ্ক মৌসুমের আগে এসব সম্মেলন সম্পন্ন করা যাবে কি না, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
অন্যদিকে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সেখানে সম্মেলন আয়োজন নিয়েও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৩ জানুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বরিশাল বিভাগের আটটি সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পৃথক দুটি চিঠিতে এসব কমিটির অনুমোদন দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। এ লক্ষ্যে পাঁচজন তরুণ কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়ে জেলায় জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়। তাঁদের তিন মাসের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন সম্পন্ন করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনবরিশাল বিভাগে তরুণ নেতৃত্বে বিএনপির পুনর্জাগরণের চেষ্টা৩১ জানুয়ারি ২০২৫বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক মনোনীত হন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হাসান মামুন। বরিশাল দক্ষিণ ও ঝালকাঠির দায়িত্ব দেওয়া হয় আরেক কেন্দ্রীয় সদস্য হায়দার আলী লেলিনকে। বরিশাল উত্তর জেলার দায়িত্বে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সদস্য দুলাল হোসেনকে। এ ছাড়া ভোলার দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহকে, পিরোজপুর ও বরগুনার দায়িত্ব দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুকে। তবে পটুয়াখালীতে সম্মেলনের দায়িত্ব বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিকেই দেওয়া হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, এসব নেতারা দায়িত্ব পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলায় একাধিক সভা-সমাবেশ করলেও কোনো ইউনিটেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। এমনকি প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমও চোখে পড়ার মতো নয়। এতে তৃণমূল পর্যায়ে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
তিনটি জেলার অন্তত সাতজন সাবেক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, গত দেড় দশকে বিএনপি নানা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে সাংগঠনিক দুর্বলতাও প্রকট হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়নে দলের নেতা–কর্মীরা রাজপথে দাঁড়াতে পারেননি। মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে তাঁরা পরিবার ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর নতুন বাস্তবতায় বিএনপির নেতা–কর্মীরা আবার সক্রিয় হয়েছেন। তবে দুর্বল কাঠামোর কারণে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছেন তাঁরা। জেলা ও উপজেলাগুলোর কোথাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় ‘চেইন অব কমান্ড’ কার্যকর হচ্ছে না।
জানতে চাইলে ভোলা জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভোলায় ইতিমধ্যে কয়েক দফা সভা করেছি। আশা করি, শিগগিরই উপজেলা কমিটিগুলো গঠন করতে পারব। জুলাইয়ের মধ্যেই জেলা কমিটিও গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।’ রমজান, ঈদসহ নানা দলীয় কর্মসূচির কারণে সময়মতো সম্মেলন আয়োজন সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির এই নেতা।
তৃণমূলের ভোটে কমিটি গঠন করা হবে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের চেষ্টা করব। প্রয়োজনে ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেব। তবে যেভাবেই হোক, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিই অনুসরণ করা হবে।’
দলের একাধিক সূত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তরুণদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও স্থানীয় কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার প্রয়াস চালাচ্ছেন। তাঁরা চান, তাঁদের ঘনিষ্ঠরা জেলা–উপজেলা কমিটির নেতৃত্বে আসুক। ফলে পাঁচ মাসেও কাউন্সিল না হওয়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্মেলন প্রস্তুতির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রক্রিয়াটি সহজভাবে নিচ্ছেন না। এটা আমাদের জন্য শুরু থেকেই একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে দলীয় স্বার্থে সবাইকে নিয়েই ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।’
প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে মহানগরের নেতারাবরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এখনো নগরের ৩০টি ওয়ার্ডে নতুন কমিটি গঠিত হয়নি। এমনকি সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমও শুরু হয়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ৫ এপ্রিল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ও সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার এক বিজ্ঞপ্তি বিলুপ্ত ৩০টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আটটি টিম গঠনের কথা জানান। এতে আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য মিলিয়ে ৩৯ জন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে একই দিন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিন এক পাল্টা বিজ্ঞপ্তিতে এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর থেকে আফরোজা নাসরিন দলীয় কর্মসূচি নিজের সমর্থকদের নিয়েই পালন করছেন।
এ বিষয়ে আফরোজা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় কোনো কর্মসূচিতে আমাকে ডাকা হয় না। নতুন সদস্য ফরম বিতরণেও অনিয়ম হয়েছে।’ এ নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অন্যদিকে মহানগর আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আফরোজা নাসরিন তাঁর পদমর্যাদার বাইরে গিয়ে নিজেই বিজ্ঞপ্তি জারি করছেন, যা দলীয় শৃঙ্খলা লঙ্ঘন। তাঁকে বারবার ডাকা হলেও তিনি অংশগ্রহণ না করে আলাদা কর্মসূচি পালন করেন।’
মনিরুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘আমরা নতুন সদস্য ফরম ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কয়েক হাজার নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পুরোনোদের সদস্যপদ নবায়ন করতে হবে। এতে সময় লাগবে। তবে জুলাইয়ের মধ্যে সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা চলছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নানা কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট আহ্বায়কেরা সময় চেয়েছেন, আমরাও সময় দিয়েছি। আশা করছি, আগামী দুই মাসের মধ্যে সব কটি সম্মেলন শেষ করা যাবে।’
আঞ্চলিক জ্যেষ্ঠ নেতারা সম্মেলন আয়োজনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের চ্যালেঞ্জ তো আছেই। তবে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেই সংগঠনকে গতিশীল করতে হবে। অনেক দিন সম্মেলন হয়নি। নেতৃত্ব বিকাশে সম্মেলন জরুরি। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় সদস য প র ণ ঙ গ কম ট বর শ ল ব ভ গ প রথম আল ক গঠন কর লক ষ য কম ট র দল য় ক উপজ ল গঠন ক আফর জ গঠন র
এছাড়াও পড়ুন:
৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন'র সভাপতি বাসার ও সম্পাদক মেহেদী
দেশের ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ব্যাচের সদস্যদের সমন্বয়ে ৩৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েন" এর দুই বছর মেয়াদি কার্য নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সর্ব সম্মতিক্রমে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার আবুল বাসার মোল্লাকে কমিটির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (গা-সার্কেল) মো. মেহেদী ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।
রাজধানির ইস্কাটন রোডস্থ বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স মেসে ৩৭ তম বিসিএস পুলিশ ব্যাচের সদস্যরা শনিবার এক সভায় মিলিত হয়ে আগামী দুই বছরের জন্য এ কমিটি গঠন করেন।
এছাড়াও কমিটিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী পুলিশ সুপার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান সিনিয়র সহ-সভাপতি, ডিএমপির সহকারী পুলিশ সুপার তৌফিক আহমেদ ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ডিএমপির সহকারী পুলিশ সুপার হুসাইন মোহাম্মদ ফারাবী সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
সভায় যেসব সদস্যরা স্বশরীরে উপস্থিত হতে পারেননি তারা ভার্চুয়ালি জুম মিটিং এর মাধ্যমে আলোচনায় যুক্ত হন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় এহসান ইমন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কমিটি গঠনের পর নব নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য সদস্যরা দেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে ব্যাচের স্বার্থে ও দেশের প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবেন বলেও সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।