“পতিত ফ্যাসিবাদের সাথে জড়িতদের বিচার বাংলার বুকে হতেই হবে”
Published: 19th, June 2025 GMT
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আহুত সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে আগামী ২৮ জুন শনিবার, ঢাকার সোহরাওয়ার্দি ময়দানের মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট ছাত্র, যুব, শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দলের ফতুল্লা থানা কার্যালয়ে আয়োজিত এক যৌথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মাওলানা দ্বীন ইসলাম ৷
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশকে স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে রক্ষা করতে দেশে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করতেই হবে। পতিত ফ্যাসিবাদের সাথে জড়িতদের বিচার বাংলার বুকে হতেই হবে। এবং দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতেই হবে।
এটাই জুলাইয়ের আকাংখা। এই আকাংঙ্খা বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তারই অংশ হিসেবে আগামী ২৮ জুন ঢাকায় গণবিস্ফোরণ ঘটবে ইনশাআল্লাহ।
ফতুল্লা থানার সভাপতি শফিকুল ইসলাম উপস্থিত নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, এই মহাসমাবেশকে সামনে রেখে ফতুল্লা থানার সর্বস্তরের জনগণের কাছে দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। পিআর পদ্ধতির সুফল মানুষকে বোঝাতে হবে। সংস্কার, বিচার ও পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের প্রতি তাদের আগ্রহের আরেকটি প্রদর্শন হতে হবে আগামী ২৮ জুন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন থানার সভাপতি-মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি-আলহাজ্ব আব্দুস সালাম, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান বেপারী, সেক্রেটারি মুহাম্মাদ যোবায়ের হুসাইন, জয়েন্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ মাসুদুর রহমান, এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি মুহাম্মাদ মাসুদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব রুবেল হুসাইন, প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক এম শফিকুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক মুহাম্মাদ মুক্তার হুসাইন, অর্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক আলহাজ্ব সাইদুল ইসলাম, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ও ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ল ইসল ম আলহ জ ব
এছাড়াও পড়ুন:
কমছে শোধনাগারের ক্ষমতা পানি মিলছে এক-চতুর্থাংশ
গোপালগঞ্জ পৌরসভা থেকে বছর দশেক আগে পানির সংযোগ নেন শেখ আসলাম (৪৫)। এতদিন পর্যন্ত দিনে ২ হাজার লিটার পানি পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু চলতি বছরেই দুর্ভোগ শুরু হয়েছে শহরের নবীনবাগের বাসিন্দা আসলামের পরিবারে। তারা দিনে ৫০০-৬০০ লিটারের বেশি পানি পাচ্ছেন না, যা দিয়ে সংসারের দৈনন্দিন কাজ সারা সম্ভব হচ্ছে না।
আসলামের পরিবারের মতো ভুগছে গোপালগঞ্জ পৌরসভা থেকে পানির সংযোগ নেওয়া অন্য পরিবারগুলোও। তারা জানিয়েছেন, দিনে তারা এক-দুই ঘণ্টার বেশি পানি পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ পানিও পান না। পৌরসভার পানি শোধনাগারের (প্লান্ট) সক্ষমতা কমায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে গ্রাহক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
পৌরসভার কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে একই প্লান্টে পানি শোধন করায় ওই এর সক্ষমতা কমেছে। সেটি সংস্কার না হলে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। নতুন প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর পৌরবাসীর দাবি, দ্রুত সমস্যা সমাধান করে চাহিদা অনুযায়ী সুপেয় পানি সরবরাহ করতে হবে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৪৫০। বর্তমানে পৌর এলাকায় পানির সংযোগ আছে ৯ হাজার ৯০০ পরিবারের। চারটি প্লান্টের মাধ্যমে শোধন করে দিনে গ্রাহকদের মাঝে ১৩-১৪ মিলিয়ন লিটার (এমএলডি) পানি দেওয়া হচ্ছে। অথচ পৌরবাসীর দৈনিক পানির চাহিদা ৬০ মিলিয়ন লিটার। সে হিসাবে পৌরসভা থেকে সরবরাহ পানির পরিমাণ চাহিদার চার ভাগের এক ভাগেরও কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর এলাকার প্রধান পানি শোধনাগার দুটি শিশুবন এলাকায় অবস্থিত। ২০০০-০১ অর্থবছরে ৯ একর জমিতে প্রথম শোধনাগারটি স্থাপন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তারা ২০১৯-২০ অর্থবছরে সেখানেই দ্বিতীয় শোধনাগারটি বসায়। দুটি শোধনাগারেই শুরুতে ঘণ্টায় পানি শোধনের ক্ষমতা ছিল ৫৪০ ঘনমিটার। প্রথম শোধনাগারে সেই ক্ষমতা কমে এখন ঘণ্টায় ২৫০-৩০০ ঘনমিটারে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয় শোধনাগারের ক্ষমতা একই থাকায় সেটির ওপরই চাপ পড়ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এ ছাড়া পৌর এলাকার পাচুরিয়ায় একটি আয়রন রিমুভাল প্লান্ট, সদর উপজেলার কাজুলিয়ার বিলে আছে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ প্লান্ট ও মানিকহার এলাকায় মধুমতী নদী থেকে ভূপৃষ্ঠের পানি শোধন করে সরবরাহের প্লান্ট রয়েছে। কিন্তু সেগুলোই সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। যে কারণে এসব প্লান্টও চাহিদা অনুযায়ী পানি শোধন করতে পারছে না।
এর ফলে ভুগতে হচ্ছে পৌরসভার বাসিন্দাদের। বেদগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ওমর আলী (৫৫) বলেন, ‘আমার সংযোগে প্রতিদিন পানির চাহিদা ১ হাজার লিটার। কিন্তু পাই ২০০ থেকে ৩০০ লিটার।’
একই পরিস্থিতির শিকার মধ্যপাড়ার গৃহবধূ তাসলিমা তমা (৩৫)। তিনিও দিনে মাত্র দুই ঘণ্টায় পানি পান ৩০০ লিটারের মতো। তমার ভাষ্য, ‘এ পানি দিয়ে ঘর-গৃহস্থালির কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করছি।’
২০২৪ সালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার আয়তন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আগে পৌর এলাকার আয়তন ছিল ১৩ দশমিক ৮২ বর্গকিলোমিটার। এখন তা ৩০ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে পৌরসভায় সীমানায় আসা মানুষের পানির চাহিদা মিটছে না। এসব বিষয় চিন্তা করে প্রধান পানি সরবরাহ প্লান্টটি মেরামত ও সংস্কারের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠায়। সেটি পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনও পায়। তবে সেটি এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে বলে পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে। একই সূত্র জানায়, দুই বছর আগে নতুন একটি প্লান্ট স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি দল সেটির জন্য টুঙ্গিপাড়ার বর্ণির বাঁওড়ে সমীক্ষা যাচাই করে। কিন্তু এটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পানি) স্বরূপ বোসের ভাষ্য, পৌর এলাকায় এখন দৈনিক পানির চাহিদা ৬০ মিলিয়ন লিটার। কিন্তু পুরোনো প্লান্ট ২৪ ঘণ্টা পরিচালনা করে মাত্র ১৩ থেকে ১৪ মিলিয়ন লিটার পানি দেওয়া যাচ্ছে। সংস্কার না করে এভাবে চললে সেটি যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বিশ্বজিৎ কুমার পাল বলেন, প্রতিদিন নতুন নতুন সংযোগের আবেদন বাড়ছে। এর আগে প্লান্টের সক্ষমতা বাড়ানো ও বর্ধিত এলাকায় নতুন সংযোগের জন্য একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে সেখান থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যেন ওই ডিপিপি দ্রুত ছাড় করে, সে বিষয়ে যোগাযোগ রাখছেন। এটি দ্রুত ছাড় করা গেলেই পানি শোধনাগারের সংস্কার করা যাবে। পৌরবাসীর দুর্ভোগও ঘুচবে।