যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচারের দায়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীর কারাদণ্ড
Published: 20th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এক ভারতীয় নাগরিককে অর্থপাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দেশটির স্থানীয় সময় বুধবার বিচার বিভাগ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, গুজরাটের নবসারি জেলার ২০ বছর বয়সী কিশন রাজেশকুমার প্যাটেলকে ৬৩ মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিচার বিভাগের মতে, প্যাটেল ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্টের মধ্যে অনলাইন ফিশিং এবং সরকারি কর্মকর্তার ছদ্মবেশে প্রতারণামূলক উপায়ে বয়স্ক মার্কিন নাগরিকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও স্বর্ণ সংগ্রহে সহায়তা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই প্রতারণা চক্র অনলাইনে বিভিন্ন ফিশিং কৌশল ব্যবহার করে এবং মার্কিন সরকারি কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রতারণা করে। প্যাটেল এই প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহ করা নগদ ও স্বর্ণের একটি অংশ চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেয় এবং বাকিটা নিজের জন্য রেখে দেয়।’
তদন্তে জানা গেছে, এই চক্র অন্তত ২৫ জন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রতারণা করে যার ক্ষতির পরিমাণ ২৬ লাখ ৯৪ হাজার ১৫৬ মার্কিন ডলার। ২০২৪ সালের ২৪ আগস্ট গ্রানাইট শোর্স পুলিশ বিভাগ প্যাটেলকে গ্রেপ্তার করে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস পশ্চিমাঞ্চলের অ্যাটর্নি জাস্টিন সিমন্স বলেন, এই আসামি আমাদের দেশে ভিসার সুযোগ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক প্রতারণা ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়ে। তিনি মার্কিন সরকারি কর্মকর্তার ছদ্মবেশে নিরীহ নাগরিকদের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন। এই সাজা স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, ফেডারেল সরকার এ ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর এবং ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তিনি টেক্সাসে অর্থ পাচার মামলায়ও দণ্ডিত হয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩%
বাংলাদেশে ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ কমেছে। গত বছর নিট বা প্রকৃত এফডিআই এসেছে ১২৭ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে আঙ্কটাড ‘ওয়ার্ল্ড ইনেভেস্টমন্ট রিপোর্ট-২০২৫’ নামে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাকি দেশের পরিসংখ্যান ওই প্রতিবেদনে রয়েছে।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সমপর্যায়ের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। গত বছর যে পরিমাণ এফডিআই এসেছে, তা মাত্র এক মাসে রেমিট্যান্সের অর্ধেক এবং রপ্তানি আয়ের চার ভাগের এক ভাগ।
একটি নির্দিষ্ট বছরের মোট বিদেশি বিনিয়োগ বলতে বাইরের উদ্যোক্তাদের থেকে নতুন পুঁজি, বিদ্যমান বিনিয়োগের মুনাফা থেকে পুনর্বিনিয়োগ এবং আন্তঃকোম্পানি ঋণের সমষ্টিকে বোঝানো হয়। একই সময়ের মধ্যে পুঁজি প্রত্যাহার, মূল কোম্পানিকে ঋণ দেওয়া এবং আন্তঃকোম্পানি ঋণ পরিশোধ বাদ দিয়ে নিট বিনিয়োগের হিসাব করা হয়।
বাংলাদেশে ২০২৪ সাল শেষে বিদেশি বিনিয়োগের স্থিতি ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় এ ক্ষেত্রে গড় হার ১৩ শতাংশ। ভারতের হার ১৪ শতাংশ। ভুটানের মতো দেশে এ হার ১৭ শতাংশ। গত বছর ভুটানে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ৬ গুণ।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগে (গ্রিনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট) অর্থের ঘোষণার পরিমাণও কমেছে। ঘোষিত অর্থের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে যা ছিল ২৭০ কোটি ডলার। গত বছর কমে যাওয়ার হার ৩৫ শতাংশ। গ্রিনফিল্ড বিনিয়োগের ঘোষণা ভবিষ্যতের প্রকৃত বিনিয়োগের ইঙ্গিত দেয়।
কেন বিনিয়োগ কম
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের নিম্ন প্রবণতার কারণ জানতে চাইলে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও এমডি জাভেদ আখতার সমকালকে বলেন, একজন বিনিয়োগকারী তখনই বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন, যখন তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলোর ওপর ভরসা পান। বিনিয়োগের পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব হয়। দুঃখজনক হলেও এটি স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশের বিনিয়োগের পরিবেশ কখনোই ভালো ছিল না। এর অন্যতম কারণ হলো, দেশের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার বিশ্বাসযোগ্যতা, রাষ্ট্রের বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাব। এর ওপর গত কয়েক বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করেনি।
ফিকি সভাপতির মতে, গত ১০ মাসে সরকার যদিও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তার ফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে, অথর্নীতির চাকা সচল না হলে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগের আশা করা শুধু অযৌক্তিক নয়, দুরূহ হবে।
তিনি বলেন, ‘দেশীয় বাজার এবং রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থান ভালো। কিন্তু উল্লিখিত তিনটি কারণের জন্য আমরা পিছিয়ে রয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব বিষয় খতিয়ে দেখে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগুলোর প্রতিকার না করা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীর আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশের ওপর কখনোই আসবে না।’
আঙ্কটাডের প্রতিবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর মন্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সম্প্রতি আশিক চৌধুরী বিডার ফেসবুকে ‘আমাদের আমলনামা’ নামে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি বিডায় তাঁর আট মাসের দায়িত্ব পালনকালে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি জানান, গত অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি বিনোয়োগের পরিমাণ আগের একই সময়ের তুলনায় প্রায় একই। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পরে এত তাড়াতাড়ি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ আগের জায়গায় ফিরে গেছে, যা আশার কথা।
বাংলাদেশিদের বাইরে বিনিয়োগ কত
আঙ্কটাড শুধু দেশওয়ারি বিনিয়োগ আসার তথ্য প্রকাশ করে না। কোনো দেশ থেকে বাইরে কী পরিমাণ বিনিয়োগ হয়, তার তথ্যও দেয়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে মাত্র ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২১ সালে দেশের বাইরে সর্বাধিক ৮ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা। ২০২৪ সাল শেষে বিদেশে বাংলাদেশিদের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। আগের বছরের তুলনায় যা ৮ শতাংশ কম।
বিশ্ব ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি
২০২৪ সালে প্রকৃত বৈশ্বিক বিনিয়োগ ১১ শতাংশ কমে দেড় ট্রিলিয়ন ডলারে নেমেছে। যদিও কিছু অন্থায়ী আর্থিক প্রবাহের কারণে সামগ্রিক চিত্রে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে। ২০২৫ সালেও পরিস্থিতি নেতিবাচক থাকতে পারে পূর্বাভাস দিয়েছে আঙ্কটাড। বাণিজ্য উত্তেজনা, নীতি অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভক্তি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার মূল কারণ বলে মনে করছে সংস্থাটি। গত বছর দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগ এসেছে ৩ হাজার ৪৫৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের মতোই। ভারতে এফডিআই কমেছে প্রায় ২ শতাংশ।