কুমিল্লার মুরাদনগরে গতকাল বৃহস্পতিবার ৭০টি ইয়াবাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে শেখ জুয়েল (৪৫) নামে একজন পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন।

নিহত জুয়েল উপজেলার বাঙ্গরা গ্রামের শেখ বাড়ির প্রয়াত শেখ গোলাম সারোয়ারের ছেলে। তাঁর ওই এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার ব্যবসা ছিল। তিনি বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন। তাঁর ভাই বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে জুয়েলের মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বাঙ্গরা এলাকা থেকে পাঁচজনকে মাদক সেবনের সময় গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ৭০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁদের থানায় নেওয়া হয়। থানায় আনার পর শেখ জুয়েল অসুস্থবোধ করলে তাঁকে রাত ৮টা ৫০ মিনিটে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ জুয়েলকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, শেখ জুয়েল একজন চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। তাঁর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন। তবে তাঁর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

শেখ জুয়েলের চাচাতো ভাই ও স্থানীয় বিএনপি নেতা শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, বাঙ্গরা বাজার থানার এসআই আল-আমিনের নেতৃত্বে জুয়েলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি (এসআই আল-আমিন) জানান, জুয়েলকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

আটক করার পর শেখ জুয়েলকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন তাঁর স্ত্রী শিল্পী বেগম। তিনি বলেন, ‘(গতকাল) দুপুরের পর জানতে পারি, পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে গেছে। থানায় গিয়ে দেখা করি। তিনি সুস্থ ছিলেন। আমাকে বলেন, “আমি কিছু করিনি, আমাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা কর।” এরপর খবর পাই তিনি মারা গেছেন। একজন সুস্থ মানুষ এভাবে মারা যেতে পারে না। তাঁকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে।’

এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা। গতকাল রাতে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেনের (কায়কোবাদ) ছোট ভাই কাজী শাহ আরফিন ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মুরাদনগরের বাঙ্গরা থানায় পুলিশের হেফাজতে বিএনপির একজন কর্মী নিহত হয়েছেন, যার বিরুদ্ধে কোনো মামলাই ছিল না। একটি স্বাধীন দেশের থানায় বিনা অপরাধে এভাবে একজন নাগরিকের মৃত্যু শুধু অমানবিকই নয়, এটি রাষ্ট্রীয় অপব্যবহার ও দমননীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। ন্যায়বিচারের নামে যদি মানুষ হত্যা হয়, তাহলে সেটাকে বিচার নয়, বর্বরতা বলা হয়। এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র দনগর ব এনপ র জ য় লক উপজ ল গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করে নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ ১৭ বছর আন্দোলন করেছে কিন্তু ভোটের জন্য। এই ভোট এই সরকারের কাছ থেকে আমরা আদায় করেই ছাড়ব। সরকারের পেছনে, সরকারের ভেতরে–বাইরে যতই ষড়যন্ত্র চলুক, কোনো ষড়যন্ত্রকেই বিএনপি অপ্রতিরুদ্ধ মনে করে না।’

আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্বরে এক অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও আমার না বলা কথা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল।

গত বছর গণ-অভ্যুত্থান না হলে অন্য কোনো মাসে বিএনপির আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হতো বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘যদি জুলাই-আগস্ট না হতো আরেকটা মাসে হয়তো বিএনপি আন্দোলন করে সরকারকে ফেলে দিত।’

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে বিএনপি ঘোষণা দিতে পারলে সেদিনই সরকারের পতন হয়ে যেত উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকারের পতন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। চক্রান্তের কারণে সেদিন সেটা হয়নি। সেই দিন যে জনসমাবেশ হয়েছিল, ওই সমাবেশ থেকে যদি ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে এই সরকার থাকে না।’ তবে পুলিশের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি বলে দাবি করেন বিএনপির এই নেতা।

জুলাই সনদসহ অনেক কিছুতে বিএনপি ছাড় দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘কালকে একজন বলছেন যে যদি এইটা না হয়, যদি ওইটা না হয়, তাহলে নির্বাচন হবে না, নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। এক ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে আরেক ফ্যাসিবাদকে আনব না। আমরা তো তাই বলছি। এক ফ্যাসিবাদকে তাড়িয়ে আরেক ফ্যাসিবাদ আমরাও আনতে চাই না। আমরাও প্রতিরোধ করব।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমি আসার সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছিলাম যে বিএনপিকে এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে বলছে হাসিনা গিয়েছে যেই পথে, তারেক যাবে সেই পথে। এটা কোনো রাজনৈতিক স্লোগান নয়। দেশকে সুসংগঠিত রাখার স্লোগান নয়। এটা গণতান্ত্রিক ঐক্যকে বজায় রাখার স্লোগান নয়।'

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ইঙ্গিত করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনারা যে কথাবার্তা আজকে বলছেন আমার মনে হয়, সরকারের মুখপাত্র হয়ে আপনার কথাগুলো বলছেন। আপনাদের বয়স, আপনাদের যে মেধা, আপনাদের অভিজ্ঞতা তাতে আমার মনে হয় না এই সমস্ত কথাগুলো আপনাদের মুখ দিয়ে আসছে কিংবা আপনাদের মাথা থেকে আসছে। এটা অন্যজনের প্ররোচিত কথাবার্তা আপনারা বলছেন, এতে কোনো লাভ হবে না।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েমের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ, যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়ন প্রমুখ।

এ ছাড়া জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ যুবদলের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে চারজন, ২০১৫ সালে গুমের শিকার একজন আইনজীবী এবং যুবদলের রাজনীতি করেন এমন একজন চিকিৎসক বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, দলের চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিনসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন যুবদলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা।

এর আগে বেলা সাড়ে তিনটায় যুবদল সভাপতির সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত যুবদলের নেতা-কর্মীদের তথ্য তুলে ধরা হয়। পরে একটি থিম সং পরিবেশনের পাশাপাশি যুবদলের আয়োজনে সম্প্রতি ঢাকার ছয়টি স্থানে অঙ্কিত গ্রাফিতির ভিজ্যুয়াল প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যুবদলের ৭৮ জন নেতা, কর্মী ও সমর্থক শহীদ হয়েছেন। আজ তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও আর্থিক অনুদান তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতারয় বিজয়ীদেরও হাতেও পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • উপদেষ্টা আসিফের বাবাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
  • উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ মুরাদনগরে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছেন: ছাত্রদলের সম্পাদক
  • চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ২০ মাসে প্রাণ গেল ৩০ জনের
  • কুষ্টিয়ায় স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ৫
  • ট্রেন-অটোরিকশার সংঘর্ষে যেভাবে বেঁচে গেল সাড়ে তিন বছরের আতাউল্লাহ
  • কক্সবাজারে ট্রেনের ধাক্কায় ৫ জনের মৃত্যুর পর বিক্ষুব্ধ জনতা আটকে রেখেছে সৈকত এক্সপ্রেস
  • রামুতে অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, শিশুসহ নিহত ৪
  • কক্সবাজারের রামুতে অটোরিকশাকে ট্রেনের ধাক্কা, পাঁচ যাত্রী নিহত