পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির শেয়ার অধিগ্রহণ, সীমান্ত ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তির বিপরীতে রক্ষিত জামানত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় তদন্ত করে খতিয়ে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। 

তবে কোম্পানিটির যেসব বিষয় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তা সম্পন্ন করতে গঠিত কমিটি আরো সময় চেয়েছে। কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আরো ৪৫ কার্যদিবস সময় বাড়িয়েছে বিএসইসি।

সম্প্রতি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির শেয়ার অধিগ্রহণ, সীমান্ত ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তির বিপরীতে রক্ষিত জামানত এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় তদন্তের সময় বাড়ানোর আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

তদন্তের সময় বাড়ানোর বিষয়টি তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিষয়টি বিএসইসির তদন্ত কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আল মাসুম মৃধা, সহকারী পরিচালক শরিফুল ইসলাম ও নাভিদ হাসান খান।

বিএসইসির তদন্তের সময় বাড়ানোর আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন চলতি বছরের গত ১৩ এপ্রিল তদন্ত আদেশ জারি করে, যা  তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির তদন্তের বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত। কমিশন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আরও ৪৫ কার্যদিবসের সময় বৃদ্ধি করেছে। উপরে উল্লিখিত আদেশের অন্যান্য শর্তাবলী অপরিবর্তিত থাকবে।

বিএসইসির পূর্বের তদন্তের আদেশ

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির শেয়ার অধিগ্রহণ, সীমান্ত ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তির বিপরীতে রক্ষিত জামানত এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তদন্ত পরিচালনা করে দেখা প্রয়োজন।

তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির ৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি

পুঁজিবাজার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে বেশি কিছু শর্ত বা বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তৌফিকা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কীভাবে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিমের অতিরিক্ত ১ কোটি ১৫ লাখ সাধারণ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে এবং এক্ষেত্রে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব কীভাবে করা হয়েছিল সেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।

এদিকে, তৌফিকা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের অতিরিক্ত শেয়ার অধিগ্রহণের বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস) ২৪ এর আইন অনুসারে কোম্পানির সেই সময়ের আর্থিক প্রতিবেদনে নিজেদের মধ্যে লেনদেনের কোনো তথ্য যথাযথভাবে প্রকাশ করেছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হবে।

এছাড়া চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সীমান্ত ব্যাংকের পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২০ এর অধীনে তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম এবং সংশ্লিষ্ট স্টক ব্রোকারেজ হাউস লাভেলো আইসক্রিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

একরামুল হকের ৫০ লাখ শেয়ার সীমান্ত ব্যাংকের ঋণের চুক্তির বিপরীতে জামানত রাখা হয়। এই ঋণের চুক্তির বিপরীতে জামানতের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।

সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা

সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে, ১০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ।

এদিকে, সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১.৪৩ টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১.২৪ টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ার প্রতি নিট সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩.৩৭ টাকা।

শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি

তৌফিকা ফুডস অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম পিএলসি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০২১ সালে। ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৩৫ লাখ।

চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৩৮.৬৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২২.৮২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৮.৫২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

ঢাকা/এনটি/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইসক র ম প এলস র তদন ত র সময় ব ড় চ ক ত র ব পর ত তদন ত কর ব এসইস র তদন ত ক র তদন ত র জন য জ ম নত বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসইসিকে প্রযুক্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দেবে এএসআইসি

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসির) প্রযুক্তিগত উন্নয় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশন (এএসআইসি)।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বুধবার (১৮ জুন) বিএসইসির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী, অর্থ) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে এএসআইসির সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিএসইসির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও সহকারী মুখপাত্র মো. মোহাইমিনুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক-বিএসইসির বৈঠক

সূচক ডিএসইতে কমলেও সিএসইতে বেড়েছে

বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যে পুঁজিবাজারে রিয়েল-টাইম নজরদারি ব্যবস্থা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিং নির্ভর ডেটা অ্যানালিটিক্স টুলস বাস্তবায়নসহ উন্নত প্রযুক্তি সহযোগিতা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এছাড়া, বাজারে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সুপটেক (সুপারভাইজরি টেকনোলজি) ও রেগটেক (রেগুলেটরি টেকনোলজি) এর প্রয়োগ, বিশেষ করে এক্সবিআরএল ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ঝুঁকি বিশ্লেষণ এবং রিপোর্টিং ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় হয়।

বৈঠকে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এএসআইসির সহায়তায় বিএসইসির বর্তমান গভর্নেন্স কাঠামো পর্যালোচনা, বিশেষ করে অতীতে ঘটে যাওয়া ইনসাইডার ট্রেডিং, তথ্য ফাঁস ও কারসাজির মতো অনিয়ম চিহ্নিত করার বিষয়েও সহযোগিতা চান। একইসঙ্গে একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো তৈরিতে সহায়তা এবং দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণে এএসআইসির সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

এএসআইসিরর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে গভীর আগ্রহ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বৈঠকে উভয় পক্ষ একটি যৌথ সহযোগিতা কাঠামো গঠনের বিষয়ে সম্মত হয় এবং শিগগিরই উভয় পক্ষ তাদের নিজ নিজ ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করবে বলেও জানানো হয়।

অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশনের (এএসআইসি) পক্ষে ইন্টারন্যাশনাল সিনিয়র এক্সিকিউটিভ জেরার্ড ফিটজপ্যাট্রিক, মার্কেট ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ লিডার বেন কোন-উরবাখ, অ্যালিসা ফ্রেডেরিক, বেলিন্ডা স্যান্ডোনাটো সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সিডনিতে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. শাখাওয়াত হোসেন, বাংলাদেশ হাই কমিশনের (ক্যানবেরা) বাণিজ্যিক কাউন্সিলর রনি চাকমা, সাবেক ডিএসই এমডি তারিক ভূঁইয়া, চেয়ার, অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল ফয়েজ দেওয়ান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে সভায় উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এনটি/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জিপিএইচ ইস্পাতের প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যু বাতিল
  • কারণ ছাড়াই বাড়ছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ারদর
  • জিপিএইচের প্রেফারেন্স শেয়ার ছাড়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল বিএসইসি
  • ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে লাভেলো আইসক্রিম
  • ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ প্রতিনিধিদের নিয়ে বিএসইসির সেমিনার
  • বিএসইসিকে প্রযুক্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা দেবে এএসআইসি