রাজধানীর মগবাজারে একটি আবাসিক হোটেল থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ছেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে লাশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। 

পুলিশ জানায়, মৃত দম্পতি তাদের ছেলের চিকিৎসার জন্য লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের বাড়ি থেকে শনিবার ঢাকায় আসেন। তারা মগবাজার সুইট স্লিপ হোটেলে ওঠেন। শনিবার ডাক্তার দেখাতে পারেননি তারা। ওই রাতে মগবাজারের একটি রেস্তোরাঁ থেকে খাবার এসে হোটেলে খান। এর পর তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আজ দুপুরে অচেতন অবস্থায় তিনজনকে মগবাজারের আ-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।   

রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মগব জ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব জনপ্রত্যাশা নিয়ে কতটা সজাগ

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-জনতার উত্তাল জাগরণ। গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন ছিল দেশে জবাবদিহি, আইন এবং ন্যায়বিচার থাকবে অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে। কিন্তু সেই উত্তাল ঢেউ কি ক্রমেই শান্ত হয়ে যাচ্ছে? ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি ছিল সর্বজনীন আস্থা। অথচ তারাই আজ বিভক্ত, বিভ্রান্ত, দ্বিধান্বিত; নেতাদের কেউ কেউ অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত।

এই প্রেক্ষাপটে যখন সাধারণ নির্বাচনের আলোচনা ক্রমেই ঘনায়মান, তখন জনগণের প্রত্যাশা ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতি বেড়েই চলেছে। বিশেষত বিএনপির ওপর দায়িত্ব আরও বেশি। প্রমাণ করতে হবে যে তারা শুধু ক্ষমতার রাজনীতির অংশীদার নয়। বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে সক্ষম; যেখানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। বিকল্প বৈষম্যহীন অংশগ্রহণমূলক শাসন কাঠামোর গণতান্ত্রিক রূপরেখা নির্মাণে তৎপর হতে হবে দলটিকে। অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে দলটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন করবে– এটিই জনগণ দেখতে চায়।
বিএনপিকে নিজের অবস্থানও পরিষ্কার করতে হবে। তারা কীভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার, বিচার ব্যবস্থা এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করবে, তা জনগণকে জানাতে হবে। শুধু নির্বাচন চাওয়া নয়; নির্বাচনের পর একটি সুশাসনের কাঠামো জনগণের সামনে হাজির করাও দলটির রাজনৈতিক দায়িত্ব। 

বিএনপি যদি শাসন ক্ষমতায় আসে তাহলে তাদের ওপর জনপ্রত্যাশার চাপ আরও বাড়বে। নেতাদের জনগণের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দিতে হবে। জনগণের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রশ্নে তাদের অবস্থান। কারণ ভারতই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সমর্থন দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে গত সাড়ে ১৫ বছর। দুই দেশের সম্পর্ক হতে হবে সমমর্যাদার– এটি জনগণের চাওয়া। পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ করে পুরোনো রীতিনীতি বাদ দিয়ে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে সক্রিয় রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা ও কর্মসূচি ব্যক্ত করতে হবে। 
এনসিপি প্রশ্নে মনে রাখতে হবে, তারুণ্যের শক্তি এবং স্পর্ধা ছিল পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। জুলাই অভ্যুত্থান, লাখ লাখ তরুণের অংশগ্রহণ, সহস্রাধিক জীবনদানের ঘটনা একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পালাবদলের সূচনা করেছে। সেসব আত্মত্যাগের প্রেক্ষাপটে রাজনীতি যদি আবার কূটকৌশলের শিকার হয়, তবে জনআস্থা ফিরে আসবে না। দোষত্রুটি সত্ত্বেও তরুণদের বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ রাজনীতিকে দায়বদ্ধ রাখবে– এটাই সবাই প্রত্যাশা করে। 

বাস্তবে এনসিপি প্রসঙ্গে জনমনে দ্বৈত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তারা বিকল্প রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলছে। অন্যদিকে তাদের কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন এবং জামায়াতঘেঁষা অবস্থান নিয়ে অভিযোগ ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে এসব প্রশ্ন অস্বাভাবিক নয়, বরং রাজনৈতিক পরিশুদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। তবে জামায়াত-এনসিপি সম্পর্ক আগামী দিনে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাধা হয়েও দাঁড়াতে পারে, যদি এনসিপি তাদের অবস্থান জনগণের সামনে পরিষ্কার না করে।

সামাজিক মাধ্যমে এনসিপি নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দখলদারিত্ব, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ সরকারপক্ষ কিংবা বুদ্ধিজীবী মহল থেকে সেসব নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই। তারা কি আদৌ পরিবর্তনের পক্ষের শক্তি, নাকি তারা কেবল সুযোগের অপেক্ষায় থাকা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী? নাকি তারা হয়ে উঠছে নতুন বলির পাঁঠা? 

ছাত্ররা এখনও মাঠে সক্রিয়। কিন্তু তারা কি বুঝতে পারছে, তাদের কাঁধে চড়ে কেউ কেউ তাদের ব্যবহারের ফাঁদে ফেলছে? রাজনীতি আজ কেবল আদর্শের জায়গা নয়। এটি হয়ে উঠেছে ঘুঁটি চালার খেলা; সেই পুরোনো অলিগার্কদের খেলা। রাজনীতির খেলায় দাবার চালে যারা দুর্বল, তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়– মনে রাখতে হবে।
আসন্ন নির্বাচন এ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। একটি পক্ষ চায় নিষেধাজ্ঞা, আরেক পক্ষ চায় সহাবস্থান। তৃতীয় পক্ষ চায় ন্যায় ও স্বচ্ছতা। এই দ্বন্দ্বে কোথায় যাবে বাংলাদেশ? আমরা যদি সত্যিই একটি নতুন বাংলাদেশ চাই, তবে শুধু রক্ত নয়; দরকার সমঝোতা ও বিশ্বাসের রাজনীতি। দরকার বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব, সুস্পষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচি, সুশৃঙ্খল নির্বাচনী পরিকল্পনা। কেউ কাউকে নিষিদ্ধ করলেই দেশ বদলে যায় না। বদলাতে হয় মানসিকতা, কাঠামো ও নেতৃত্বের দর্শন দিয়ে।

সুতরাং আমাদের দরকার পরস্পরের আস্থার রাজনীতি, সমঝোতার রাজনীতি। কারও কূটচালে পা না দিয়ে, সবাইকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে জনগণের সামনে দাঁড়াতে হবে। জনগণ কাউকে ক্ষমা করে না। যদি তারা বিশ্বাস করে– তাদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে; তার হিসাব জনগণ চুকিয়ে দেয়। সব রাজনৈতিক শক্তির জন্যই তা প্রযোজ্য।
অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে আরও নিরপেক্ষ ও কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। জনগণ এখন আর মুখের কথা শুনে সন্তুষ্ট হয় না। তারা কাজের প্রমাণ দেখতে চায়। 
শেষ পর্যন্ত স্মরণে রাখতে হবে, এই রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দাবিতে যে তরুণ প্রজন্ম রাজপথে জীবন দিয়েছে, তাদের চেতনাকে সম্মান জানানো প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নৈতিক কর্তব্য। যদি সেই চেতনা বিস্মৃত হয়; যদি ক্ষমতার পালাবদলই একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়, তবে তরুণ সমাজ আবার রাজপথে নামবে আর স্লোগান তুলবে– ‘বুকের মধ্যে দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সামনে যে ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সুযোগ এসেছে, তা জন-আকাঙ্ক্ষা সাপেক্ষে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে শুধু একটি নির্বাচনই নয়, একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।

আহমেদ স্বপন মাহমুদ: কবি ও মানবাধিকারকর্মী

সম্পর্কিত নিবন্ধ