ফরিদপুরে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদের বাড়িতে চড়াও এবং পটিয়া ও পাটগ্রাম থানায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের হামলা এবং আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, কোনো যুক্তিতেই এসব হামলাকে অনুমোদন করা যাবে না। দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে ‘মব’ সন্ত্রাসের হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। 

শুক্রবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক।

সাইফুল হক বলেন, যে যুক্তিতে ফরিদপুরে এ.

কে. আজাদের বাড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীরা চড়াও হয়েছেন, তা উদ্ভট ও হাস্যকর। এ. কে. আজাদের বাড়িতে ‘আওয়ামী লীগের গোপন মিটিং’ হচ্ছে– দুয়ো তুলে চড়াও হওয়া সন্ত্রাসী তৎপরতা ছাড়া কিছু নয়।

তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে একই রকম অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বাড়ি হামলা করতো।

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশি ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এই ধারা চলতে দিলে বিদ্যমান সামাজিক নৈরাজ্য দ্রুত রাজনৈতিক নৈরাজ্যের চেহারা নেবে।

সাইফুল হক আরও বলেন, পটিয়া ও পাটগ্রাম থানায় বিএনপি পরিচয়ে যারা হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নিয়েছে, রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে এসব সন্ত্রাসী তৎপরতা বিবেচনা করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘মব’ সন্ত্রাসের কথা বলেও এসব তৎপরতা আড়াল করা যাবে না। 

বিবৃতিতে সাইফুল হক বলেন, উত্তরায় হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। গত এগারো মাসে ‘মব জাস্টিসে’র নামে অসংখ্য সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অনেক ঘটনার সঙ্গে সরকারের মধ্যকার নানা অংশের ইন্ধন যোগানোর গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। 

তিনি বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে দেশজুড়ে এই ধরনের সন্ত্রাসী নৈরাজ্যিক তৎপরতা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না।

অবিলম্বে এসব হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের দলীয় পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে তাদের গ্রেপ্তার, কঠোর ব্যবস্থা ও আইনানুগ বিচার দাবি জানান তিনি। একইসঙ্গে সাইফুল হক মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ জোরদার করারও আহ্বান জানিয়েছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ এ ক আজ দ র জন ত ক ন ত কর ম আজ দ র ব ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে বিএনপির মঞ্চে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী আকাঙ্ক্ষা

নিত্যনতুন ইস্যুর বেড়াজালে আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে হবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপির মধ্যে এখনো কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবু দলগুলোর মধ্যে ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনকেন্দ্রিক পথচলার একটা নিজস্ব পথনকশা যে তৈরি হচ্ছে, সেটি ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি আয়োজিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতার বক্তব্যে এর প্রকাশ ঘটে। অনেকের বক্তব্যে নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে থাকার অভিপ্রায় প্রকাশ পায়।

এখন পর্যন্ত সংস্কার ও নির্বাচন ঘিরে মুখ্য রাজনৈতিক দলগুলোতে যে তৎপরতা, তাতে একদিকে আছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো, অন্যদিকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কিছু দলের ঐক্য প্রচেষ্টার একটি তৎপরতা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে নির্বাচন মাঠে গড়ালে তখন বিএনপির বিপরীতে ইসলামপন্থী দলগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। সে কারণে বিএনপির পাশাপাশি ইসলামপন্থী দলগুলোর তৎপরতার দিকেই অনেকে দৃষ্টি রাখছেন।

গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বড় ধরনের সমাবেশ করে আলোচনা তৈরি করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সেখানে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ (এনসিপি) সমমনা প্রায় সব ইসলামি দল অংশ নেয়। ওই সমাবেশে বিএনপিকে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি আয়োজিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূতির অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সবচেয়ে কঠোর বক্তব্য দেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘যারা নতুন নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করে, নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা সবাই টপ টু বটম, দেশপ্রেমিক জনতা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাই।’

এরপরেই মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘যিনি যত বড়, তাঁর দায়িত্ব এবং উদারতা প্রদর্শনের জায়গাটাও তত প্রশস্ত। অতএব এই জায়গাটাকে আমরা সবাই পরিচর্যা করার চেষ্টা করব।’

লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি এই অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত ছিলেন। অনেকে মনে করছেন, মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর এ বক্তব্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্দেশে, যা মনোনয়ন প্রত্যাশার প্রকাশ। আফেন্দী নীলফামারী-১ আসন (ডোমার-ডিমলা) থেকে নির্বাচন করতে চান। গত ঈদুল আজহায় এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি পোস্টারও লাগিয়েছেন।

বিএনপির অনুষ্ঠানে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠে বক্তব্য দেন ইসলামি বক্তা জুনাইদ আল হাবিব। তিনি বলেন, ‘শেষ কথা বলতে চাই, চরম নির্যাতনের মুখেও মাঠে ছিলাম, এখন পর্যন্ত মাঠে আছি। আজকের যিনি উদ্বোধক, যিনি বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন; জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন; তিনি প্রবাসে থেকে যে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁর নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদের যেইভাবে পতন ঘটিয়েছেন; আজকে বলব—সেই পতনের যারা ফাটল ধরাবেন, তারা ফ্যাসিবাদের দালাল, তারা এ দেশের শত্রু, স্বাধীনতার শত্রু।’

জুনাইদ আল হাবিব জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন (সরাইল-আশুগঞ্জ) থেকে নির্বাচন করতে চান।

প্রসঙ্গত, ইসলামি দলগুলোর ভোট ‘একটি বাক্সে’ পাঠাতে গত ২৪ এপ্রিল একমত হয়েছিল সমমনা পাঁচ ইসলামি দলের নেতারা। সেখানে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচন ঘিরে যে কী হতে যাচ্ছে, তা চলতি জুলাই বা আগামী আগস্টের মধ্যে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে কারা বিএনপির সঙ্গে, আর কারা ইসলামপন্থীদের সঙ্গে ঐক্যে শামিল হবে, সেই মেরুকরণও দৃশ্যমান হবে। এখন পর্যন্ত ইসলামি দলগুলো কে কোন দিকে যাবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত নয়। এ ক্ষেত্রে মাওলানা মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তসহ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কিছু ইসলামি দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

নির্বাচন ও সংস্কার ঘিরে বিএনপির বিপরীতে এখন পর্যন্ত যে তৎপরতা, তার কেন্দ্রে রয়েছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন। বিএনপির জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূতির অনুষ্ঠানে জামায়াত অংশ নিলেও ইসলামী আন্দোলন যায়নি। ওই অনুষ্ঠানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বক্তব্য দেন। খুব সংক্ষেপ ও নিরুত্তাপ বক্তব্যে তিনি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জামায়াতের অংশগ্রহণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। একই সঙ্গে জাতীয় স্বার্থে যেকোনো ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে শামিল থাকার দলীয় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

আবদুল হালিম বলেন, ‘আমরা সব সময় জাতীয় ঐক্যে বিশ্বাসী। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা ২০ বছর ২০–দলীয় জোটে আন্দোলন করেছিলাম। ভবিষ্যতে জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যেকোনো ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে আমরা থাকব।’

বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূতির অনুষ্ঠানে ৬০টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এতে ৫০টির মতো দল ও সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ২২টি দলের নেতা বক্তব্য দেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও ইসলামী আন্দোলনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তারা আসেনি।

অবশ্য ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁরা বিএনপির আমন্ত্রণ পাননি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতা–কর্মীরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কোনো যুক্তিতে ‘মব সন্ত্রাস’ অনুমোদন করা যাবে না: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
  • গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে বিএনপির মঞ্চে বিভিন্ন দলের নির্বাচনী আকাঙ্ক্ষা